আগামী অর্থবছরের বাজেটে ব্যক্তি শ্রেণির করদাতাদের করমুক্ত আয়ের সীমা ৪ লাখ টাকা করার দাবি জানিয়েছে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশন (এফবিসিসিআই)।
বৃহস্পতিবার (১৩ এপ্রিল) রাজধানীর প্যানপ্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলে ‘জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের পরামর্শক কমিটির ৪৩তম সভায়’ এ দাবি করা হয়। এনবিআর ও এফবিসিআই যৌথভাবে এই সভার আয়োজন করে। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।
এফবিসিসিআই সভাপতি জসিম উদ্দিনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম।
এফবিসিসিআইয়ের পক্ষে বিভিন্ন প্রস্তাব তুলে ধরেন সংগঠনটির সভাপতি। শিল্প পরিচালনার ব্যয় কমানোর জন্য আমদানি পর্যায়ে অগ্রিম আয়করের (এআইটি) হার ধাপে ধাপে কমিয়ে ৩ শতাংশ করার প্রস্তাব করেন। বর্তমানে অগ্রিম আয়করের হার ৫ শতাংশ।
উল্লেখ্য, অগ্রিম আয়করের হার ৩০ জুন ২০১০ পর্যন্ত ৩ শতাংশ ছিল।
সভাপতি বলেন, ‘জীবনযাত্রার ব্যয়, মূল্যস্ফীতি এবং সামগ্রিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনায় রেখে ব্যক্তি করদাতাদের করমুক্ত আয়ের সীমা ৩ লাখ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৪ লাখ টাকা এবং নারী ও সিনিয়র নাগরিকদের জন্য সাড়ে ৩ লাখ টাকা থেকে বাড়িয়ে সাড়ে ৪ লাখ টাকা করার প্রস্তাব করছি।’
দেশি-বিদেশি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে প্রদত্ত শুল্ক ও কর সুবিধার সমতায়ন এবং বর্তমানে বিশ্বব্যাপী অনুসৃত ‘আয় যেখানে কর সেখানে’ নীতিমালা গ্রহণ ও সরকারের রাজস্ব বৃদ্ধি এবং ট্যাক্স-জিডিপি অনুপাত বৃদ্ধি করার জন্য সব উপজেলা পর্যায়ে আয়কর দফতর স্থাপন করার প্রস্তাব তুলে ধরা হয়।
এদিকে আসন্ন বাজেট সামনে রেখে আরও বেশ কিছু সংস্কার প্রস্তাব তুলে ধরে সংগঠনটি। এফবিসিসিআইয়ের প্রস্তাবনাগুলো হলো, শুল্কায়ন, পণ্য খালাস এবং সব ধরনের শুল্ক ও কর পরিশোধ ত্বরান্বিত করার জন্য অনলাইন প্রক্রিয়াসহ ন্যাশনাল সিঙ্গেল উইন্ডো (এনএসডব্লিউ) সংক্রান্ত কার্যক্রম দ্রুত বাস্তবায়ন করা। উৎপাদন, আমদানি ও রফতানি পর্যায়ে আরোপিত সব শুল্ক ও কর এবং খালাস প্রক্রিয়া বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা, বিশ্ব কাস্টমস সংস্থা এবং আন্তর্জাতিক উত্তম ব্যবস্থাবলীর সাথে সংগতিপূর্ণ করা।
ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা কার্যকর করে ফাঁকি দেওয়া কর আদায়ের জন্য প্রণোদনা হিসাবে নিয়মিত স্কেলের বেতন-ভাতাদির অতিরিক্ত হিসেবে কর কর্মকর্তাকে পুরস্কার দেওয়ার বিধান বাতিল করার প্রস্তাব দেওয়া হয়। এতে কর আদায়ে হয়রানি বন্ধ হবে বলে করছে এফবিসিসিআই।
প্রস্তাবনায় আরও বলা হয়, রাজস্ব আহরণ এবং রাজস্ব পলিসি কার্যক্রম পৃথক করে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের ট্রেড ফ্যাসিলিটেশন বিভাগ গঠন করার প্রস্তাব দেওয়া হয়।
প্রস্তাবনায় আরও বলা হয়, উৎপাদনশীল ও রফতানিমুখী গ্রামীণ ও ক্ষুদ্র শিল্পসহ নারী উদ্যোক্তাদের সমন্বয়ে খাতভিত্তিক রফতানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলোকে যৌথ ব্যবস্থাপনায় বন্ডেড ওয়্যার হাউস এবং বিতরণব্যবস্থা স্থাপনের মাধ্যমে ই-কমার্সের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করতে সক্ষম করা। উৎপাদন ও রফতানি বৃদ্ধির সুবিধার্থে সংশ্লিষ্ট সব রফতানি এবং শিল্প খাতে করমুক্ত রেয়াতি হারে বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাস ইত্যাদি সরবরাহের সংস্থান করা।