‘আমাদের প্রেসিডেন্ট এভাবে মারা যাবেন, কল্পনাও করিনি’

প্রথমে ইরানের পূর্ব আজারবাইজান প্রদেশের জোলফা এলাকার কাছে প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেইন আমির আব্দোল্লাহিয়ানের বহন করা হেলিকপ্টারটির দুর্ঘটনায় পড়ার খবর আসে। তখনই তাদের বেঁচে থাকা নিয়ে আশঙ্কা করা হয়েছিল। শেষ পর্যন্ত হেলিকপ্টারে থাকা সবার মৃত্যুর খবর আসে। এমন খবর ইরানবাসী জেনেছে সঙ্গে সঙ্গে। ঢাকায় কোচিংয়ে যুক্ত ইরানের নাগরিকদেরও শুরুতে প্রত্যাশা ছিল প্রেসিডেন্টসহ অন্যদের জীবিত উদ্ধার করা যাবে। কিন্তু তাদের অপ্রত্যাশিত মৃত্যুর পর তারাও শোকে মুহ্যমান। এমন মৃত্যু নাড়া দিয়েছে সবাইকে।

প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে প্রেসিডেন্টকে বহনকারী হেলিকপ্টারটির উদ্ধারকাজ ব্যাহত হচ্ছিল। ভারী বৃষ্টি ও ঘন কুয়াশার কারণে পাঁচ মিটারের বেশি দূরত্বে কিছু দেখা যায়নি বলেও জানিয়েছিলেন উদ্ধারকর্মীরা। পরের দিন অবশ্য ইরানের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা নিশ্চিত করেছেন, হেলিকপ্টারে থাকা প্রেসিডেন্ট ও পররাষ্ট্রমন্ত্রীসহ সব যাত্রী নিহত হয়েছেন।

এখন ইরানে ৫ দিনের শোক চলছে। পূর্ব আজারবাইজানের রাজধানী তাবরিজে রাইসির জানাজায় ঢল নেমেছে। এছাড়াও একাধিক স্থানে জানাজা হচ্ছে। দেশের জনগণ তাতে অংশ নিচ্ছেন। ঢাকায় কাজ করছেন জাতীয় ভলিবল দলের ইরানি কোচ আলিপোর মুসলিমি। নিজ দেশের প্রেসিডেন্টের এমন মৃত্যুর খবরে তিনিও ব্যথিত। বাংলা ট্রিবিউনের সঙ্গে নিজের শোক ভাগাভাগি করে নিয়েছেন আলিপোর, ‘এটা আসলে অনেক দুঃখজনক ঘটনা। দুর্ভাগ্যজনক। ইরানের সবাই কাঁদছেন, সবাই শোকাচ্ছন্ন। আমারও এখানে মন খারাপ। হয়তো দেশে থাকলে প্রেসিডেন্টের জানাজায় শরিক হতে পারতাম। কিন্তু এখন তো তা সম্ভব নয়। অনেক দেশেই শোক পালন করা হচ্ছে।’

প্রেসিডেন্টকে বহনকারী হেলিকপ্টারটিই শুধু বিধ্বস্ত হয়েছে। অন্যগুলোর কোনও ক্ষতি হয়নি। আলিপোর কখনও চিন্তা করেননি নিজ দেশের প্রেসিডেন্টকে এভাবে হারাবেন, ‘আসলে আমাদের প্রেসিডেন্ট এভাবে মারা যাবেন কল্পনাও করিনি। শুধু আমি কেন, আমার মনে হয় কেউ এমন কিছু ধারণা করেনি। আমি দোয়া করি সামনে যেন এ ধরনের দুর্ঘটনা না ঘটে এবং যেন কারও মৃত্যু না হয়। তিনি যেই হোক না কেন।’

প্রেসিডেন্ট রাইসি জনগণের কাছে বেশ জনপ্রিয় ছিল বলেছেন বাংলাদেশের ভলিবল কোচ, ‘আমাদের প্রেসিডেন্ট জনগণের জন্য অনেক কাজ করার চেষ্টা করেছেন, যা সবাই অনেক দিন মনে রাখবে। ফিলিস্তিনের ওপর ইসরায়েল আক্রমণ করে যাচ্ছে। আমাদের দেশের প্রেসিডেন্ট কিন্তু এর কঠোর প্রতিবাদ করেছেন। ইসরায়েলকে নানাভাবে জবাব দেওয়ার চেষ্টাও করেছেন। আশা করছি আমাদের দেশ দ্রুত স্বাভাবিক পরিস্থিতির মধ্যে ফিরবে। আবার আগের মতো স্বাভাবিক হবে সবকিছু।’

ভলিবল কোচের মতোই বাংলাদেশের শুটিংয়ে ইরানের জায়ের রেজাই অনেক দিন হলো কাজ করছেন। তার মতে, ‘প্রেসিডেন্ট যে জায়গায় মারা গেছেন সেটা পাহাড়ঘেরা। আবহাওয়া হঠাৎ বদলে যায়। অনেক কুয়াশাও ছিল। পাইলট কিছু দেখতে পারছিলেন না। এমন দুর্ঘটনা আসলে মেনে নেওয়া কঠিন। দেশের সবাই শোক পালন করছেন। বাংলাদেশেও দেখলাম শোক ঘোষণা করেছে।’

এই শোক কাটিয়ে উঠে দেশ দ্রুত ঘুরে দাঁড়াবে বলে বাংলাদেশ শুটিং কোচের বিশ্বাস, ‘তবে আশা করছি দ্রুত এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণ হবে। ইরান বড় দেশ। জনগণও ভালো সাহসী। দেশের কোনও সমস্যা হবে না। আমরা নিজেদের শক্তি দিয়েই এগিয়ে যাবো। আগের মতো স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে ফিরবো।’

ইরানে জন্ম নেওয়া বর্তমানে জার্মানির নাগরিক রেজা পার্কাস এক মৌসুম আগে বাংলাদেশ ব্রাদার্স ইউনিয়নের কোচের দায়িত্ব পালন করেছিলেন। পার্কাসও ইরানের প্রেসিডেন্টের মৃত্যুর খবরে ব্যথিত। যোগাযোগ করা হলে জার্মানি থেকে পার্কাস বলেছেন, ‘আমি এখন জার্মানিতে আছি। আমিও আপনাদের মতো নিউজের মাধ্যমে এমন খবর জানতে পেরেছি। সেদিকে খেয়ালও রাখছি। আসলে সেদিন আবহাওয়া ভালো ছিল না। এমন মৃত্যু আসলে দুঃখজনক।’