মিয়ানমারে সাবিনাদের না পাঠানোর বিশদ ব্যাখ্যা দিলেন সালাউদ্দিন

মিয়ানমারে অলিম্পিক বাছাই ফুটবলে সাফজয়ী বাংলাদেশ দল খেলতে পারেনি। আর্থিক সংকটের কারণে আগেই সেখানে অংশগ্রহণ বাতিল করেছে বাফুফে। তবে এ নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা কম হয়নি। কেন দলকে মিয়ানমারে পাঠানো হয়নি? বাফুফের আর্থিক অবস্থা কেমন? নানান বিষয় নিয়ে বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন সংবাদ সম্মেলনে সবকিছু পরিষ্কার করেছেন। সোমবার বাফুফে ভবনে আয়োজিত এই সংবাদ সম্মেলনে অন্যতম সহসভাপতি কাজী নাবিল আহমেদ ও সদস্য মাহফুজা আক্তার কিরণও উপস্থিত ছিলেন।

মিয়ানমারে দল না পাঠানোর যে ব্যাখ্যা দিলেন...

দলকে পাঠাতে পারিনি। কারণটা হলো অর্থ সংকট। আমাদের সাধারণ প্রোগ্রাম করতে লাগে বছরে ৬০ কোটি টাকার ওপরে। আমাদের আছে ৩০ কোটির ওপরে। এই যে দল যায়নি, এটা আসলে ভুল বোঝাবুঝি। অলিম্পিক আমাদের দাওয়াত (বাছাই পর্ব খেলতে) দিয়েছে, আশা করেছিলাম অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশন থেকে সাহায্য পাবো। কথা বললাম শাহেদের (বিওএ মহাসচিব) সঙ্গে। তিনি বললেন টাকা দেবেন না ওরা। আরও বললেন, প্রয়োজনে দল যাবে না। ক্রীড়া মন্ত্রণালয় থেকেও আশা দেখতে পাইনি।

মাঝে মেয়েরা অনুশীলন বর্জন করেছিল!

মেয়েরা কয়েক দিন আগে এসে কিছু চাহিদা জানিয়ে গিয়েছিল। শুধু একটি জায়গায় যৌক্তিক মনে হয়নি। প্রথম চাওয়া হলো পাঁচগুণ বেতন বাড়াতে হবে। দ্বিতীয়ত, গিয়ার্স দিতে হবে। বিদেশি বুট দিতে বললো। বলেছে ম্যাচ ফি ও বোনাস দিতে। খাবারের মানও ভালো করার দাবি ছিল।

ওরা যে পাঁচটি দাবি দিয়েছে, তা যৌক্তিক, শুধু ৫ গুণ বেতন বাড়ানো ছাড়া। সেটা আলোচনা সাপেক্ষ। সব মিলিয়ে দেখি খাবারে এক কোটি টাকার বেশি আসে। বুটে আসে ২০ থেকে ২৫ লাখ টাকা। আমি মনে করি প্রকৃত চাহিদা। তারা একপর্যায়ে ট্রেনিং করা বন্ধ করলো। আমি প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম নিজে থেকেই দ্বিগুণ বেতন দেবো। অন্তত সমাধান না হওয়া পর্যন্ত। তাদের ডেকে বলেছি অনুশীলন বন্ধ করলে তোমাদের ক্ষতি হবে। আমি চেষ্টা করছি কীভাবে সবকিছু আয়োজন করা যায়।

এরমধ্যে অর্থ মন্ত্রণালয়ে স্থগিত আছে আমাদের ডিপিপি (উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব)। যাহোক, ওরা ট্রেনিং শুরু করেছে। এখন ফান্ড না থাকলে বেতন বাড়াবো কীভাবে!

মেয়েরা চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর মানিক (সহসভাপতি আতাউর রহমান মানিক) টাকা দিয়েছেন। সালাম (সিনিয়র সহসভাপতি সালাম মুর্শেদী) পে-অর্ডার করে রেডি আছেন। বিসিবির খবর জানি না। 

সৌদি আরবে জামালদের অনুশীলন..

বাংলাদেশের মাঠে কেন ট্রেনিং করাইনি, এমন প্রশ্ন এসেছে। এখানে একটা মাঠ বের করে দেখান তো, যেখানে ট্রেনিং সুবিধাদি আছে। আমি ঢাকা বা আশপাশে কোনও ভালো মাঠ পাইনি। সিলেটের মাঠ ৬ সপ্তাহ তৈরি করে ঠিক করেছি। সৌদি বা কাতারে পাঠানো যায় কিনা চেষ্টা করছি। কাতারে হয়নি। অনেকে বলে, মুখে বলে কাজ করি না। যখন সৌদি গেছে তখন কিছু বলে না। এটা আমাকে আঘাত করে। আমরা এখানে কাজ করে বেতন পাই না। দেশের জন্য করি। কোনও কোনও মিডিয়ায় বলা হয়েছে ডুগডুগি বাজাই। এটা আসলে মিডিয়ার ভাষা নয়। এটা আসলে যাত্রা।

আমি দেশকে ভালোবাসি। আমি একজন মুক্তিযোদ্ধা। দেশের জন্য কাজ করে যাচ্ছি। এই ১০ বছরে লিগ বন্ধ হয়নি। আমি তো মাঠে গিয়ে খেলতে পারবো না। 

এরপর সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তর দিতে হয়েছে বাফুফের চতুর্থবারের সভাপতিকে।

মেয়েদের পাঠানোর সময় তো ছিল আপনাদের...

