X
রবিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৫
৭ বৈশাখ ১৪৩২

সিআইপি’র স্মার্ট নীতিমালা হবে কবে?

গোলাম মওলা
২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ২১:০০আপডেট : ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ২১:০০

স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে স্মার্ট অর্থনীতির ওপর গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। তবে যেসব ব্যবসায়ী এই অর্থনীতিকে সচল রাখার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছেন, তাদের মূল্যায়নে স্মার্ট পদ্ধতি অনুসরণ করা হচ্ছে না। গত বছরও (২০২৩) রাষ্ট্রীয় সম্মান তথা কমার্শিয়ালি ইম্পরট্যান্ট পারসন বা সিআইপি নির্বাচিত করা হয়েছে ১১ বছর আগের নীতিমালা তথা ২০১৩ সালের তৈরি গাইডলাইন মেনে। ১১ বছর আগের নীতিমালা অনুযায়ী, গত বছরের ২৫ জুন সিআইপি মর্যাদা দেওয়া হয়েছে ২০২১ সালে অর্থনীতিতে অবদান রাখা ১৮০ জন ব্যবসায়ীকে।

এর মধ্যে রফতানি ক্যাটাগরিতে ১৪০ জনকে এবং ৪০ জনকে বাণিজ্য ক্যাটাগরির অধীনে ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এফবিসিসিআই) পরিচালকের পদাধিকারী বলে সিআইপির মর্যাদা দেওয়া হয়।

যদিও দেশে লাখ লাখ উদ্যোক্তা আছেন—যাদের অনেকেই শিল্প স্থাপন, পণ্য উৎপাদন, কর্মসংস্থান তৈরি ও  জাতীয় আয় বাড়াতে সর্বাধিক অবদান রেখে চলেছেন।

অবশ্য গত বছরের ৩০ এপ্রিল বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সিআইপি মনোনয়নের জন্য ‘নীতিমালা-২০২৩’ জারি করলেও এতে ২০১৩ সালের গাইডলাইনের সঙ্গে খুব বেশি পার্থক্য নেই। আগের নীতিমালার ধারাবাহিকতায় নতুন নীতিমালাতেও উচ্চ মর্যাদার বাণিজ্যিক ব্যক্তিত্বদের সিআইপির মেয়াদ করা হয়েছে এক বছর। 

প্রতিবছর সরকারকে সর্বোচ্চ ট্যাক্স দেওয়া ব্যক্তিদের মূল্যায়নের কোনও পদ্ধতি নেই নতুন এই নীতিমালায়।

ব্যবসায়ী মহল থেকে বলা হচ্ছে, সিআইপি মনোনয়নে স্মার্ট নীতিমালা করা উচিত। যেখানে মনোনীত ব্যক্তিরা অন্তত তিন বছরের জন্য সিআইপির মর্যাদায় থাকতে পারেন। একইভাবে টানা তিন বছর সরকারকে সর্বোচ্চ ট্যাক্স দেওয়া ব্যক্তিদের সিআইপির মর্যাদা দেওয়া উচিত।

এ প্রসঙ্গে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই’র সাবেক সহ-সভাপতি ও বিজিএমইএ’র সাবেক সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে হলে স্মার্ট অর্থনীতি লাগবে। আর স্মার্ট অর্থনীতির জন্য স্মার্ট নীতিমালা থাকা জরুরি। প্রতিবছর যেভাবে সিআইপি নির্বাচন করা হয়, তার সংস্কার করা জরুরি।’

তিনি উল্লেখ করেন, সিআইপি তিন বছরের জন্য যদি সম্ভব না হয়, তাহলে কমপক্ষে দুই বছরের জন্য করা দরকার। এ সংক্রান্ত নীতিমালা আরও বাস্তবধর্মী ও যুগোপযোগী করা উচিত। সর্বোচ্চ করদাতাদের সিআইপি মর্যাদা দেওয়া উচিত। এছাড়া নীতিমালায় এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, বিকেএমইএ বা এই ধরনের সংগঠনের শীর্ষ নেতাদেরও এ মর্যাদা দেওয়া উচিত।

এ প্রসঙ্গে বিকেএমইএ’র নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, ‘২০২৪ সালে এসে ২০২৪ সালের মতো করে স্মার্ট সিআইপি  নীতিমালা প্রণয়ন জরুরি। আগের নীতিমালা আপডেট করা জরুরি।’

শুধু সিদ্দিকুর রহমান বা মোহাম্মদ হাতেম নন, বেশিরভাগ ব্যবসায়ী বলেছেন—সরকারকে যারা সর্বোচ্চ ট্যাক্স দেন, তাদের সবার সিআইপি মর্যাদা থাকা উচিত। আর এর মেয়াদ তিন বছর করা উচিত।

এ প্রসঙ্গে বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু শনিবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) মন্ত্রী পর্যায়ের সম্মেলন শেষে সিআইপি নিয়ে কাজ শুরু করবো।’

সংযুক্ত আরব আমিরাতের আবুধাবিতে সোমবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) মন্ত্রী পর্যায়ের সম্মেলন শুরু হবে। এই সম্মেলন ২৯ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চলবে। এতে আট সদস্যের বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেবেন বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু।

বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী জানান, ডব্লিউটিও মিটিংয়ের পর তিনি সিআইপি মনোনয়ন কমিটির সঙ্গে বসবেন। নীতিমালা সংস্কার করার প্রয়োজনীয়তা দেখা দিলে করবেন। স্মার্ট করার ক্ষেত্রে তিনি উদ্যোগী হবেন।

প্রসঙ্গত, জাতীয় অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ ও সুসংহত করার স্বার্থে অভ্যন্তরীণ ব্যবসা-বাণিজ্য সমৃদ্ধকরণ, রফতানি বাণিজ্য উন্নয়ন ও সম্প্রসারণ এবং রফতানির প্রকৃতি ও পরিমাণের বিস্তার ঘটানোর লক্ষ্যে বাংলাদেশের পণ্য ও সেবা রফতানিতে নিয়োজিত ব্যক্তি এবং রফতানিমুখী প্রতিষ্ঠানের উদ্যোক্তাদের প্রতি বছর রাষ্ট্রীয় সম্মান প্রদান করে বাণিজ্যিক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি হিসেবে ঘোষণা করে সরকার।

এদিকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ছাড়াও শিল্প মন্ত্রণালয় এবং প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় থেকেও ব্যবসায়ীদের সিআইপির মর্যাদা দিয়ে থাকে। ২০২৩ সালে বৈধ পথে দেশে সর্বাধিক রেমিট্যান্স পাঠানো ৫৯ প্রবাসীকে সিআইপি  (বাণিজ্যিক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি)  মর্যাদা দিয়েছে সরকার। এ ছাড়া দুটি ক্যাটাগরিতে আরও ১১ প্রবাসীকে সম্মাননা দেওয়া হয়। গত ৩০ ডিসেম্বর ‘বিশ্ব প্রবাসী দিবস’ উপলক্ষে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে তাদের এ সম্মাননা দেয় প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়।

এছাড়া দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখার স্বীকৃতি হিসেবে গত বছর ৪৪ ব্যবসায়ীকে ২০২১ সালের জন্য বাণিজ্যিক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি (শিল্প) বা সিআইপি নির্বাচন করে শিল্প মন্ত্রণালয়।

সাধারণত সরকার নির্বাচিত সিআইপিরা এক বছরের জন্য বাংলাদেশ সচিবালয়ে প্রবেশের পাস ও গাড়ির স্টিকার পান। এ ছাড়া জাতীয় অনুষ্ঠান ও নাগরিক সংবর্ধনায় দাওয়াত, ব্যবসা-সংক্রান্ত কাজে ভ্রমণের সময় বিমান, রেলপথ, সড়ক ও জলপথে সরকারি যানবাহনে আসন সংরক্ষণে অগ্রাধিকার ও বিমানবন্দরে ভিআইপি লাউঞ্জ ব্যবহারের সুবিধা পান।

এ ছাড়া সিআইপিরা তাদের স্ত্রী, সন্তান ও নিজের চিকিৎসার জন্য সরকারি হাসপাতালে বিশেষ সুবিধা পান। বিদেশ ভ্রমণের ক্ষেত্রেও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তাদের জন্য ‘লেটার অব ইন্ট্রোডাকশন’ দিয়ে থাকে।

/এপিএইচ/এমওএফ/
সম্পর্কিত
আসন্ন বাজেটে বৈষম্য কমবে, অগ্রাধিকার পাবে যেসব খাত
ঋণের কিস্তি ছাড় স্থগিত রাখলো আইএমএফ
বাংলাদেশকে সহায়তায় আইএমএফ প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, চূড়ান্ত চুক্তি শিগগিরই
সর্বশেষ খবর
মুক্তিযোদ্ধা সংসদের জায়গায় আ.লীগ অফিস করেন সাবেক এমপি বাহার
মুক্তিযোদ্ধা সংসদের জায়গায় আ.লীগ অফিস করেন সাবেক এমপি বাহার
ভবেশ চন্দ্রের মৃত্যু নিয়ে ভারতীয় মিডিয়ার সংবাদ বিব্রতকর: পুলিশ সুপার
ভবেশ চন্দ্রের মৃত্যু নিয়ে ভারতীয় মিডিয়ার সংবাদ বিব্রতকর: পুলিশ সুপার
চট্টগ্রামে খাল-নালায় ১৫ জনের মৃত্যু, তবু উদাসীন সিটি করপোরেশন ও সিডিএ
চট্টগ্রামে খাল-নালায় ১৫ জনের মৃত্যু, তবু উদাসীন সিটি করপোরেশন ও সিডিএ
টিভিতে আজকের খেলা (২০ এপ্রিল, ২০২৫)
টিভিতে আজকের খেলা (২০ এপ্রিল, ২০২৫)
সর্বাধিক পঠিত
কপি-পেস্টে চলছে ১৩ পত্রিকা, সম্পাদকদের কারণ দর্শানোর নোটিশ
কপি-পেস্টে চলছে ১৩ পত্রিকা, সম্পাদকদের কারণ দর্শানোর নোটিশ
মগবাজার রেললাইনে বাস আটকে যাওয়া সম্পর্কে যা জানা গেলো
মগবাজার রেললাইনে বাস আটকে যাওয়া সম্পর্কে যা জানা গেলো
গাজীপুরে সেই দুই শিশুকে হত্যা করেছেন মা: পুলিশ
গাজীপুরে সেই দুই শিশুকে হত্যা করেছেন মা: পুলিশ
আ.লীগের ঝটিকা মিছিল, বিপাকে পুলিশ
আ.লীগের ঝটিকা মিছিল, বিপাকে পুলিশ
হিন্দু নেতা ভবেশ চন্দ্র রায় হত্যা: নিন্দা জানালো ভারত
হিন্দু নেতা ভবেশ চন্দ্র রায় হত্যা: নিন্দা জানালো ভারত