গ্যাস উন্নয়ন তহবিল থেকে ১ হাজার ৩০৫ কোটি ৪৩ লাখ টাকা ঋণ নিয়ে প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম এক্সপ্লোরেশন অ্যান্ড প্রোডাকশন কোম্পানি-বাপেক্স। কিন্তু প্রকল্পগুলো লাভজনক না হওয়ায় এই ঋণকে অনুদানে রূপান্তর করার আবদার করছে তারা।
গ্যাস উন্নয়ন তহবিলের টাকা ভোক্তাদের। গ্যাসের বিলের সঙ্গে নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ গ্যাস উন্নয়ন তহবিলে জমা দেওয়া হয়। দেশে গ্যাস খাতের উন্নয়নের জন্য এই অর্থ বরাদ্দ রাখা হয়। গ্যাস উন্নয়ন তহবিল থেকে অর্থ নিলে সেই অর্থ নির্দিষ্ট সময় পর সুদসহ আবার তহবিলে ফেরত দিতে হয়।
কিন্তু বাপেক্স সম্প্রতি জ্বালানি বিভাগের এক বৈঠকে জানিয়েছে, গ্যাস উন্নয়ন তহবিল (জিডিএফ) এর অর্থায়নে বাস্তবায়িত/সমাপ্ত ৬টি অলাভজনক প্রকল্পের বিপরীতে নেওয়া ১ হাজার ৩০৫ কোটি ৪৩ লাখ ৫৬ হাজার টাকা ঋণ অনুদানে রূপান্তর করতে হবে। গত ১ জানুয়ারি পেট্রোবাংলার মাধ্যমে বাপেক্স জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগে এই আবেদন পাঠিয়েছে। যা এখনও নিষ্পন্ন হয়নি।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাপেক্স যখন বিদেশি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে ঋণ নিয়ে প্রকল্প করে তখন সেই প্রকল্প লাভজনক হোক বা না হোক ঋণ পরিশোধ করতেই হয়। তাহলে গ্যাস উন্নয়ন তহবিলের অর্থের ক্ষেত্রে বিষয়টি কেন ভিন্ন হবে। আবার কোনও একটি প্রকল্প লাভজনক হয়নি বলে আর কোনোটি লাভজনক হবে না বিষয়টি তো এমন নয়। তাহলে যেসব প্রকল্পে বাপেক্স লাভ করছে সেখান থেকে তো আর গ্যাস উন্নয়ন তহবিলে অতিরিক্ত অর্থ দেবে না।
দেশীয় গ্যাস অনুসন্ধান, উত্তোলন, উন্নয়ন ও সংস্কার কাজে অর্থ বিনিয়োগের জন্য ২০০৯ সালের ৩০ জুলাই গঠন করা হয় ‘গ্যাস উন্নয়ন তহবিল’। এবার বাজেটেও ৮৩৭ কোটি টাকা জিডিএফ থেকে বরাদ্দ রাখা হচ্ছে। প্রতিবছর বাজেটেই গ্যাস খাতের চাহিদা অনুযায়ী জিডিএফ থেকে একটি বরাদ্দ রাখা হয়। কিন্তু প্রকল্প লাভজনক হচ্ছে না বিবেচনায় যদি ঋণকে অনুদান হিসেবে ঘোষণা করতে হয় তাহলে জিডিএফ আর তহবিল এক সময় খালি হয়ে যাবে। এক্ষেত্রে গ্যাস খাত আরও আর্থিক জটিলতায় পড়বে।
দেশে প্রতি তিনটি কূপ খননের বিপরীতে একটি কূপে গ্যাস পাওয়া যায়। একটি কূপে আশানুরূপ গ্যাস পেলে অন্য দুটি খননের ব্যয়ও উঠে আসে। সম্প্রতি বাপেক্স ৬টি কূপ খনন কাজে এই অর্থ ব্যয় করেছে বলে তাদের একজন কর্মকর্তা জানান। একইসঙ্গে এসব এলাকায় গ্যাস, তেল অনুসন্ধানে জরিপও করা হয়েছে। তবে এর বিপরীতে বাপেক্স ভোলায় কয়েকটি কূপে গ্যাস পেয়েছে। কূপ খনন করলেই গ্যাস পাওয়া যাবে এমনটি নয়। তাহলে বাপেক্স কেন ঋণের অর্থ অনুদান হিসেবে চাইছে তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
জানতে চাইলে জ্বালানি বিশেষজ্ঞ বদরুল ইমাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বাপেক্স কোনোভাবেই এই আবদার করতে পারে না। এতে জিডিএফের টাকার অপব্যবহার হবে।’ এটি একটি খারাপ নজির সৃষ্টি করবে বলেও তিনি মনে করেন।
তবে বাপেক্স এর মহাব্যবস্থাপক প্রকৌশলী মোহাম্মদ আহসানুল আমিন প্রশ্ন শুনে বিষয়টি এড়িয়ে গিয়ে বলেন, ‘বিষয়টি পেট্রোবাংলা জানে।’ এর বাইরে তিনি এ বিষয়ে কিছু বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন।
আরও পড়ুন