‘ফুটবল খেলতাম বলে বড় ভাই কথাই বলতেন না’

ফুটবল ক্যারিয়ার গড়তে অনেকে অনেক রকম ত্যাগ স্বীকার করেন। তবে মেহেদী হাসান রয়েলের ব্যাপারে সেটা ঘটেছে একটু ব্যতিক্রম ভাবে। ফুটবলে আসতে চাইলেও বড় ভাই খালেদুর রহমান টিটো তাতে সায় দিচ্ছিলেন না। পড়ালেখাতেই তার আগ্রহ ও অগ্রাধিকার ছিল বেশি। এই কারণে কয়েক বছর তো ছোট ভাইয়ের সঙ্গে কথাও বলেননি! তার পরেও নিজের একাগ্রতা আর জেদের কারণে হাল ছেড়ে দেননি রয়েল। ফুটবলকে আঁকড়ে ধরে এগিয়ে গেছেন। তাতে হয়েছেন সফলও।

নেপালে তিন জাতি ফুটবল প্রতিযোগিতাকে সামনে রেখে ঘোষিত দলে ডাক পাওয়াদের অন্যতম এখন মুক্তিযোদ্ধা ক্রীড়া সংসদের এই স্ট্রাইকার! মজার বিষয় হলো, মেহেদী হাসান রয়েলের জাতীয় দলে ডাক পাওয়ার খবরে এখন মন গলেছে বড় ভাই টিটোর। পত্রিকা-টেলিভিশনে ছোট ভাইয়ের প্রচার দেখে এখন নিজেই খুব খুশি।

মানিকগঞ্জে বড় ভাইয়ের বাসা থেকে ২৫ বছর বয়সী রয়েল বাংলা টিবিউনকে  বলেছেন, ‘পরিবার থেকে বাধা পেয়েছি। বড় ভাই পড়াশোনা নিয়ে কঠোর ছিল। বলতো ভালো ফল করলে ল্যাপটপসহ অন্য পুরস্কার দেওয়ার কথা। কিন্তু ফুটবল খেলায় তার অনাগ্রহই বেশি ছিল। বলতে গেলে সহযোগিতা করেনি। তার ভালো লাগতো না। দুই থেকে তিন বছর তো এই কারণে কথাই বলেনি। এখন জাতীয় দলে ডাক পেয়েছি। সব জায়গায় দেখেছে এই খবর। এখন তার মন গলেছে, সে খুব খুশি।’

মাগুরার মোহাম্মদপুরে রয়েলদের বাড়ি। ১০ বছরের ক্যারিয়ারে তৃতীয় বিভাগের দীপালি যুব সংঘ দিয়ে শুরু। তারপর বিজেএমসি ও বাড্ডা জাগরণী হয়ে মুক্তিযোদ্ধায় থিতু হয়েছেন তিন বছর হলো। এবারের লিগে তার গোল সংখ্যা দুটি।

কিন্তু ফুটবলে থিতু হওয়ায় শুধু বড় ভাই কথা বলেননি এমন নয়। অনেক ত্যাগ স্বীকারও করতে হয়েছে কুষ্টিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের এলএলবিতে পড়ুয়া রয়েলকে, ‘ফুটবল খেলতে গিয়ে অনেক ত্যাগ স্বীকার করতে হয়েছে। কষ্ট করেই এই পর্যন্ত এসেছি, আর্থিক কষ্টই বেশি ছিল। এছাড়া অন্য কষ্ট তো ছিলই, সেগুলো আমি আসলে বলতে চাইছি না।’

ডাক পেলেও রয়েলের পজিশনে সুমন রেজা, মাহবুবুর রহমান সুফিল ও মতিন মিয়া আছেন। এখন তাদের ছাপিয়ে জেমি ডের একাদশে জাগয়া করে নেওয়াটা বেশ কঠিন। রয়েল অবশ্য সেটি বুঝতে পারছেন, ‘তাদের সঙ্গে লড়াই করে এগিয়ে যেতে হবে। আমি আমার সর্বোচ্চ চেষ্টা করবো। যদি একাদশে সুযোগ পাই, তাহলে মূল দলে খেলতে পারলেই মনে করবো আমার পরিশ্রম স্বার্থক হয়েছে।’

জাতীয় দলে ডাক পাওয়া নিয়ে এলাকাতে আজ সংবর্ধনাও দেওয়ার কথা আছে রয়েলকে। এখন স্থানীয়দের এমন অনুপ্রেরণা ভবিষ্যতেও ধরে রেখে এগিয়ে যেতে চান এই স্ট্রাইকার।