না ফেরার দেশে জাতীয় দলের সাবেক ফুটবলার তানভীর

তানভীর চৌধুরীজাতীয় দলের সাবেক ফুটবলার রিয়াজ আলম খান চৌধুরী ওরফে তানভীর চৌধুরীর মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে দেশের ফুটবলে। জেলার কৃতি সন্তানের এ মুত্যতে মুহ্যমান হয়ে পড়েছেন নাটোরের ক্রীড়াঙ্গনও, অশ্রুসিক্ত হয়েছেন তার কোচ ও নাটোর জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাবেক সাধারণ সম্পাদক আল মামুন। ৪০ বছর বয়সে তানভীরের অকাল মৃত্যু মেনে নিতে পারছেন না মামুন, অভিযোগ তুলেছেন সঠিক চিকিৎসা না হওয়ার।

মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে নাটোর সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তানভীর চলে গেছেন না ফেরার দেশে। একসময়ের দুর্দান্ত এই ফুটবলারের গতি আর খেলার চমকে মুগ্ধ হতেন ফুটবলপ্রেমীরা। কিন্তু একটি সড়ক দুর্ঘটনার পর থেকে পঙ্গুত্ববরণ করা তানভীর মৃত্যুর সঙ্গে লড়াইয়ে হার মানলেন। তিনি রেখে গেছেন স্ত্রী শাহ্দিল-ই-আফরোজ, দুই মেয়ে তাজবিতা ও তানবিতা এবং অসংখ্য গুনগ্রাহীকে।

২০০৩-০৪ মৌসুমে নিটল টাটা ফুটবলে সেরা খেলোয়াড় হিসেবে তানভীর একটি মোটরসাইকেল পুরস্কার পেয়েছিলেন। এক সময়ের জাতীয় দলের দাপুটে এই ফুটবলার ১৯৯৫ সাল থেকে ফার্স্ট ডিভিশন লিগ দিয়ে ক্যারিয়ার শুরু করেন। এশিয়া কাপ খেলার মাধ্যমে ১৯৯৮ সালে জাতীয় দলে তার অভিষেক হয়, খেলতেন মাঝমাঠের বাঁ দিকে। ভারত, পাকিস্তান, নেপাল, শ্রীলঙ্কা, ওমান, উজবেকিস্তান, কাতার, লন্ডনসহ প্রায় ১৪টি দেশের মাটিতে জাতীয় দলের হয়ে বিভিন্ন ফুটবল টুর্নামেন্টে খেলেছেন তানভীর।

ক্লাব ফুটবলেও ছিল তার বিচরণ। মুক্তিযোদ্ধা ক্রীড়া চক্র, ফেনী সকার, ব্রাদার্স ইউনিয়ন, আবাহনী ক্রীড়া চক্র, শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্রের মতো নামিদামি ক্লাবে খেলে তিনি অসাধারণ কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখেছেন। ২০০৫ সালে শেখ রাসেলের প্রথম প্রতিষ্ঠার বছরেই রানার্সআপ ট্রফি জিতিয়ে দেওয়া ছিল তাঁর ক্যারিয়ার সেরা অবদান।  

কোচ আল মামুন বলেন, ‘ছোটবেলা থেকেই তানভীর আমার কাছে ফুটবল খেলা শিখেছে। কোনও দিন আমার কোনও কথার অবাধ্য হয়নি।’ তিনি আরও জানান, অত্যন্ত মেধাবী আর পরিশ্রমী ছিলেন তানভীর।

স্ত্রী সন্তানদের সঙ্গে তানভীরএক প্রশ্নের জবাবে অশ্রুসিক্ত মামুন জানান, তিন বছর আগে তানভীরকে ঢাকা নিয়ে যেতে তার কাছে এসেছিলেন ভিক্টোরিয়া ক্লাবের কোচ। তিনি এই মিডফিল্ডারকে তার দলে খেলার প্রস্তাব নিয়ে এসেছিলেন। এর বাইরেও ঢাকার বিভিন্ন দল তাকে দলে নেওয়ার জন্য বারবারই যোগাযোগ করছিল। খেলার জন্য ঢাকায় যাওয়ার পথেই তানভীর সড়ক দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হন।

২০১৫ সালের ১৯ মে ভোরের দিকে দেশ ট্রাভেলসে ঢাকা যাওয়ার পথে গুরুদাসপুরের কাছিকাটা এলাকায় বিপরীত দিক থেকে আসা একটি ট্রাকের সঙ্গে তার বাসের সংঘর্ষ হয়। এসময় অন্য যাত্রীদের মতো তানভীরও মারাত্মক আহত হন। দীর্ঘ প্রায় সাড়ে ৩ বছর পঙ্গু অবস্থায় নাটোর, রাজশাহী ও ঢাকায় চিকিৎসা নিচ্ছিলেন এই মিডফিল্ডার। অবশেষে গত রাতে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়লে পরিবারের সদস্যরা তাকে নাটোর সদর হাসপাতালে ভর্তি করে। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি সকাল ১১টার দিকে মারা যান।

মামুন অভিযোগ করেন সঠিক চিকিৎসার অভাবেই তানভীর মারা গেছেন। তিনি বলেন, ‘তানভীরের পরিবারের অবস্থা খারাপ নয়। কিছুদিন তাকে তারা রাজশাহী ও ঢাকায় চিকিৎসা করালেও অধিকাংশ সময়ই নাটোর সদর হাসপাতালে তাকে চিকিৎসা নিতে হয়েছে। অনেক সময় চিকিৎসাধীন অবস্থায় রিলিজ ছাড়াই পরিবারের সদস্যরা তাকে বাড়ি নিয়ে যেত। তারা তাকে উন্নত চিকিৎসা করালে হয়ত তার এই অকাল মৃত্যুবরণ করতে হতো না।’

তানভীরের সমসাময়িক ফুটবলার আশরাফুল বাচ্চু জানান, তানভীর অত্যন্ত দ্রুতগতির একজন খেলোয়াড় ছিলেন। তার প্রচণ্ড গতির কাছে প্রতিপক্ষের রক্ষণভাগ ভেঙে চুরমার হয়ে যেত।

নাটোর ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক মুকুল জানান, তানভীরের অকাল মৃত্যুতে নাটোরসহ দেশের ফুটবল পরিবারে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। এমন উদীয়মান ফুটবলারকে হারিয়ে নাটোরের ফুটবল অঙ্গন শোকে মুহ্যমান। তিনি নিহতের আত্মার মাগফিরাত কামনা ও শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি সমবেদনা প্রকাশ করেন।

বাদ এশা নাটোর কেন্দ্রীয় গোরস্থানে জানাযা শেষে গাড়িখানা গোরস্থানে তাকে দাফন করা হয়েছে বলে পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে।

বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) বিজ্ঞপ্তিতে প্রেসিডেন্ট কাজী মোহাম্মদ সালাউদ্দিন, সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট, ভাইস প্রেসিডেন্টসহ অন্য কর্মকর্তারা তানভীরের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন।