X
রবিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৫
৭ বৈশাখ ১৪৩২

বঙ্গবন্ধুর ছবি বাদ দিয়ে নতুন নোট আসছে ঈদের পর

গোলাম মওলা
১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১৯:২৫আপডেট : ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২০:০১

বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে এখনও আগের ছাপানো প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকার নতুন নোট রয়েছে। এসব নোট পর্যায়ক্রমে বাজারে ছাড়া হবে। ঈদুল ফিতর উপলক্ষে আগামী ১৯ মার্চ ৫, ২০ ও ৫০ টাকার নতুন নোট বাজারে ছাড়বে বাংলাদেশ ব্যাংক। এই নোটগুলোতে শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি থাকবে। এ ছাড়া এসব নোটে সই থাকছে পদত্যাগ করা গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদারের। তবে ঈদের পর এপ্রিল-মে মাসে ছাপানো নতুন নোটে শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি থাকবে না। এরই মধ্যে নতুন নোটের ডিজাইন চূড়ান্ত করা হয়েছে।

 অর্থাৎ ঈদুল আজহার সময় বাজারে যে নোট ছাড়া হবে, ওই নোটে শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি থাকবে না। সেখানে বর্তমান গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুরের সই থাকবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক আরিফ হোসেন খান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, বর্তমান গভর্নরের সইয়ে এপ্রিলের শেষভাগে বা মে মাসের প্রথমার্ধে আমরা নতুন নোট ছাড়বো বলে আশা করছি। তবে আসন্ন ঈদুল ফিতর উপলক্ষে আগামী ১৯ মার্চ থেকে বাজারে আসবে ৫, ২০ ও ৫০ টাকার নতুন নোট। এই নোটগুলো আগেই ছাপানো হওয়ায় এগুলোতে গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদারের সই ও শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি থাকবে।

মুখপাত্র জানান, বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে এ মুহূর্তে বিপুল পরিমাণ আগের ছাপানো নোট রয়েছে। এ নোটগুলো বাতিল করলে বিপুল অঙ্কের অর্থের অপচয় হবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক এই অপচয় করতে চাচ্ছে না। এজন্য আগে ছাপানো নোটগুলোই ঈদুল ফিতর উপলক্ষে বাজারে ছাড়বে। এরপর আগামী এপ্রিল-মে নাগাদ নতুন ছাপা নোট বাজারে আসবে।

জানা গেছে, ব্যাংকের কাছে শেখ মুজিবুর রহমানের ছবিযুক্ত প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকার নতুন নোট রয়েছে। এর মধ্যে ২ টাকা থেকে শুরু করে ১০০০ টাকা পর্যন্ত সব কাগুজে নোটে শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি আছে। 

এদিকে বঙ্গবন্ধুর ছবি ছাড়া যে নোট তৈরি হবে, সেই নোটের ডিজাইন ঠিক করে কালি ও কাগজ কেনার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি বাদ দিয়ে দ্রুততম সময়ে নতুন ডিজাইনের নোট বাজারে ছাড়ার প্রক্রিয়া শুরু করে বর্তমান সরকার।

সূত্র জানায়, একটি নোটের ডিজাইন ঠিক করার পর প্রিন্টিংয়ের জন্য প্লেট তৈরি হয়। নিলাম প্রক্রিয়ার মাধ্যমে কাগজ, কালি আমদানি করা হয়। এ ক্ষেত্রে কাগজে জলছাপের ছবি কী হবে, তা ঠিক করে দিতে হয়। সেই অনুযায়ী কাগজ প্রস্তুত করে পরীক্ষার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকে দেওয়া হয়। বর্তমানে ইউরোপের কয়েকটি দেশ এবং ইন্দোনেশিয়া থেকে বেশির ভাগ কাগজ আসে। কাগজ, কালি পাওয়ার পর পুরো প্লেট ধরে নোট ছাপা হয়। বিশেষ প্রক্রিয়ায় তা শুকানো হয়। এরপর কাটিং করে প্রতিটি নোট পরীক্ষা করে বাজারে ছাড়া হয়। এভাবে একটি নোট ছাপানো শুরুর দিন থেকে বাজারে আসতে অন্তত ২৭-২৮ দিন লাগে। এসব প্রক্রিয়া শেষ করে আগামী এপ্রিলের শেষ দিকে অথবা মে মাসের প্রথম দিকে নতুন ডিজাইনের নোট বাজারে ছাড়া হবে।

গত ৮ ডিসেম্বর বাংলাদেশ ব্যাংকের বোর্ড সভায় নতুন ডিজাইনের নতুন নোট প্রকাশের সিদ্ধান্ত অনুমোদন হয়েছিল। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ২০, ১০০, ৫০০ ও ১০০০ টাকার নোটের ডিজাইন পরিবর্তন করা হবে।

জানা গেছে, নতুন করে যুক্ত হবে ধর্মীয় স্থাপনা, বাঙালি ঐতিহ্যসহ ‘জুলাই বিপ্লবের গ্রাফিতি’। ইতোমধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক ও সরকারের পক্ষ থেকে এসব বিষয়ে চূড়ান্ত অনুমোদন হয়েছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা বলেন, প্রাথমিকভাবে চারটি নোটের ডিজাইন পরিবর্তন করা হচ্ছে। পরে ধাপে ধাপে দেশের সব ধরনের ব্যাংক নোটের ডিজাইন নতুন করা হবে। এর আগে গত ২৯ সেপ্টেম্বর অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ নতুন নোটের বিস্তারিত নকশার প্রস্তাব জমা দিতে বাংলাদেশ ব্যাংককে চিঠি দেয়। তবে নতুন নোট ছাপানোর বিষয়ে মূল সুপারিশ করে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুদ্রা ও নকশা উপদেষ্টা কমিটি। কমিটির সভাপতি বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর-১। কমিটিতে চিত্রশিল্পীরাও রয়েছেন।

