বাজারে কমে এসেছে পেঁয়াজের দাম। কিছু কিছু দোকানে ১০০ টাকার নিচে পাওয়া যাচ্ছে ভারতীয় পেঁয়াজ। যদিও ক্রস ও দেশি পেঁয়াজ এখনও বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকার ওপরে। সব ধরনের পেঁয়াজের দাম কমলেও বেড়েছে আলুর দাম। বাজারে সাধারণত লাল, সাদা ও বগুড়ার আলুই পাওয়া যায়। আজ এই তিন ধরনের আলুর দামই বেড়েছে কেজিতে ১০ টাকা করে। এছাড়া বেশ কিছু সবজির দামও বেড়েছে। যেসব সবজির দাম বাড়েনি কিংবা অপরিবর্তিত রয়েছে সেগুলোর অবস্থানও উঁচুতেই!
শুক্রবার (২২ নভেম্বর) রাজধানীর মিরপুর ১ নম্বর কাঁচাবাজার ঘুরে এ চিত্র দেখা গেছে।
আজ বাজারে বেশ কয়েকটি সবজির দাম বেড়েছে। পাশাপাশি কমেছে দুই তিনটি সবজির দাম। এছাড়া অন্যান্য সবজির দাম রয়েছে অপরিবর্তিত। নতুন আলু ১২০-১৪০ টাকা, ভারতীয় টমেটো ১৫০-১৬০ টাকা, টক টমেটো ১৬০-১৮০ টাকা, কাঁচা টমেটো ৮০ টাকা, চায়না গাজর ১৬০ টাকা, শিম ১২০ টাকা, লম্বা বেগুন ৬০-৭০ টাকা, সাদা গোল বেগুন ৮০-১০০ টাকা, কালো গোল বেগুন ১০০-১১০ টাকা, শসা ৭০-১২০ টাকা, উচ্ছে ১০০ টাকা, করলা ১০০ টাকা, পেঁপে ৫০ টাকা, মুলা ৭০ টাকা, ঢেঁড়স ৮০-১০০ টাকা, পটল ৬০-১০০ টাকা, চিচিঙ্গা ৮০ টাকা, ধুন্দল ১০০ টাকা, ঝিঙা ৮০ টাকা, বরবটি ১০০ টাকা, কচুর লতি ৮০ টাকা, কচুরমুখী ৮০ টাকা, মিষ্টি কুমড়া ৬০ টাকা, কাঁচা মরিচ ১৬০ টাকা, ধনেপাতা ২০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। আর মানভেদে প্রতিটি লাউ ৯০-১২০ টাকা, চালকুমড়া ৮০ টাকা, ফুলকপি ৭০ টাকা, বাঁধাকপি ৭০ বিক্রি হচ্ছে টাকা করে। এছাড়া প্রতি হালি কাঁচা কলা ৪০ টাকা, হালি লেবু বিক্রি হচ্ছে ৩০-৫০ টাকা করে।
গত সপ্তাহের তুলনায় প্রতি কেজি ভারতীয় টমেটোর দাম বেড়েছে ২০ টাকা, চায়না গাজরের দাম ১০ টাকা বেড়েছে, শিমের দাম বেড়েছে ২০ টাকা, শসার (হাইব্রিড) দাম বেড়েছে ১০ টাকা, মুলার দাম বেড়েছে ১০ টাকা এবং ধুন্দলের দাম বেড়েছে ৪০ টাকা। এছাড়া প্রতি পিস লাউয়ের দাম বেড়েছে ১০-৪০ টাকা এবং ফুলকপি ও বাঁধাকপির দাম ১০ টাকা করে বেড়েছে।
প্রতি কেজিতে কাঁচা টমেটোর দাম ২০ টাকা কমেছে। লম্বা বেগুনের দাম কমেছে ১০-২০ টাকা, পটোলের (হাইব্রিড) দাম কমেছে ২০ টাকা। এছাড়া অন্যান্য সবজির দাম রয়েছে অপরিবর্তিত।
সবজির দাম বেড়ে যাওয়া নিয়ে বিক্রেতা শাহ আলম বলেন, ‘সবজির দাম প্রতিদিনই বাড়ে-কমে, কাঁচা জিনিসের দাম এমনই হয়। তবে এখন যেসব সবজির সিজন শেষ, সেগুলোর দাম বাড়াটাই স্বাভাবিক।’
এদিকে বাজার করতে আসা ক্রেতারা বলছেন, যেসব সবজির সিজন শেষ, সেগুলোর দাম বাড়বে এটা আমরাও জানি। কিন্তু এখন যেসব সবজির সিজন সেগুলোর দাম কেন বাড়ছে? এখনও সবজির দাম কেন বেশি? এগুলো কমাতে হবে। না কমলে আমাদের চলা কঠিন।
আজকের বাজারে আকার ও মানভেদে ক্রস জাতের পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১২০-১৩০ টাকায়। এর মধ্যে ছোট পেঁয়াজ ১২০ টাকা ও বড় সাইজের পেঁয়াজ ১৩০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। আর মানভেদে দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১৩০ টাকা, ভারতীয় পেঁয়াজ ৯০-১০০ টাকা করে। এছাড়া লাল আলু ৮০ টাকা, সাদা আলু ৮০ টাকা, বগুড়ার আলু ৯০ টাকা, দেশি রসুন ২৬০ টাকা, চায়না রসুন ২৪০ টাকা, চায়না আদা ২৪০ টাকা, নতুন ভারতীয় আদা ১২০ দরে বিক্রি হচ্ছে।
এ ক্ষেত্রে দেখা গেছে, আজকে প্রতি কেজিতে দেশি পেঁয়াজের দাম কমেছে ২০ টাকা, ক্রস জাতের পেঁয়াজের দাম কমেছে ১০-২০ টাকা ও ভারতীয় পেঁয়াজের দাম কমেছে ১০ টাকা। এদিকে সব ধরনের আলুর দামই বেড়েছে কেজিতে ১০ টাকা করে। আজকে চায়না আদা ও নতুন ভারতীয় আদার দাম কমেছে ২০ টাকা করে। এছাড়া অন্যান্য পণ্যের দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।