এক কোটি টাকা জোগাড়ের ক্ষমতা নেই, কেন নেই! ২০ থেকে ২৫ কোটি টাকা তো জোগাড় করি। ওই যে কুয়া থেকে পানি তুলতে গিয়ে তো একসময় তা শেষ হয়ে যায়। আমাকে তো কেউ দিতেও চায় না। আমাদের তো সুনাম নেই। মিডিয়াতে সুনামের চেয়ে বদনাম বেশি। এরমধ্যে আজ ৮ মাস ধরে ডিপিপি দিয়ে আসছি। হয়ে যাবে বলে শুনেছি। এখন অলিম্পিকের টাকা কীভাবে তুলবো। কারও কারও কাছে চাইলে তো অর্থনৈতিক সংকটের কারণে দেয়নি। নানান সংকট দেখিয়েছে।

হাল ছেড়ে দেওয়ার চিন্তা করছেন কিনা...

পুরো দেশ এটা সম্পর্কে অবহিত। আমার কাছে মনে হয় এটা ভালো দল। জাতি জানে সমস্যা কী। টিভিতে দেখলাম ওমুক এটা-ওটা বিক্রি করবে। এখন দল তো ২৪ এপ্রিল (এএফসি অনূর্ধ্ব-১৭ দল সিঙ্গাপুর যাবে) যাবে, দেখি কে কী করতে পারে। আমি তো এটার যাওয়া ও খাওয়ার ব্যবস্থা করছি। ফুটবল একার পক্ষে এগিয়ে নেওয়া সম্ভব নয়। সবাইকে নিয়ে করতে হয়। ইতালির মতো দল বিশ্বকাপে খেলতে পারে না।

এখানে যদি সবাই একসঙ্গে না হতে পারি, আমি কেন, যাকে আনেন না আনেন, অসুবিধা নেই। যদি ভালো করতে পারে তাহলে চেয়ার পাবে। রাস্তায় রাস্তায় টুকিয়ে টুকিয়ে টাকা উঠানো আমার ডিউটি নয়।

ইমেজ সংকটে ভুগছে বাফুফে...

আমি পুরোপুরি একমত না আপনার সঙ্গে। আমি বলছি না যে ইমেজ সংকট নেই। আমি বলছি ফান্ডের ইস্যু যেটা আছে তার সমাধান হওয়া উচিত। একটা উদাহরণ দেই। এখানে এসে দেখি খেলা হয় না নিয়মিত। ১২ বছরে খেলা হয়েছে নিয়মিত। কিছু খেলোয়াড় এসেছিল আমার বাসায়। তাদের বলেছি এখানে থাকতে মন চায় না। ওরা বলেছে এই কাজ করবেন না। আপনার কারণে আমাদের গাড়ি আছে।

আমি মনে করি না ইমেজের সংকট আছে। আমি যা অনুভব করি আপনারা চেষ্টা করছেন যে আমাদের ইমেজটা না থাকে! 
ওরা (মেয়েরা) জেতার পর মিডিয়াতে ওদের বাড়ির কথা আসে। আমি যে বছরে আড়াই কোটি টাকা দিয়ে টেকনিশিয়ান দিয়ে খেলাচ্ছি তা আসে না। আপনারা চাইছেন কতটুকু সমালোচনা করা যায়। আপনারা তো সাহায্য করছেন না! এটা আমার বাবার চেয়ার না। সবসময় থাকবে না। যে কেউ আসতে পারে। এটা কোনও ভাষা হলো, জাতীয় মিডিয়া বলছে বসে বসে ডুগডুগি বাজাচ্ছি। এটা আঘাত করে আমাকে।

বাফুফেকে ফিফা ও এএফসির বরাদ্দ...

এএফসি বছরে সাত কোটি টাকা দেয়। ফিফা ১৫ কোটি টাকা দেয়। ওখানে কিছু কন্ডিশন আছে। ওরা বলে দেয় প্রশাসন ও  কোচের বেতনসহ বছরে ৯ কোটি ৪০ লাখ টাকা ব্যয় করবে।

ছেলেদের অ্যাকাডেমির জন্য ১ কোটি ৭০ লাখ টাকা এবং মেয়েদেরও একই টাকা বরাদ্দ। এরপরও আমি বাইরে থেকে টাকা আনি। ৩০ কোটি টাকা ঘাটতি পড়ে। এখানে ফিফার কর্মকর্তা আছেন। তিনিও কোয়েরি করেন।