X
সোমবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৫
১৪ বৈশাখ ১৪৩২

বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ড ‘দায়িত্ব জ্ঞানহীন’

চৌধুরী আকবর হোসেন
১১ এপ্রিল ২০১৬, ০৪:১৮আপডেট : ১১ এপ্রিল ২০১৬, ০৪:২৩

ঢাকা ট্রাভেল মার্ট-২০১৬ এর একটি স্টল পহেলা বৈশাখকে সামনে রেখে বিশেষ ছাড়ে ভ্রমণ প্যাকেজ নিয়ে জমে উঠেছে ঢাকা ট্রাভেল মার্ট-২০১৬। পর্যটন নিয়ে এই মেলায় বাংলাদেশি প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি রয়েছে বিদেশি প্রতিষ্ঠানও। বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ড ছাড়াও রয়েছে নেপাল ও মালায়শিয়ার ট্যুরিজম বোর্ড। নেপাল ও মালায়শিয়ান ট্যুরিজম বোর্ডের কর্মকর্তারা নিজ নিজ দেশের পর্যটন খাত নিয়ে কথা বলছেন। তুলে ধরছেন নিজের দেশের নানা তথ্যও। অন্যদিকে মেলায় স্টল থাকলেও বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের কর্মকর্তাদের কেউ নেই। মেলার জন্য চুক্তিভিত্তিক নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মীরা থাকলেও দর্শকদের জানাতে পারছেন না কোনও তথ্য। বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের এমন আচরণকে ‘দায়িত্ব-জ্ঞানহীন’ বলে মন্তব্য করেছেন পর্যটন খাত সংশ্লিষ্টরা।
শুক্রবার (৮ এপ্রিল) থেকে রাজধানীর হোটেল সোনারগাঁওয়ে ঢাকা ট্রাভেল মার্ট শুরু হয়েছে। মেলা শেষ হবে সোমবার। রবিবার দর্শকদের পদচারণায় মুখর ছিল মেলাপ্রাঙ্গণ। ভ্রমণপ্রিয় দর্শকরা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের স্টল ঘুরেঘুরে দেখছেন। মেলায় বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের স্টলে দর্শনার্থীরা কোনও প্রশ্ন করলেই ‘আমাদের ওয়েব সাইটে সব আছে’ বলেই দায় সারছেন স্টলে থাকা কর্মীরা। তবে, দর্শকরা সেই ওয়েব সাইটের ঠিকানাসহ কোনও কার্ড চাইলে নেই বলেই সহজ উত্তর দেন তারা।  হতাশ হয়ে দর্শনার্থীরা ফিরছেন ট্যুরিজম বোর্ডের স্টলে থেকে। অন্যদিকে নেপাল ও মালায়শিয়ান ট্যুরিজম বোর্ডের স্টলে দেখা গেছে প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তারা দর্শকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছেন। তথ্য সংবলিত লিফলেট দিচ্ছেন আগ্রহীদের। অনেককেই দিচ্ছেন নানা রকমের উপহার।

দেখা গেছে, বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের স্টলে তিনজন কর্মী উপস্থিত আছেন। তিনজনই মেলার জন্য চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পেয়েছেন। ট্যুরিজম বোর্ডের স্টলে পোস্টার, সিডি প্রদর্শন করা হচ্ছে। পর্যটন বিষয়কপত্রিকা ‘ভ্রমন’ বিক্রি করছেন তারা।  মেলায় বোর্ডের এক্সিকিউটিব অফিসার শাহজাহান উপস্থিত থাকার কথা থাকলেও তিনি মেলায় আসেননি। 

বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের স্টলে কর্মরত মোহাম্মদ জর্জিস বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, আমি পর্যটনবিষয়ক পত্রিকা ‘ভ্রমণ’-এর পক্ষ থেকে এসেছি। বোর্ডের  একজন কর্মকর্তা একদিন সকালে এসেছিলেন। মেলায় দর্শনার্থীদের দেওয়ার জন্য পোস্টার, সিডি দেওয়া হয়েছিল। শেষ হয়ে যাওয়ার পর আর দেয়নি ট্যুরিজম বোর্ড। আমাদের ওয়েব সাইটের ঠিকানা দেওয়ার জন্য বলা হয়েছে। এর বেশি আসলে আমরা জানি না। 

এদিকে, মেলায় অংশ নেওয়া নেপাল  ট্যুরিজম বোর্ডের  ব্র্যান্ড প্রমোশন ও করপোরেট মার্কেটিং বিভাগের সিনিয়র অফিসার  শ্রদ্ধা শ্রেষ্ঠ বলেন, এখানে আমরা এসেছি নেপাল বিষয়ে মানুষকে জানাতে। অনেকেই আগ্রহী হয়ে আমাদের কাছে তথ্য চাচ্ছেন। ভালো সাড়া পাচ্ছি। 

মালায়েশিয়ান ট্যুরিজম মালাকা (ট্যুরিজম বোর্ড) স্টলে দর্শানার্থীদের নানা প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছেন প্রতিষ্ঠানটির ইভেন্ট ম্যানেজার মোহাম্মদ ইসা। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, বাংলাদেশ থেকে উচ্চবিত্তরা মালয়েশিয়া বেড়াতে যান। আমরা চাই মধ্যভিত্তরাও বেড়াতে যাবেন।  মেলায় নানা রকম প্রশ্ন করেন অনেকে, এর মধ্য দিয়ে তাদের আগ্রহের বিষয়গুলো জানার সুযোগ হচ্ছে।