বাজারে গত সপ্তাহেও লাল ও সাদা আলুর দাম বেড়েছিল কেজিতে ৫ টাকা এবং বগুড়ার আলুতে ১০ টাকা। আজও আলুর দামই বেড়েছে কেজিতে ১০ টাকা করে।
আলুর দাম বেড়ে যাওয়া প্রসঙ্গে বিক্রেতা মো. ইউসুফ বলেন, ‘নতুন আলু বাজারে এখনও সেভাবে পাওয়া যাচ্ছে না। তারপর আবার লাগানোর জন্য বাজার থেকে আলু কিনছেন অনেকে। এতে একটা সংকট তৈরি হয়েছে। এ কারণেই দামটা বেশি। আর পেঁয়াজ ভারত থেকে আমদানি হওয়ায় এখন দাম কমে এসেছে। নতুন পেঁয়াজ এলে দাম আরও কমে যাবে।’
এদিকে আলুর দাম বাড়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ক্রেতারা। ক্রেতা সেলিম হোসেন বলেন, ‘আলুর দাম বেড়েই যাচ্ছে। এর লাগাম সরকার টানতে পারছে না। শক্তভাবে মেইনটেইন করা উচিত। না হলে আমাদের মতো সাধারণ মানুষের বেঁচে থাকা কঠিন হবে।’
এছাড়া আজকে বাজারে গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৭৫০ টাকা কেজি দরে। খাসির মাংস বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ১০০ টাকা কেজি দরে। ওজন অনুযায়ী ব্রয়লার মুরগি ১৮০-২০৩ টাকা, কক মুরগি ২৮৫-২৯৫ টাকা, লেয়ার মুরগি ২৮০ টাকা, দেশি মুরগি ৫৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। ফার্মের মুরগির প্রতি ডজন লাল ডিম ১৪৪ টাকা, সাদা ডিম ১৪০-১৪৪ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
এ ক্ষেত্রে দেখা গেছে, আজ ব্রয়লার মুরগি দাম কেজিতে কমেছে দুই টাকা, কক মুরগির দাম কমেছে পাঁচ টাকা, লেয়ার মুরগির দাম কমেছে পাঁচ টাকা। এছাড়া গরুর মাংস, খাসির মাংস ও দেশি মুরগির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। ফার্মের মুরগির লাল এবং সাদা ডিমের দাম রয়েছে অপরিবর্তিত।
আজকের বাজারে আকার ও ওজন অনুযায়ী ইলিশ মাছ ১০০০-১৮০০ টাকা, রুই মাছ ৪০০-৫৫০ টাকা, কাতল মাছ ৩৮০-৫০০ টাকা, কালিবাউশ ৪০০-৫৫০ টাকা, চিংড়ি ৮০০-১৪০০ টাকা, কাঁচকি মাছ ৪০০ টাকা, কৈ মাছ ২০০-৬০০ টাকা, পাবদা ৪০০-৮০০ টাকা, শিং মাছ ৪০০-১২০০ টাকা, টেংরা ৬০০-১২০০ টাকা, বেলে মাছ ১০০০-১২০০ টাকা, বোয়াল ৯০০-১১০০ টাকা, কাজলী মাছ ১০০০-১৩০০ টাকা, শোল ৯০০-১১০০ টাকা, মেনি মাছ ৫০০-৭০০ টাকা, চিতল ৬০০ টাকা, সরপুঁটি ২৫০-৪০০ টাকা, রূপচাঁদা ৮০০-১২০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
মুদিপণ্যের দাম আজ অপরিবর্তিত থাকলেও কমেছে চিনির দাম। তবে খোলা সয়াবিন ও খোলা সরিষার তেলের দাম বেড়েছে। ছোট মসুর ডাল ১৩৫ টাকা, মোটা মসুর ডাল ১১০ টাকা, বড় মুগ ডাল ১৪০ টাকা, ছোট মুগ ডাল ১৭০ টাকা, খেসারি ডাল ১১০ টাকা, বুটের ডাল ১৪৫ টাকা, মাষকলাই ডাল ১৯০ টাকা, ডাবলি ৭৫ টাকা, ছোলা ১৩০ টাকা, প্যাকেট পোলাও চাল ১৫০ টাকা, খোলা পোলাও চাল মানভেদে ১১০-১৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। আর প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল ১৬৭ টাকা, খোলা সয়াবিন তেল ১৬৮ টাকা, প্যাকেটজাত চিনি ১৩০ টাকা, খোলা চিনি ১২৬ টাকা, দুই কেজি প্যাকেট ময়দা ১৫০ টাকা, আটা দুই কেজির প্যাকেট ১১৫ টাকা, খোলা সরিষার তেল প্রতি লিটার ১৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
এ ক্ষেত্রে দেখা গেছে, আজকে প্রতি কেজিতে প্যাকেট চিনির দাম কমেছে পাঁচ টাকা এবং খোলা চিনির দাম কমেছে চার টাকা। এছাড়া খোলা সয়াবিন তেলের দাম বেড়েছে তিন টাকা এবং খোলা সরিষার তেলের দাম বেড়েছে ১০ টাকা।
ছবি: প্রতিবেদক