যেভাবে শুরু মেয়েদের ফুটবলের পথচলা

মেয়েদের ফুটবলে এখন স্বর্ণালী সময়। মারিয়া-তহুরা-আঁখিদের সৌজন্যে একের পর এক সাফল্য ধরা দিচ্ছে। দক্ষিণ এশিয়ায় শিরোপার সৌরভ নিয়ে বাংলাদেশ অংশ নিচ্ছে এশিয়া শ্রেষ্ঠত্বের লড়াইয়ে। মেয়েদের ফুটবলের পথ পরিক্রমা নিয়ে বাংলা ট্রিবিউনের বিশেষ আয়োজনের আজ প্রথম পর্ব।

২০০৩ সালে বাফুফে একাদশের সদস্যরাবর্তমানে মেয়েরা সহজে ফুটবল খেলতে পারছে, বিদেশে লাল-সবুজ পতাকার প্রতিনিধিত্ব করছে। অথচ এক যুগ আগে এটা চিন্তাও করা যেতো না। বাংলাদেশে মেয়েদের ফুটবলের পথচলা শুরু হতে পারতো ১৯৭৭ সালে। সেই সময় ভারতের পশ্চিমবঙ্গ থেকে মেয়েদের একটি দলের ঢাকায় আসার কথা ছিল। তারই প্রস্তুতি হিসেবে সাবেক ফুটবলার সাহেব আলীর কোচিংয়ে অনুশীলন শুরু করে ভিকারুন্নিসা নুন স্কুলের কয়েকজন ছাত্রী। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের দলটি আসেনি। মেয়েদের ফুটবলও তাই থমকে দাঁড়ায় বাংলাদেশে।

১৯৯১ সালে শুরু হয় মেয়েদের বিশ্বকাপ ফুটবল। এরপরই সারা বিশ্বে মেয়েদের ফুটবল ছড়িয়ে দেওয়ার উদ্যোগ নেয় ফিফা। বিশ্ব ফুটবলের নিয়ন্ত্রক সংস্থা নারী ফুটবল চর্চা বাধ্যতামূলক করে দেয় সদস্য দেশগুলোর জন্য, দেওয়া হয় বার্ষিক অনুদানও।  

বাংলাদেশ অবশ্য একটু দেরিতেই আগ্রহী হয়ে ওঠে মেয়েদের ফুটবলে। সময়টা ২০০৩ সাল। সেই পশ্চিমবঙ্গ থেকে একটি দল আসে বাংলাদেশে। বাফুফে একাদশ নামে একটি দল গড়ে তোলা হয় তখন, মেয়েরা শুরু করে ফুটবল অনুশীলন।

পশ্চিমবঙ্গের দলটির সঙ্গে তিনটি ম্যাচ খেলার কথা ছিল বাফুফে একাদশের। তবে ঢাকা আর যশোরে হলেও নেত্রকোনার ম্যাচটি বাধার কারণে হতে পারেনি।

পরের বছরই মেয়েদের একটি টুর্নামেন্ট আয়োজন করে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে)। ট্রায়াল থেকে বাছাই করা মেয়েদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় শুরুতে। এরপর কমলাপুর স্টেডিয়ামে হয় টুর্নামেন্ট। কিন্তু এখন যতটা সহজে মেয়েদের টুর্নামেন্ট করা যায়, তখন ততটা সহজে আয়োজন করা যায়নি। বরং বাধা এসেছিল ভীষণ। টুর্নামেন্ট বন্ধ করতে একটি পক্ষ উঠে-পড়ে লেগেছিল, মিটিং-মিছিল করেছিল। তবে বাংলাদেশে মেয়েদের প্রথম ফুটবল প্রতিযোগিতা শেষ হয়েছিল সাফল্যের সঙ্গে।  

একসঙ্গে বাফুফে একাদশ এবং পশ্চিমবঙ্গ মহিলা ফুটবল দলসেই সময় বাফুফের মহিলা উইংয়ের ডেপুটি চেয়ারম্যান ছিলেন কামরুন্নাহার ডানা। প্রথম টুর্নামেন্ট নিয়ে তার স্মৃতিচারণ, ‘মেয়েদের ফুটবল বন্ধ করার জন্য আমাদের ওপর চাপ সৃষ্টি করা হয়েছিল। আমাকে তো মৃত্যু হুমকি পর্যন্ত দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু আমি দমে যাইনি। সবাইকে সংগঠিত করে মেয়েদের ফুটবল মাঠে নামিয়েছি। আমরা জানতাম, শুরু করতে না পারলে পিছিয়ে পড়বো। তাই কোনও বাধাতেই হতোদ্যম হইনি, মেয়েদের জন্য টুর্নামেন্ট আয়োজন করেছি।’

বাফুফের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক আনোয়ারুল হক হেলাল বললেন, ‘তখন সারা পৃথিবী চাইছিল মেয়েদের ফুটবলের সম্প্রসারণ। আমরাও মহিলা ফুটবল শুরু করি। ২০০৩ সালে পশ্চিমবঙ্গ থেকে একটি দল আসে। এরপরই বাচ্চু ভাইকে (সিরাজুল ইসলাম) চেয়ারম্যান করে মহিলা উইং গঠন করা হয়। ২০০৪ সালে মেয়েদের প্রথম টুর্নামেন্ট আয়োজন করি আমরা।’

ডানার মতো হেলালও জানালেন বাধা-বিপত্তির কথা, ‘শুরুতে অনেক বাধা এসেছিল। বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে টুর্নামেন্ট আয়োজন করা যায়নি। তাই খেলা হয়েছে কমলাপুর স্টেডিয়ামে। মেয়েদের ফুটবল বন্ধ করতে স্লোগান-মিছিল-মিটিং হলেও প্রশাসন পাশে ছিল আমাদের। আমরা মনে করেছি, ভয় পেলেই ওরা চেপে বসবে। তাই শত বাধা পেরিয়ে টুর্নামেন্টের আয়োজন করি। এরপর আর মেয়েদের ফুটবলকে পেছনে ফিরে থাকাতে হয়নি।’

কর্মকর্তারা ভয়কে জয় করেছিলেন বলেই আজ মেয়েদের ফুটবল সাফল্যে রঙিন। ভাগ্যিস তারা ভয় পাননি সেদিন!