মার্টিনেজের অপেক্ষায় ঘুমাতে পারছিল না মাশরাফির দুই সন্তান

আর্জেন্টিনার পাঁড় ভক্ত মাশরাফি বিন মুর্তজা। বাবার মতো ছেলে সাহেল মুর্তজা ও মেয়ে হুমায়ারা মুর্তজাও আর্জেন্টিনার সমর্থক। আর্জেন্টিনার খেলা মানেই মাশরাফির পরিবারে উৎসব। বিশ্বকাপে ফ্রান্সকে হারিয়ে ৩৬ বছর পর শিরোপা জয়ের উৎসব করতে মধ্যরাতে দুই সন্তানকে নিয়ে বিজয় মিছিল করেছেন মাশরাফি।

অবশেষে আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ ট্রফি জয়ের অন্যতম নায়ক এমিলিয়ানো মার্টিনেজের সঙ্গে দেখা করার সুযোগ পেয়েছেন মাশরাফি। শুধু তিনি নন, তার দুই সন্তানও আর্জেন্টিনার গোলকিপারের সঙ্গে দেখা করেছে। অটোগ্রাফ নিয়েছে, ছবিও তুলেছে।

দক্ষিণ এশিয়ার দুই দেশ সফরে এসেছেন বিশ্বচ্যাম্পিয়ন আর্জেন্টিনার গোলরক্ষক এমিলিয়ানো মার্টিনেজ। শুরুতে সোমবার (৩ জুলাই) সকালে ঢাকায় নেমে কয়েক ঘণ্টা থাকবেন। এরপর দুই দিনের সফরে যাবেন কলকাতায়। ভারতে সাধারণ মানুষের সঙ্গে মার্টিনেজের সাক্ষাৎ হলেও বাংলাদেশে সেটি হচ্ছে না। তাকে উড়িয়ে আনা স্পন্সর প্রতিষ্ঠান ফান্ডেড নেক্সটের পক্ষ থেকে আমন্ত্রিত অতিথিরাই কেবল মার্টিনেজের সাক্ষাৎ পাবেন। সেই তালিকায় ছিলেন মাশরাফিও।

মাশরাফির সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ শেষে সামাজিক মাধ্যমে আবেগঘন পোস্ট দেন মাশরাফি। মার্টিনেজকে ভালো লাগার শুরুর কথা বর্ণনা করতে গিয়ে বাংলাদেশের সাবেক অধিনায়ক বলেন, ‘এমিকে ভালো লাগার শুরু কোপা আমেরিকা থেকেই, যেখানে সে টাইব্রেকারে দুটি গোল আটকে দিয়ে দলকে জয় এনে দিলো। কত বছর পর বড় কোনও শিরোপা জিতলো আর্জেন্টিনা! লিওনেল মেসিও পেলো দেশের হয়ে প্রথম বড় ট্রফির স্বাদ। স্বাভাবিকভাবেই পাখির চোখে তাকিয়ে ছিলাম বিশ্বকাপের দিকে। কিন্তু সৌদি আরবের সাথে হেরে মনে হয়েছিল, আরেকটি বিশ্বকাপও হয়তো শেষ হবে হতাশায়। কিন্তু অবিশ্বাস্যভাবে ঘুরে দাঁড়ানো এবং পরে বিশ্বকাপ জয় দেখতে পারাটা ছিল অনেক দিনের লালিত স্বপ্ন পূরণের মতো।’

অতিরিক্ত সময়ের শেষ বাঁশি বাজার আগ মুহূর্তে অসাধারণ সেভে দলকে রক্ষা করেন এমিলিয়ানো মার্টিনেজ। শেষ পর্যন্ত আর কোনও গোল না হলে টাইব্রেকারে গড়ায় আর্জেন্টিনা-ফ্র্যান্সের ফাইনাল ম্যাচ। টাইব্রেকারে ৪-২ গোলে ফ্রান্সকে হারিয়ে বিশ্বকাপের শিরোপা জেতে আর্জেন্টিনা।

কাতার বিশ্বকাপ চলাকালীন সন্তানদের নিয়ে মাশরাফির আর্জেন্টিনার জয় উদযাপন

প্রিয় দলকে শিরোপা উপহার দেওয়ার নায়ককে সামনে থেকে দেখে দারুণ আপ্লুত মাশরাফি, ‘সেই জয়ের অন্যতম নায়ক এমির সঙ্গে দেখা হলো আমাদের এই ঢাকায়। খুব অল্প সময়ের জন্য দেখা, কিন্তু দারুণ এক অনুভূতি। বিশ্বকাপজয়ী দলের গোলকিপার চোখের সামনে! সে তো জানে না, আমার এবং আমার মতো আরও কত কোটি মানুষের কত বছরের অপেক্ষা শেষ হলো, যেদিন তার ওই হাত ধরেই আর্জেন্টিনা বিশ্বকাপ জয় করলো!’

মাশরাফি আরও লিখেছেন, ‘আজকে সে ইন্টারভিউয়ের মাঝেই একবার ট্রাউজার উঠিয়ে দেখালো, পায়ের ঠিক সেই জায়গায় একটি ট্যাটু করিয়েছে, বিশ্বকাপ ফাইনালে শেষ বাঁশির ১৮ সেকেন্ড আগে কোলো মুয়ানির শর্টটি আটকে দিয়েছিল যে জায়গা দিয়ে। এক সেকেন্ডের জন্য মনে হলো, আসলে বিশ্বকাপটা তো ওখানেই জিতে নিয়েছে।’

আর্জেন্টিনার তারকাকে কাছ থেকে দেখার চেয়েও মাশরাফির ভালো লাগা দুই সন্তানের স্বপ্ন পূরণ হওয়ায়, ‘আজকে (সোমবার) আসলে বেশি ভালো লাগছে আমার সন্তানদের জন্য। যখন বললাম, ‘এমি আসছে, তোমাদের কি দেখা করার ইচ্ছা আছে? ওরা লাফাচ্ছিল। সবশেষ দুটি দিন ওরা ঠিকমতো ঘুমাতে পারছিল না এমিকে দেখবে বলে। আজকে এমির সঙ্গে দেখা হওয়ার পর বললাম, বাচ্চারা তোমার অটোগ্রাফ নিতে চায়। সে এত আন্তরিকতা দেখালো, এক কথায় অসাধারণ। এমনকি সে ছবিও তুলে দিলো ওদের সঙ্গে। এখন তারা মহাখুশি, আর ওদের খুশিতে আমিও এখন মহাখুশি।’

একদম শেষে মার্টিনেজকে ধন্যবাদ দিয়ে মাশরাফি নিজের স্বপ্নের কথা জানিয়েছেন, ‘এমি, আপনাকে স্বাগত এই বাংলার মাটিতে। এখানে আপনাদের অগুনতি ভক্ত আছে, যুগ যুগ ধরে। আশা করি আপনারও ভালো লাগছে এই মাটিতে পা রেখে। পাশাপাশি এটাও ভাবি, সত্যি বাংলাদেশ একদিন বিশ্বকাপ ফুটবলে কোয়ালিফাই করবে আর আমরা আমাদের পতাকা নিয়ে মিছিল করবো, ইনশাআল্লাহ।

ম্যাশ বলেন, ‘অনেকের কাছে এখন এটা অবাস্তব মনে হতে পারে। তবে আমি বিশ্বাস করি, কাজটা কঠিন, খুব কঠিন হলেও অসম্ভব নয়। স্বপ্নপূরণের সেই দিনটির অপেক্ষায় আছি, ইনশাআল্লাহ।’