X
শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪
১৪ বৈশাখ ১৪৩১

যে ছয় কারণে ঘুরে দাঁড়িয়েছে শেয়ার বাজার

গোলাম মওলা
২২ আগস্ট ২০২০, ২৩:১০আপডেট : ২৩ আগস্ট ২০২০, ১৫:০৮

যে ছয় কারণে ঘুরে দাঁড়িয়েছে শেয়ার বাজার স্বাভাবিক সময়ে অস্থিরতা থাকলেও করোনাকালে সুবাতাস বইছে দেশের শেয়ার বাজারে। টানা গত ৯ সপ্তাহ ধরে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান মূল্য সূচক বেড়েছে। এর সঙ্গে বেড়েছে লেনদেনও। শুধুতাই নয়, সূচক ও লেনদেন বাড়ার প্রভাবে ডিএসই’র বাজার মূলধন অব্যাহতভাবে বেড়েই চলেছে। অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ এই সেক্টর নিয়ে সরকারি-বেসরকারি সব মহলেই এখন আগ্রহ বাড়ছে। প্রায় ১০ বছর পর অনেকেই সম্ভাবনা দেখছেন এই বাজার নিয়ে। এরই মধ্যে বাজারে নতুন নতুন বিনিয়োগও আসতে শুরু করেছে।

শনিবার (২২ আগস্ট) ডিএসই’র তথ্য বলছে, গত সপ্তাহে ঢাকার বাজারের প্রধান সূচক ডিএসইএক্স বেড়েছে ৯০ দশমিক ৭৫ পয়েন্ট। আর এই সপ্তাহে বাজার মূলধন বেড়েছে ৪ হাজার ৭০২ কোটি টাকা। ফলে ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতার মধ্য দিয়ে আরও একটি সপ্তাহ পার করেছে দেশের শেয়ারবাজার।

জানা গেছে, তালিভুক্ত কোম্পানিগুলোর মধ্যে সুশাসন নিশ্চিত করতে চায় বর্তমান কমিশন। এরই মধ্যে বেশ কিছু পদক্ষেপও নেওয়া হয়েছে। যার প্রভাব পড়ছে বাজারে। ডিএসই ব্রোকারেজ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ডিবিএ) সাবেক সভাপতি আহমেদ রশিদ লালী বাজার ঘুরে দাঁড়ানোর ছয়টি কারণ তুলে ধরেছেন। এগুলো হলো:

এক. নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি এবং সরকারি অন্যান্য সংস্থার মধ্যে যে সমন্বয়হীনতা ছিল, তা কমে এসেছে। এক্ষেত্রে এসইসির বর্তমান চেয়ারম্যান নিজেই চলে যাচ্ছেন বিভিন্ন সংস্থার কাছে। যার প্রভাব পড়েছে বাজারে।

দুই. ব্যাংকের ঋণ ও আমানতের সুদের হার কমার একটা প্রভাব পড়েছে বাজারে।

তিন. ব্যাংকগুলোতে পর্যাপ্ত তারল্য রয়েছে। শেয়ার বাজারেও তারল্যের কোনও সংকট নেই। যে কারণে বাজার ঘুরে দাঁড়িয়েছে।

চার. প্রত্যেক ব্যাংককে শেয়ার বাজারের জন্য ২০০ কোটি টাকা করে দেওয়া হয়েছিল। সেই টাকা এখন ছাড় হচ্ছে। অর্থাৎ এই টাকা পুঁজিবাজারে আস্তে আস্তে আসছে। যার প্রভাব পড়েছে বাজারে।

পাঁচ. বড় বিনিয়োগকারীদের অনেকে এতদিন বাইরে বসে পর্যবেক্ষণ করছিল। এখন তারাও বাজারে আসতে শুরু করেছে।

ছয়. ফ্লোর প্রাইস থাকার কারণে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা এটিকে নিরাপত্তা হিসেবে দেখছেন। যার প্রভাব পড়েছে বাজারে।

আহমেদ রশিদ লালী জানান, গত ১০ বছরে অন্তত ২৭ বার বাজার উঠে দাঁড়াবার চেষ্টা করেছে। কিন্তু সরকারি সংস্থাগুলোর ইন্টারভেনশন ও ইনডেক্স কনট্রোল করার কারণে সেটা পারেনি। কারণ, বাজার যখনই উঠে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেছে তখনই চাপ প্রয়োগ করে বাজার নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে। তিনি মনে করেন, এই বাজারকে এখন নিজস্ব শক্তিতে চলতে দিতে হবে। বাজারে কোনওভাবেই ইন্টারভেনশন ও ইনডেক্স কনট্রোল করা ঠিক হবে না। এছাড়া সিন্ডিকেটেড রেট (কয়েকটি ব্রোকারেজ হাউজ সিন্ডিকেট করে কোনও কোম্পানির দাম নিজেরা বাড়িয়ে ও কমিয়ে বেচা-কেনা করে) নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। আর বাজারে কোনও পক্ষই যাতে ব্যাড প্লে করতে না পারে সে দিকেও নজর রাখার পরামর্শ দেন তিনি।

তিনি বলেন, ‘বাজার বিনিয়োগকারী বান্ধব হবে তখনই, যখন সব প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে সুশাসন থাকবে।’

একমত পোষণ করে বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) গবেষক ও অগ্রণী ব্যাংকের চেয়ারম্যান ড. জায়েদ বখত বলেন, ‘একদিকে বাজারে তারল্যের সমস্যার সমাধান হয়েছে। অন্যদিকে ফ্লোর প্রাইস থাকার কারণে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা ইতিবাচকভাবে দেখছেন। এছাড়া নিয়ন্ত্রক সংস্থার কিছু ভূমিকার কারণেও বাজারে ইতিবাচক প্রভাব পড়ছে।’

এদিকে গত সপ্তাহ জুড়ে ডিএসই’র প্রধান মূল্য সূচক বেড়েছে প্রায় দুই শতাংশ। এর সঙ্গে লেনদেন বেড়েছে প্রায় পাঁচ শতাংশ। সূচক ও লেনদেনের বড় উত্থানের সপ্তাহে ডিএসইর বাজার মূলধন বেড়েছে ৪ হাজার ৭০২ কোটি টাকা।
সূচক ও বাজার মূলধন বাড়ার সপ্তাহে ডিএসইতে লেনদেনের গতিও যথেষ্ট বেড়েছে। গত সপ্তাহের প্রতি কার্যদিবসে ডিএসইতে গড়ে লেনদেন হয়েছে এক হাজার ১৭৯ কোটি ৬০ লাখ টাকা। আগের সপ্তাহে প্রতিদিন গড়ে লেনদেন হয় এক হাজার ১২৬ কোটি ২২ লাখ টাকা। অর্থাৎ প্রতি কার্যদিবসে গড় লেনদেন বেড়েছে ৫৩ কোটি ৩৮ লাখ টাকা বা ৪ দশমিক ৭৪ শতাংশ।

আর গত সপ্তাহজুড়ে ডিএসইতে মোট লেনদেন হয়েছে ৫ হাজার ৮৯৮ কোটি টাকা। আগের সপ্তাহে লেনদেন হয়েছে ৪ হাজার ৫০৪ কোটি ৮৯ লাখ টাকা। সে হিসাবে মোট লেনদেন বেড়েছে এক হাজার ৩৯৩ কোটি ১১ লাখ টাকা।

গত সপ্তাহজুড়ে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স বেড়েছে ৯০ দশমিক ৭৫ পয়েন্ট বা ১ দশমিক ৯৩ শতাংশ। টানা ৯ সপ্তাহের উত্থানে ডিএসইর প্রধান মূল্য সূচক বেড়েছে ৮৩১ পয়েন্ট। প্রধান মূল্য সূচকের পাশাপাশি গত সপ্তাহে উত্থান হয়েছে ডিএসইর শরিয়াহ সূচকেরও। শরিয়াহ ভিত্তিতে পরিচালিত কোম্পানি নিয়ে গঠিত এই সূচকটি গত সপ্তাহে বেড়েছে ১১ দশমিক ৮৮ পয়েন্ট বা ১ দশমিক শূন্য ৯ শতাংশ। এই সূচকটিও টানা ৯ সপ্তাহ বাড়ল।

বাছাই করা ভালো কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসইর আরেক সূচক ডিএসই-৩০। এই সূচকটি গত সপ্তাহে বেড়েছে ৫২ দশমিক ৭৬ পয়েন্ট বা ৩ দশমিক ৩১ শতাংশ।
এদিকে গত সপ্তাহজুড়ে ডিএসইতে লেনদেনে অংশ নেওয়া ১৮২টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বেড়েছে। বিপরিতে দাম কমেছে ১৬২টির। আর ১৫টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।

এদিকে গত সপ্তাহজুড়ে ডিএসই’র ব্লক মার্কেটের লেনদেনে ৮৯টি প্রতিষ্ঠান অংশ নেয়। এ প্রতিষ্ঠানগুলোর ২১৬ কোটি ৪২ লাখ ৩৭ হাজার টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে।

বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের দাম বাড়ায় সপ্তাহের শেষ কার্যদিবস শেষে ডিএসইর বাজার মূলধন দাঁড়িয়েছে ৩ লাখ ৫৯ হাজার ৭৮৯ কোটি টাকা। যা আগের সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে ছিল ৩ লাখ ৫৫ হাজার ৮৭ কোটি টাকা।

/এনএস/
সম্পর্কিত
৯ মাসে ওয়ালটনের মুনাফা বেড়েছে ৫১২ কোটি টাকা
‘গুজবে’ কান না দেওয়ার অনুরোধ পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থার
‘ফিক্সড ইনকাম সিকিউরিটিজ হতে পারে বিনিয়োগের ভালো অপশন’
সর্বশেষ খবর
দ্বিতীয় বিয়ে করায় ছেলের আঘাতে প্রাণ গেলো বাবার
দ্বিতীয় বিয়ে করায় ছেলের আঘাতে প্রাণ গেলো বাবার
নুসিরাত শরণার্থী শিবিরে ইসরায়েলি হামলা, শিশুসহ নিহত ৮
নুসিরাত শরণার্থী শিবিরে ইসরায়েলি হামলা, শিশুসহ নিহত ৮
দক্ষিণে ‘ডায়াবেটিক ধানের’ প্রথম চাষেই বাম্পার ফলন, বীজ পাবেন কই?
দক্ষিণে ‘ডায়াবেটিক ধানের’ প্রথম চাষেই বাম্পার ফলন, বীজ পাবেন কই?
লাল কৃষ্ণচূড়া, বেগুনি জারুলে ছুঁয়ে যায় তপ্ত হৃদয়
লাল কৃষ্ণচূড়া, বেগুনি জারুলে ছুঁয়ে যায় তপ্ত হৃদয়
সর্বাধিক পঠিত
পুলিশের সব স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ
পুলিশের সব স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
কুষ্টিয়ায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
কুষ্টিয়ায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
হোটেল রুম থেকে এই ৫ জিনিস নিয়ে আসতে পারেন ব্যাগে ভরে!
হোটেল রুম থেকে এই ৫ জিনিস নিয়ে আসতে পারেন ব্যাগে ভরে!