দর্শনার্থী আসাদুজ্জমান বলেন, অবাক হয়েছি দেখে আমাদের দেশের ট্যুরিজম বোর্ডের স্টল থেকে তথ্য দেওয়ার কেউ নেই। অথচ অন্য দেশ থেকে এসে মেলায় দর্শনার্থীদের তথ্য দিচ্ছেন বিদেশিরা। আগ্রহীদের ব্যবসায়ী, পর্যটকদের সহায়তা করছেন। এ বছর সরকার পর্যটনবর্ষ ঘোষণা করেছে কিন্তু এভাবে এই কর্মসূচি সফল হবে না।

এদিকে, বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের এমন আচরণকে ‘দায়িত্ব-জ্ঞানহীন’ বলে মন্তব্য করেছেন পর্যটন খাত সংশ্লিষ্টরা। ঢাকা ট্রাভেল মার্ট-এর আয়োজক  মনিটর সম্পাদক কাজী ওয়াহিদুল আলম বলেন, বরাবরই এমন আচরণ করেছে বোর্ড। দেশের ভেতরে মেলায় তারা যতটা আগ্রহী, তার চেয়ে বেশি আগ্রহী বিদেশি মেলায় অংশ নিতে।  দেশের পর্যটন বিষয়ে তাদের কর্মকাণ্ড বরাবরই সমালোচিত। বিভিন্ন সময়ে অনুষ্ঠিত মেলায় তারা দায়িত্বশীল আচরণ করেননি। 

ট্যুরিজম ডেভেলপমন্টে অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের ভাইস চেয়ারম্যান মহিউদ্দিন হেলাল বলেন, কিছুদিন আগে আমরা একটি মেলা করেছিলাম। সেখানে  ট্যুরিজম বোর্ডের স্টল থাকলেও তথ্য দেওয়ার মতো দায়িত্বশীল লোক ছিলেন না। দেশের ভেতরের পর্যটকদের গুরুত্ব না দিলে কোনওদিন পর্যটন খাত সমৃদ্ধ হবে না। ‘দায়িত্বশীল’ আচরণ আশা করলেও বোর্ডের মধ্যে সেই বোধ নেই। 

একটি ট্যুর অপারেটরের প্রতিনিধি ফরিদুল হক বলেন, ট্যুরিজম বোর্ড কোনও কাজ করছে না। সরকারে উচিত পর্যটনের উন্নয়নে ট্যুরিজম বোর্ডকে সক্রিয় করা।

শনিবার মেলায় অনুষ্ঠিত এক আলোচনা সভায় এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি আব্দুল মাতলুব আহমেদ বলেছেন, সরকার ২০১৬ সালকে পর্যটন বর্ষ ঘোষণা করছে, কিন্তু কোনও পার্থক্য  দেখছি না। গত বছর পর্যটন নিয়ে সরকার যা করেছে, এ বছর তার চেয়ে ভিন্ন কিছু দেখছি না।

জানা গেছে, বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা দেশের বাইরে রয়েছেন। এ বিষয়ে জানতে চাইলে বোর্ডের ডেপুটি ম্যানেজার (জনসংযোগ) আকতার আহমেদ বলেন, আমাদের স্টলে একজন কর্মকর্তা থাকার কথা। তিনি কেন নেই, তা আমার জানা নেই। এমন তো হওয়ার কথা নয়।

/এমএনএইচ/

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
যশোরের সাবেক উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যানসহ ৩ আওয়ামী লীগ নেতা আটক
যশোরের সাবেক উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যানসহ ৩ আওয়ামী লীগ নেতা আটক
মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটে আগুন
মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটে আগুন
এনসিপি ‘গঠনতন্ত্র প্রণয়ন কমিটি’ গঠন
এনসিপি ‘গঠনতন্ত্র প্রণয়ন কমিটি’ গঠন
৩য় প্রান্তিক শেষে ওয়ালটনের মুনাফা ৬৯৬ কোটি টাকা
৩য় প্রান্তিক শেষে ওয়ালটনের মুনাফা ৬৯৬ কোটি টাকা
সর্বাধিক পঠিত
উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ ও নূরজাহানের পদত্যাগ দাবি
উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ ও নূরজাহানের পদত্যাগ দাবি
রাখাইনে মানবিক সহায়তায় শর্তসাপেক্ষে করিডোর দিতে রাজি সরকার
রাখাইনে মানবিক সহায়তায় শর্তসাপেক্ষে করিডোর দিতে রাজি সরকার
হাইকোর্টে প্রতিবেদন: নিয়ম মেনেই হয়েছিল আদানির বিদ্যুৎ চুক্তি
হাইকোর্টে প্রতিবেদন: নিয়ম মেনেই হয়েছিল আদানির বিদ্যুৎ চুক্তি
আবার চালু হচ্ছে পরিত্যক্ত ৭ বিমানবন্দর, সবার আগে বগুড়া
আবার চালু হচ্ছে পরিত্যক্ত ৭ বিমানবন্দর, সবার আগে বগুড়া
মুক্তিযোদ্ধার বক্তব্যে জামায়াত নেতার বাধা, কেড়ে নেওয়া হলো মাইক
মুক্তিযোদ্ধার বক্তব্যে জামায়াত নেতার বাধা, কেড়ে নেওয়া হলো মাইক