বাংলাদেশের মুদ্রা ছাপানোর কাজটি করে দ্য সিকিউরিটি প্রিন্টিং করপোরেশন (বাংলাদেশ) লিমিটেড, যা টাকশাল নামে পরিচিত। ১৯৭৬ সালে প্রতিষ্ঠা পেলেও ১৯৮৮ সালের জুন মাসে এক টাকা ছাপানোর মধ্য দিয়ে এই প্রেসে নোট ছাপানো শুরু হয়। ওই বছরের নভেম্বর মাসে ১০ টাকার নোটও ছাপানো হয় সেখানে। প্রতিটি নোট ছাপানোর আগে তার নকশা অনুমোদন করে সরকার। সেজন্য দরপত্র ডেকে চিত্রশিল্পীদের দিয়ে নোটের নকশা করানো হয়।

নকশা চূড়ান্ত হলে আন্তর্জাতিক দরপত্রের মাধ্যমে কাগজ, কালি ও প্লেট তৈরি করা হয়। নকশা অনুযায়ী বিদেশ থেকে প্লেট তৈরি করে আনার পর ছাপার কাজটি করে টাকশাল।

বাংলাদেশ ব্যাংক সবসময় টাকা ছাপায় না। সাধারণত একটি নোট ৪-৫ বছর চলে। এরপর তা পুনর্মুদ্রণ করা হয়। ছোট মানের নোট বেশি হাতবদল হওয়ায় তা দ্রুত নষ্ট বা ব্যবহার অনুপযোগী হয়।

বছরের জন্য নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা মুদ্রণ বা উৎপাদন করে বাংলাদেশ ব্যাংকের ভল্টে রেখে দেওয়া হয়। প্রয়োজন অনুযায়ী সেখান থেকে যখন নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা বাজারে ছাড়া হয়, তখনই তা মুদ্রা বা টাকায় পরিণত হয়। তার আগে সেটি টাকা হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংকের মানি সার্কুলেশন প্রতিবেদনে যোগ করা হয় না।

বাংলাদেশ ব্যাংকের বার্ষিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, সবশেষ ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৩৮ হাজার ৪০০ কোটি টাকা খরচ হয়েছে নতুন নোট ছাপাতে। তার আগের অর্থবছরে খরচ ছিল ৩৭ হাজার ৪০০ কোটি টাকা। আর ২০২০-২১ অর্থবছরে ৩৪ হাজার কোটি টাকা খরচ হয়েছিল।

/এপিএইচ/এমওএফ/
সম্পর্কিত
ঈদ নির্বিঘ্ন হওয়ায় কর্মকর্তাদের ধন্যবাদ জানালেন প্রধান উপদেষ্টা
যেসব পদক্ষেপে ঘুরে দাঁড়ালো রিজার্ভ
মেয়াদোত্তীর্ণ স্বীকৃত বিল পরিশোধে তদারকি জোরদার করলো বাংলাদেশ ব্যাংক
সর্বশেষ খবর
শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে যেকোনও সময় তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল: চিফ প্রসিকিউটর
জুলাই-আগস্ট গণহত‍্যাশেখ হাসিনার বিরুদ্ধে যেকোনও সময় তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল: চিফ প্রসিকিউটর
৪৮ ঘণ্টার আল্টিমেটাম, দাবি না মানলে ‘লং মার্চ টু ঢাকা’
৪৮ ঘণ্টার আল্টিমেটাম, দাবি না মানলে ‘লং মার্চ টু ঢাকা’
নির্বাচন যখনই হোক একটা রোডম্যাপ দেন: ফারুক
নির্বাচন যখনই হোক একটা রোডম্যাপ দেন: ফারুক
বাজারে এলো ক্লেমনের নতুন ভ্যারিয়েন্ট ‘ক্লেমন জিরো’
বাজারে এলো ক্লেমনের নতুন ভ্যারিয়েন্ট ‘ক্লেমন জিরো’
সর্বাধিক পঠিত
গাজীপুরে সেই দুই শিশুকে হত্যা করেছেন মা: পুলিশ
গাজীপুরে সেই দুই শিশুকে হত্যা করেছেন মা: পুলিশ
আ.লীগের ঝটিকা মিছিল, বিপাকে পুলিশ
আ.লীগের ঝটিকা মিছিল, বিপাকে পুলিশ
প্রধানমন্ত্রী নয়, মন্ত্রিপরিষদ শাসিত সরকার চায় এনসিপি: নাহিদ ইসলাম
প্রধানমন্ত্রী নয়, মন্ত্রিপরিষদ শাসিত সরকার চায় এনসিপি: নাহিদ ইসলাম
যেসব পদক্ষেপে ঘুরে দাঁড়ালো রিজার্ভ
যেসব পদক্ষেপে ঘুরে দাঁড়ালো রিজার্ভ
বাংলাদেশ ভ্রমণে যুক্তরাষ্ট্রের সতর্কতা জারি
বাংলাদেশ ভ্রমণে যুক্তরাষ্ট্রের সতর্কতা জারি