প্রিমিয়ার লিগে দুই দলের ম্যাচ নিয়ে আগে থেকেই উত্তেজনার আবহ ছিল। শনিবার ম্যাচের আগে ফিলিস্তিনের প্রতি সহমর্মিতা জানাতে দুই দলের সমর্থকরা গ্যালারিতে নিয়ে এলেন বড় পতাকা। ঘটনাবহুল ম্যাচে অনেক কিছুই ঘটেছে। লাল কার্ডের সেই ম্যাচে সুলেমানে দিয়াবাতের নৈপুণ্যে মোহামেডান ২-১ গোলে বসুন্ধরা কিংসকে হারিয়েছে। এই জয়ে শিরোপার পথ সুগম করেছে আলফাজ আহমেদের দল।
এর আগে লিগের প্রথম পর্বের দেখায় কিংসকে ১-০ গোলে হারিয়েছিল মোহামেডান। ওই ম্যাচেও জয়সূচক গোলটি করেছিলেন দিয়াবাতে।
লিগে ১১ ম্যাচে ৩০ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষে আছে মোহামেডান। দ্বিতীয় স্থানে থাকা আবাহনীর চেয়ে ৪ পয়েন্ট এগিয়ে আছে তারা। তাতে কিংসের মুকুট ধরে রাখার সম্ভাবনাও আরও ফিকে হয়ে গেছে। ১১ ম্যাচে ২০ পয়েন্ট নিয়ে তৃতীয় স্থানে আছে তারা।
শনিবার শুরু থেকে বলের নিয়ন্ত্রণ ও পজেশনে আধিপত্য বিস্তারে দুই দলই জোর দেয়। এরই মধ্যে ৮ মিনিটে তালগোল পাকিয়ে গোল হজম করে বসে কিংস।
নিজেদের অর্ধ থেকে লং বল বাড়িয়েছিলেন মোজাফ্ফর মোজাফ্ফরভ, দিয়াবাতের পাহারায় ছিলেন দেসিয়েল লুইস দল সান্তোস। একই সময় বল আটকাতে পোস্ট ছেড়ে বেরিয়ে আসেন গোলকিপার মেহেদী হাসান শ্রাবণও। দিয়াবাতের চার্জে দেসিয়েল ভারসাম্য হারালে বল বেরিয়ে যায়, শ্রাবণও পারেননি ক্লিয়ার করতে। ফাঁকা পোস্টে জায়গা করে নিয়ে অনায়াসে বল জড়িয়ে দেন মোহামেডান অধিনায়ক।
কিংস অবশ্য ঘুরে দাঁড়ায় ২৫ মিনিটে। ফের্নান্দেসের ফ্রি কিকের পর সোহেল রানা জুনিয়রের শট ডিফেন্ডার মেহেদী হাসান ব্লকড করলেও পুরোপুরি ক্লিয়ার করতে পারেননি। বল চলে যায় রাকিবের পায়ে, ছোট বক্সের ওপর থেকে নিখুঁত টোকায় জাল খুঁজে নেন এই ফরোয়ার্ড। দশ মিনিট পর ভালো সুযোগ পায় মোহামেডান। ইমানুয়েল সানডের ক্রস বক্সে ধরে আরিফ হোসেন বাম পায়ে শটও নেন, কিন্তু সেটা উড়ে যায় ক্রসবারের ওপর দিয়ে।
দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে বড় ধাক্কা খায় কিংস। আক্রমণে ওঠা সানডেকে অযথা মাঝমাঠের একটু উপরে জার্সি ধরে টেনে ফেলে দিয়ে দ্বিতীয় হলুদ কার্ড দেখেন রিমন।
৫৩ মিনিটে কিংসকে আরও বিপদে ফেলতে বসেছিলেন শ্রাবণ। বল ধরতে পোস্ট ছেড়ে বেরিয়ে এলেও পারেননি। বাইলাইনের ঠিক ওপর থেকে সতীর্থের চিপে মাহবুব আলমের হেড গোললাইন থেকে ফেরান তপু বর্মন।
একটু পরই তিনটি পরিবর্তন আনেন কিংস কোচ ভ্যালেরি তিতে। ব্রাজিলিয়ান ফের্নান্দেসকে তুলে বদলি নামান ফরোয়ার্ড হুয়ান এদুয়ার্দ লেসকানোকে। এই আর্জেন্টাইন অবশ্য ভীতি ছড়ানোর মতো কিছু করতে পারেননি।
৭৩ মিনিটে অপ্রীতিকর পরিস্থিতি তৈরি হয়। দুই পক্ষের সমর্থকরা গ্যালারিতে বিবাদে জড়ান। বোতল, ঢিলসহ নানা কিছু ছুঁড়তে থাকেন পরস্পরের দিকে। নিরাপত্তারক্ষীরাও পারছিলেন না তাদের সামলাতে। তাতে খেলা বন্ধ থাকে আট মিনিট। এর আগে চ্যালেঞ্জ কাপেও দুই দলের ম্যাচে সমর্থকদের ফ্লেয়ার পোড়ানোর কারণে খেলা বিঘ্নিত হয়েছিল।
খেলা শুরু হলে ৮৫ মিনিটে আবারও দেখা যায় দিয়াবাতে ঝলক। মাঝমাঠে কিংসের ইভান্স ইত্তি বল হারান। এরপর সতীর্থের লম্বা ক্রস পৌঁছে দেন মালির ফরোয়ার্ডের কাছে। ব্রাজিলিয়ান ডিফেন্ডার দেসিয়েলকে কাটিয়ে ছুটে আসা শ্রাবণকে ফাঁকি দিয়ে নিখুঁত শটে লক্ষ্যভেদ করেন তিনি। এই গোলটি শেষ পর্যন্ত গড়ে দেয় ম্যাচের ভাগ্য।
চলমান লিগে দিয়াবাতের গোল হলো ৯টি, গোলদাতার তালিকায় মালির এই ফরোয়ার্ড উঠে এসেছেন দ্বিতীয় স্থানে। ১৩ গোল নিয়ে শীর্ষে রহমতগঞ্জ মুসলিম ফ্রেন্ডস অ্যান্ড সোসাইটির স্যামুয়েল বোয়াটেং।