প্রাণনাশের আতঙ্ক নিয়ে বাংলাদেশ ছেড়েছিলেন হাথুরুসিংহে

বাংলাদেশের সাবেক প্রধান কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে রবিবার জানালেন, নিজের জীবন হারানোর ভয় নিয়ে দেশ ছেড়ে পালিয়েছিলেন। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের পর ওই সময় বাংলাদেশের রাজনীতিতে অস্থিরতা বিরাজ করছিল। তার মধ্যে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের কাছ থেকে বরখাস্তের খবর পেয়ে প্রাণ যায় যায় অবস্থায় চলে যান এই লঙ্কান।

অসদাচরণ ও শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগে হাথুরুসিংহেকে বরখাস্ত করে বিসিবি। সেসব অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন লঙ্কান কোচ। ওইসময় কী ঘটেছিল, সেটা নিয়ে রবিবার মুখ খুললেন কোড স্পোর্ট-এর কাছে। 

অস্ট্রেলিয়ার আন্তর্জাতিক এই গণমাধ্যমের কাছে হাথুরুসিংহে বলেছেন, “আমার উদ্দেশ্যে বাংলাদেশের সিইওর শেষ কথা ছিল, আমার চলে যাওয়া উচিত। সে বলেছিল, ‘বোর্ডের কাউকে বলার দরকার নেই, আপনার কি টিকিট আছে?’ এটি আমার জন্য একটি সতর্কতা সংকেত ছিল। তখনই আমি একটু ভয় পেয়ে যাই।”

নিরাপত্তার অভাব বোধ করছিলেন তিনি, “সাধারণত সেই দেশে বাইরে বের হলে আমার একজন ড্রাইভার এবং একজন গানম্যান সঙ্গে থাকতো। সে বলেছিল, ‘আজ কি আপনার গানম্যান ও ড্রাইভারকে এনেছেন?' আমি বললাম, না, 'শুধু ড্রাইভার আছে।"

তারপরই আতঙ্ক আরও বেড়ে যায় হাথুরুসিংহের, “আমি সরাসরি ব্যাংকে গিয়েছিলাম, দেশ ছাড়ার টাকা তোলার চেষ্টা করছিলাম। আমি যখন ব্যাংকে ছিলাম তখন টিভিতে একটি ব্রেকিং নিউজ প্রচার হচ্ছিল; ‘চন্ডিকাকে বরখাস্ত করা হয়েছে, একজন খেলোয়াড়কে লাঞ্ছিত করার কারণে।’ 

ওই সময় ব্যাংক ম্যানেজার এগিয়ে আসেন, “যখন এই খবর সামনে এলো, তখন ব্যাংক ম্যানেজার বললেন, ‘কোচ, আমাকে আপনার সঙ্গে যেতে হবে। রাস্তায় মানুষ আপনাকে দেখলে সেটা আপনার জন্য নিরাপদ নয়।”

বিমানবন্দরেও নিজেকে গোপন রেখেছিলেন হাথুরুসিংহে, ‘তখন আমি আতঙ্কিত, কারণ আমাকে দেশ থেকে বের হতে হবে। আমার এক বন্ধু আমাকে সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্সের মধ্যরাতের ফ্লাইট ধরতে বিমানবন্দরে নিয়ে গিয়েছিল। আমি টুপি ও হুডি পরে ছিলাম। অনিরাপদ লাগছিল নিজেকে।’

ওই সময় বিমানবন্দর থেকে গ্রেপ্তারের ঘটনাও অহরহ ঘটছিল, সেসব মনের কোণে উঁকি দিচ্ছিল হাথুরুসিংহের, ‘দেশ ছেড়ে পালাতে চেষ্টা করার জন্য তারা আমাকে বিমানবন্দরে গ্রেপ্তার করতে পারতো। এমন একটি ঘটনাও ঘটেছে, যখন আগের সরকারের একজন মন্ত্রী দেশ ছেড়ে পালানোর চেষ্টা করছিলেন এবং বিমানটি রানওয়েতে থামানো হয়েছিল। সেখান থেকেই তাকে নামিয়ে এনেছিল। এই সব আমার মনে ঘুরপাক খাচ্ছিল তখন। তারপর প্রবেশপথের এক্স-রে মেশিনে যাচাই বাছাই শেষে বিমান বাহিনীর একজন কর্মকর্তা আমাকে বললেন, ‘আমি দুঃখিত কোচ, আপনি চলে যাচ্ছেন, আমি খুবই দুঃখিত (আবেগপ্রবণ হয়ে পড়ে)।’ আমি আমার জীবনের জন্য ভীত ছিলাম এবং তিনি বলছিলেন যে আমি তাদের দেশের জন্য কিছু করেছি।”