তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ও বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান পিপিআরসির নির্বাহী চেয়ারম্যান ড. হোসেন জিল্লুর রহমান বলেছেন, দুর্নীতি এখন প্রাতিষ্ঠানিক রূপ নিয়েছে। সার্বিক নৈতিকতার ব্যাপক অধপতন হয়েছে। নৈতিকতা ফিরিয়ে আনতে না পারলে সংকট আরও গভীর হবে। তিনি বলেন, ‘পরিস্থিতির উন্নয়নে প্রশাসনিক সংস্কার, ব্যাংকিং কমিশন গঠন ও অর্থনীতিবদের নিয়ে প্রবৃদ্ধি অর্জনের কৌশল নির্ধারণে পুনঃমূল্যায়ন করা যেতে পারে।’
সোমবার (১০ জুন) সম্পাদক পরিষদ ও সংবাদপত্র মালিকদের সংগঠন নিউজ পেপার ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (নোয়াব) আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে ‘অর্থনীতির চালচিত্র ও প্রস্তাবিত বাজেট ২০২৪-২৫’ শীর্ষক এ আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়।
হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, ‘অর্থমন্ত্রী বাজেটে তিন পক্ষের আশার প্রতিফলন দেখিয়েছেন। তবে জনকল্যাণে তেমন কিছু নেই। প্রথমত আইএমএফ, দ্বিতীয় অলিগার্ক তথা সরকারের আশ্রয়-প্রশ্রয়ে যারা ফুলেফেঁপে উঠেছে এবং আমলাতন্ত্র। তবে শোনা হয়নি পরিশ্রমী উদ্যোক্তা এবং অর্থনৈতিক কর্মী, তথা সাধারণ মানুষের কথা।’
তিনি বলেন, ‘রাজনৈতিক নেতৃত্ব গতবছর পর্যন্ত অর্থনৈতিক সংকট স্বীকারই করেননি। ধাক্কা খাওয়ার পর এখন কিছুটা সমস্যার কথা বলছেন। বেশিরভাগ দেশ যখন সুদহার বাড়িয়ে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করেছে, আমরা তখন নয়-ছয় সীমা আরোপ করেছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘দরিদ্রদের পাশাপাশি এখন নিম্নবিত্ত, মধ্যবিত্তরাও মূল্যস্ফীতি নিয়ে সংকটে আছেন। বাজেটে বলা হয়েছে, মূল্যস্ফীতি সাড়ে ৬ শতাংশে নামিয়ে আনা হবে। তবে এজন্য যে কর্মকৌশল লাগে সেটা কোথায়। কর্মসংস্থানের সংকটে থাকা যুবকদের জন্য বাজেটে কী উদ্যোগ রয়েছে। উচ্চ মূল্যস্ফীতির এ সময়ে সাধারণ মানুষের জন্য করমুক্ত আয় সীমা বাড়ানো হয়নি। আবার মোবাইলে কথা বলার ওপর, মোটরসাইকেলে নতুন করে কর বাড়ানো হয়েছে।’
পিপিআরসির নির্বাহী চেয়ারম্যান বলেন, ‘নৈতিকতার সংকট তৈরি হয়েছে। সৎ করদাতাদের সর্বোচ্চ স্তরের আয় কর দিতে হবে ৩০ শতাংশ। অথচ কালো টাকার মালিকরা ১৫ শতাংশ কর দিয়ে সাদা করতে পারবেন। এটা সৎ করদাতাদের নিরুৎসাহিত করা। ভালো উদ্যোক্তারা সব সময় চান নিয়মের ব্যত্যয় যেন না ঘটে এবং ব্যবসায়িক পরিবেশ। এক্ষেত্রে কর প্রশাসনে সংস্কার আনতে হবে। এবারে বেসরকারি খাতের বিনিয়োগ বাড়ানোর কথা বলা হয়েছে। তবে ব্যক্তি খাতের উদ্যোক্তারা রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের ওপর ভরসা রাখতে পারছেন না। বাজেটে কিছু কাগুজে ভালো কথা আছে। আবার উদ্যোগের কমতি নেই। তবে সেটা গাছাড়া এবং অসম্পূর্ণ। কিছু শুল্ক কমানো হয়েছে।’
আলোচনায় অংশ নেন—তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ও বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ, পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর, সাবেক অর্থসচিব ও সাবেক কম্পট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেল (সিএজি) মোহাম্মদ মুসলিম চৌধুরী, সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন এবং যুগান্তরের প্রকাশ সালমা ইসলাম এমপি। স্বাগত বক্তব্য দেন নোয়াবের সভাপতি এ. কে. আজাদ এমপি। সমাপনী বক্তব্য দেন সম্পাদক পরিষদের সভাপতি মাহফুজ আনাম। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন সম্পাদক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ও দৈনিক বণিক বার্তার সম্পাদক দেওয়ান হানিফ মাহমুদ।