জেমিনি-এআই : গুগল ইজ ব্যাক ইন দ্য গেম 

ওপেন-এআইয়ের এআই-নির্ভর লার্জ ল্যাঙ্গুয়েজ মডেল চ্যাটজিপিটি ২০২২ সালে তুমুল সাড়া ফেলেছিল। কম্পিউটার বিজ্ঞানীদের ক্রমাগত প্রচেষ্টায় গুগল প্রযুক্তি দুনিয়ায় নিয়ে এসেছে গুগল বার্ড। তারই ধারাবাহিকতায় ডিপ-মাইন্ড ও গুগলের গবেষণা দল যৌথভাবে ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে (গত সপ্তাহে) জেমিনি-এআই  উন্মোচন করেছে।

জেমিনি-এআই একটি লার্জ ল্যাঙ্গুয়েজ মডেল, যা আলফাগো থেকে অনুপ্রাণিত। অন্য সব এলএলএম মডেলের মতোই একে ট্রেইন করা হয়। বিশেষ টেনসর প্রসেসিং ইউনিট, গ্রাফিকস প্রসেসিং ইউনিট (জিপিইউ) ও এইচ-ওয়ান জিরো জিরো চিপ দিয়ে এই জিপিইউ তৈরি হয়েছে। বর্তমানে এর তিনটি মোড-ন্যানো, প্রো এবং আল্ট্রা পাওয়া যাচ্ছে। ন্যানো মোড সবচেয়ে লাইটওয়েট ভার্সন, যা কম্পিউটার এবং অ্যান্ড্রয়েড ফোনে ব্যবহার করা যাচ্ছে। আল্ট্রা ভার্সন কমপ্লেক্স প্রবলেম সমাধানের জন্য ব্যবহার করা যাবে। অপরদিকে, প্রো-ভার্সন গুগল বার্ডের মধ্যে সংযুক্ত করা হয়েছে। এটি বিশ্বের ১৭০টি দেশে চালু হয়েছে। ব্যবহার করতে চাইলে বার্ডের ওয়েবসাইটে লগইন  করতে হবে। কিন্তু বর্তমানে এটি বাংলাদেশের ব্যবহারকারীদের জন্য প্রযোজ্য নয়। এটি টেক দুনিয়ায় নতুন সম্ভাবনার দ্বার খুলে দিয়েছে। 

জানা গেছে, জেমিনি একটি মাল্টিমোডাল এআই, যার মাধ্যমে অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে ছবি, লেখা, অডিও, ভিডিও, প্রোগ্রামিং ইত্যাদি প্রসেস করা যায়। অপরদিকে, গেল অক্টোবরে চ্যাটজিপিটি মাল্টিমোডাল জিপিটি-৪ ভার্সন বাজারে নিয়ে এসেছে। কিন্তু অডিও ট্রান্সলেশন কিংবা ভিডিও ক্যাপশন তৈরির দক্ষতায় এগিয়ে আছে জেমিনি-এআই। একজন ব্যবহারকারীর অভিমত, এটি ইন্টারনেট থেকে তথ্য সংগ্রহ করার দরুন ব্যবহারকারীর উদ্দেশ্য সহজে বুঝতে পারে। শুরুর দিকে অধিকাংশ এআই বট ভুলভাল উত্তর দিয়ে থাকে। তবে ব্যবহারকারীরা যত ব্যবহার করবেন, ডাটা তত ট্রেইন হতে থাকবে এবং ভুল উত্তর দেওয়ার প্রবণতা কমতে থাকবে। ধরা যাক, আপনি জেমিনিকে পার্সিয়ান বিড়ালের ছবি দিয়ে এই সম্পর্কে জানতে চাইলেন। এটি যে একটি বিড়াল তা জানিয়ে দেওয়ার অভাবনীয় সক্ষমতা রয়েছে জেমিনির।

তবে জেমিনি নিয়ে গুগল যে ছয় মিনিটের ডেমো ভিডিও ছেড়েছে, তা নেটিজেনদের কাছে অত্যন্ত বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। প্রকাশিত ভিডিওতে দেখা গেছে, অডিওর মাধ্যমে হাঁস আঁকার বর্ণনা দেওয়ার সক্ষমতা জেমিনির আছে। এটি চালু হওয়ার পর কর্তৃপক্ষ ব্লুমবার্গকে জানিয়েছে, ভিডিওটি রিয়েল টাইম নয়, বরং স্থির ছবি ও লেখা দিয়ে জেমিনিকে প্রমোট করা হয়েছে। এরই ফলশ্রুতিতে গুগল সাধারণ মানুষের কটাক্ষের শিকার হয়েছে। তারপরও গুগলের জেমিনি-এআই তীব্র প্রতিযোগিতার মুখোমুখি চ্যাটজিপিটির। এই সপ্তাহে গুগল প্রকাশিত হোয়াইট পেপারে তারা দাবি করেছে, জেমিনি এআইয়ের আল্ট্রা ভার্সন কিছু ক্ষেত্রে জিপিটি-ফোর-কে ছাড়িয়ে গেছে। কিছু ক্ষেত্রে জেমিনি এআই বিতর্কের জন্ম দিলেও গুগলের সিইও সুন্দর পিচাই একে আগামী দশকের সবচেয়ে বড় আবিষ্কার বলে অভিহিত করেছেন।

লেখক: মাহবুবা ইয়াসমিন তুরাবা

প্রভাষক, ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ।