আওয়ামী লীগ সরকারের ১৫ বছরের শাসনামলে আর্থিক খাতে যারা লুটপাট ও অর্থপাচার করেছেন, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার অঙ্গীকার করলেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) নতুন চেয়ারম্যান আব্দুর রহমান খান।
এনবিআরের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নেওয়ার পর রবিবার (১৮ আগস্ট) আগারগাঁওয়ে রাজস্ব ভবনে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন আব্দুর রহমান খান।
তিনি বলেন, ‘অর্থপাচার নিয়ে বিএফআইইউ কাজ করছে, এনবিআরের সিআইসিও কাজ করবে। যখনই কোনও ইঙ্গিত পাবো, তা অনুসন্ধান করা হবে।’
সাংবাদিকদেরও তথ্য দিয়ে সহায়তার অনুরোধ করে তিনি বলেন, ‘মতিউরের (ছাগলকাণ্ডে আলোচিত রাজস্ব কর্মকর্তা মতিউর রহমান) মতো দুর্নীতিবাজ যেন তৈরি না হয়, সে জন্য এনবিআর কর্মকর্তাদের দুর্নীতি শক্ত হাতে দমন করা হবে।’
এনবিআর ‘দুর্নীতির কারখানা’ এবং এখানে ‘মতিউর তৈরি হয়’, সাংবাদিকদের এমন মন্তব্যে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, ‘তাদের (কর্মকর্তাদের) এ ব্যাপারে মেসেজ দেওয়া হয়েছে। নিজেদের পরিবর্তন করতে না পারলে বের করে দেওয়া হবে। বড়-ছোট না, সবার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। দুর্বৃত্ত যেন তৈরি না হয়, সেটা দেখা হবে।’
যে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আওয়ামী লীগের ১৫ বছরের শাসনের অবসান ঘটেছে, সেই চেতনা কাজে লাগিয়ে এনবিআরের সংস্কার করার প্রতিশ্রুতি দেন চেয়ারম্যান।
তিনি বলেন, ‘ব্যবসা-বাণিজ্য গতিশীল করতে শিগগিরই আইনগুলোর আধুনিকায়ন হবে। রাজস্ব আদায় করতে গিয়ে ব্যবসার যেন ক্ষতি না হয়, সেদিকেও সতর্ক থাকতে হবে কর্মকর্তাদের। পরিবর্তনের সুযোগ কাজে লাগিয়ে এনবিআরকে ঢেলে সাজানো হবে বলেও জানান তিনি।
কীভাবে সেই সংস্কার হবে, সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, ‘কাস্টমস, আয়কর ও মূসক আইন নিয়ে তিনটি আলাদা টাস্কফোর্স করা হবে। রাজস্ব সংক্রান্ত তিনটি আইন আধুনিকায়নে তিনটি টাস্কফোর্স করা হবে; ব্যবসায়ী ও কর কর্মকর্তাদের মতামত নিয়ে তা বাস্তবায়ন করা হবে।’
তিনি বলেন, ‘কর আদায় করতে গিয়ে ব্যবসা যেন বন্ধ না। এফডিআই বাড়াতে হবে। কিন্তু ট্যাক্স রেজিম সাপোর্ট না করলে এটা বাড়বে না। সুশাসনের পরই জরুরি ট্যাক্স রেজিম।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের সার্ভিস খুব খারাপ। এনবিআরের লোকই এনবিআরে সেবা পায় না। জনগণ আমাদের প্রভু। তাদের যথাযথ সম্মান দিতে হবে।’
বিগত সরকারের সময় এনবিআর রাজস্ব ‘বাড়িয়ে দেখাতো’ মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘আগামীকাল থেকে এটা আর করা যাবে না। এখন থেকে এনবিআর, সিজিএ ও আইবাসের তথ্য হবে এক ও অভিন্ন; যা রিয়েলাইজ হবে, আইবাসে থাকবে, তা-ই দেখাতে হবে।
কালোটাকার বিষয়ে অর্থ উপদেষ্টার সঙ্গে আলাপ করার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এনবিআর চেয়ারম্যান হিসেবে নয়, ব্যক্তিগতভাবে আমি মনে করি, কালোটাকা অগ্রহণযোগ্য। এর ফলে সৎ করদাতা নিরুৎসাহিত হয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘উন্নয়নের প্রয়োজনীয় অর্থ আহরণ হচ্ছে না। পাকিস্তানও আমাদের চেয়ে এগিয়ে। রাজস্ব বাড়ানোই তাই এখন মূল ফোকাস। বিগত সরকারের সময়ে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য দেওয়ার যে প্রক্রিয়া ছিল, তা ‘ত্রুটিপূর্ণ’। ঋণ ও ঘাটতি বাড়িয়ে বাজেট করা ‘অনৈতিক’৷ তাতে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম বৈষম্যের শিকার হয়।’
পরোক্ষ করের বিষয়ে তিনি উল্লেখ করে বলেন, ‘গরিবদের থেকেই বেশি কর আদায় হচ্ছে। কারণ পরোক্ষ করের পরিমাণ বেশি। ৬৭ শতাংশ পরোক্ষ। পরোক্ষ কর গরিব ও সাধারণ মানুষের ওপর বৈষম্য তৈরি করে। গরিবের ওপর ট্যাক্স আরোপ করা যাবে না। এটা সভ্য দেশের লক্ষণ নয়। এটাকে ঠিক করতে হবে। এ জন্য দরকার কঠোর শ্রম।’
চেয়ারম্যান বলেন, ‘করের আওতা বাড়ানোর অনেক সুযোগ রয়েছে। ট্যাক্স পেয়ার এজুকেশনে জোর দেবো। এটা আমার স্বপ্ন। কর দেওয়া গৌরবের। এটা মানুষকে বোঝাতে হবে। পাঠ্যশ্রেণিতে অন্তর্ভুক্ত করতে কাজ করবো।