‘বুট কেনার জন্য নির্মাণ শ্রমিকের কাজও করতে হয়েছে’

নীলফামারী থেকে এসে জাতীয় দলের ক্যাম্পে প্রথমবারের মতো যোগ দিয়েছেন দীপক রায়। এই আনন্দ বাধভাঙা। এই পর্যন্ত আসতে কঠিন পথ পাড়ি দিতে হয়েছে। অনেক ঘাম ঝরানোর পরই হাভিয়ের কাবরেরার স্কোয়াডে সুযোগ করে নিয়েছেন ২৩ বছর বয়সী ফুটবলার। একটি ঘটনা শুরুতে না বললেই নয়। ফুটবলে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার জন্য একসময় নির্মাণ শ্রমিকের কাজও করতে হয়েছে এই ফরোয়ার্ডকে!

দীপকের বাসা নীলফামারী সদরে। বঙ্গবন্ধু প্রাথমিক স্কুল ফুটবল দিয়ে খেলা শুরু। এরপর জাতীয় পর্যায়ে বয়সভিত্তিক পর্যায়ে খেলে এবার জাতীয় দলে সুযোগ পেয়েছেন। মাঝে সিলেট ফুটবল একাডেমিতে দীক্ষা নিয়েছেন। গত মৌসুমে শেখ রাসেলের হয়ে ৬ গোলের পাশাপাশি তিনটি অ্যাসিস্টও আছে তার।

আজ রবিবার স্থানীয় একটি হোটেলে জাতীয় দলের  আবাসিক ক্যাম্পেও যোগ দিয়েছেন দীপক। লাল-সবুজের প্রাথমিক দলে যোগ দিয়ে তিনি যারপরনাই উচ্ছ্বসিত। বাংলা ট্রিবিউনকে আনন্দ নিয়েই বলেছেন, ‘প্রথম সুযোগ পাওয়ায় অনেক খুশি। এটা তো বলার অপেক্ষা রাখে না, এটা ভাষায় প্রকাশ করতে পারবো না। আমি ছাড়াও বাসায় সবাই খুশি।’

তিন ভাইয়ের মাঝের জন দীপক। নীলফামারীতে জেলা পর্যায়ে বড় ভাই অ্যাথলেটিকস খেলতেন। তাকে দেখেই খেলাধুলাতে আসার অনুপ্রেরণা পেয়েছেন। বাবা মন্টু রায় অটোট্যাক্সি ড্রাইভার। মা প্রমোদা রায় গৃহিনী। 

দীপকের ক্যারিয়ারে বাবা-মাসহ পরিবারের কারও অবদান কম নয়, ‘আমার ফুটবল ক্যারিয়ার পুরোটাই কষ্টময়। অনেক কষ্ট করতে হয়েছে। আমার বাবা-মায়ের কারণে আজ আমি ফুটবল খেলে যাচ্ছি। ফুটবল খেলার ফাঁকে ধানও কেটে থাকি। কোনও কাজকে আমি ছোট করে দেখি না। জীবনে কিছু করতে গেলে কষ্ট করতে হয়। আমি তা মেনে নিয়েছি।’

দীপকের সঙ্গে জাতীয় দলে প্রথমবার ডাক পেয়েছেন নিপুএরপরই ক্যারিয়ার গড়তে আরেক কষ্টের কথা জানান দিলেন এভাবে, ‘ফুটবল খেলার শুরুতে আমার বুট কেনার টাকা ছিল না। কী করবো তখন! পরিবারেরও সামর্থ্য ছিল না কিনে দেওয়ার। তখন নির্মাণ শ্রমিক হিসেবে কাজ করে অর্থ সংগ্রহ করেছি। শুধু বুট কেনার জন্য চার থেকে পাঁচ দিন কাজ করেছি। তা থেকে টাকা পেয়ে প্রথম বুট কিনি ২০১২ সালে। বয়স ছিল তখন ১৩ কিংবা ১৪। আসলে আমি যে কোনোভাবে ফুটবলার হতে চেয়েছিলাম।’

এরপর আর দীপককে পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। ফুটবল খেলেই কম-বেশি আয় করে যাচ্ছেন। কঠোর পরিশ্রমী হিসেবে দীপকের সুনাম রয়েছে। প্রিমিয়ার লিগে গতবার বক্সের বাইরে থেকে তার একটি গোল এখনও চোখে ভাসে। এবার জাতীয় দলে সুযোগ পেয়ে টিকে থাকতে চাইছেন দীপক, ‘আমি এখন জাতীয় দলে সুযোগ পেয়েছি। হারিয়ে যেতে চাই না। কষ্ট হলেও টিকে থাকতে চাই। দীর্ঘদিন লাল-সবুজ দলে সার্ভিস দিতে পারলে নিজের কাছেই ভালো লাগবে।’