ফুটবলে অনন্য উচ্চতায় মিরোনা

দেশের প্রথম নারী হিসেবে ছেলেদের ফুটবল দলের কোচ হয়ে ইতিহাস গড়েছেন মিরোনাঅ্যাথলেটিকসের পাশাপাশি ফুটবল খেলতেন মিরোনা। দীর্ঘ দিন মেয়েদের জাতীয় দলে খেলেছেন তিনি। আর এখন নিজেকে নিয়ে গেছেন অনন্য উচ্চতায়। দেশের প্রথম নারী হিসেবে ছেলেদের ফুটবল দলের কোচ হয়েছেন মিরোনা। পেশাদার ফুটবল লিগের দ্বিতীয় স্তর বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়নশিপ লিগে সিটি এফসি’র প্রধান কোচের দায়িত্ব পেয়েছেন তিনি।   

২০০৮ সালে জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপে খুলনা দলের হয়ে তার ফুটবল-জীবন শুরু। পরের বছর সুযোগ পান মেয়েদের জাতীয় দলে। ২০১৬ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ দলকে প্রতিনিধিত্ব করা মিরোনার ছেলেদের কোচ হওয়ার গল্পটা বেশ চমকপ্রদ। গত বছর এএফসি ‘বি’ লাইসেন্স করা মিরোনা কয়েক বছর আগে চাকরি পেয়েছেন বাংলাদেশ নৌবাহিনীতে। আর দেশের ফুটবলে নবাগত সিটি এফসি গড়ে উঠেছে নৌবাহিনী সংশ্লিষ্ট কয়েকজন ব্যক্তির হাত ধরে।

কিন্তু দল গড়ার পরই সমস্যায় পড়ে যায় সিটি এফসি। ফিফার নিয়ম অনুযায়ী, পেশাদার লিগের দ্বিতীয় স্তরের দলের কোচের অন্তত ‘বি’ লাইসেন্স থাকতে হবে। তবে সিটি এফসির কোচের ছিল ‘সি’ লাইসেন্স। তাই দলটি কোচ হওয়ার প্রস্তাব দেয় মিরোনাকে। এমন লোভনীয় প্রস্তাব তিনি হাতছাড়া করেননি।    

এখন দলের প্রধান কোচ হিসেবে কোচিং স্টাফদের তালিকায় সবার ওপরে থাকে তার নাম। ছেলেদের দলের দায়িত্ব পেয়ে রোমাঞ্চিত মিরোনা বাংলা ট্রিবিউনকে বললেন, ‘এই অনুভূতি অন্যরকম। কখনও চিন্তাই করিনি ছেলেদের দলের কোচ হবো, তাদের সরাসরি কোচিং করাবো। এমন সুযোগ পেয়ে আমি খুব খুশি। তবে ছেলেদের না মেয়েদের কোচিং করাচ্ছি সেটা আমার কাছে বড় বিষয় নয়। সবার আগে আমি একজন কোচ, আর কাজটা আমি দারুণ উপভোগ করি।’

মিরোনার উচ্চতা ৪ ফুট ৮ ইঞ্চি। এত কম উচ্চতার জন্য তাকে অনেক সমস্যায় পড়তে হয়েছে। তবে মনের জোর আর কঠোর পরিশ্রমে আজ তার অবস্থান অনেক ওপরে। মিরোনা জানালেন, ‘অনেকেই প্রথম দেখায় আমার যোগ্যতা সম্পর্কে জানতেই চাইতো না। আমাকে দেখে মুখ ঘুরিয়ে নিতো তারা। উচ্চতার কারণে আমার বদলে অন্য কাউকে বেছে নিতেন কোচ। যোগ্যতা প্রমাণের জন্য আমাকে তাই একটু বেশিই পরিশ্রম করতে হয়েছে।’

কোচিং লাইসেন্স করার সময় বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের টেকনিক্যাল ও স্ট্র্যাটেজিক ডিরেক্টর পল স্মলির পরামর্শ মেনে আজ তিনি ইতিহাসের পাতায়। মিরোনার স্মৃতিচারণ, ‘‘কোচিং কোর্স করার সময় আমরা কোথায় কাজ পাবো এমন প্রশ্ন উঠেছিল। তখন পল স্যার বলেছিলেন, ‘তোমাকে কাজ খুঁজে নিতে হবে, কোথায় কাজ আছে বের করতে হবে।’ তার কথা মনে রেখে আজ আমি এখানে।’’

মিরোনার লক্ষ্য একাধিক। সিটি এফসিকে চ্যাম্পিয়নশিপ লিগ থেকে প্রিমিয়ার লিগে নিয়ে যেতে চান, হতে চান মেয়েদের জাতীয় দলের কোচ। তিনি জানালেন, “আমার দলকে প্রিমিয়ার লিগে নিয়ে যেতে চাই, এএফসি ‘এ’ লাইসেন্স করতে চাই। জাতীয় দলের হয়ে কাজ করার ইচ্ছেও আছে। তবে সেজন্য নিজেকে প্রস্তুত করতে হবে।”