‘প্রিয়’ প্রতিপক্ষকে নিয়ে রবিবার শুরু হচ্ছে বাংলাদেশের টেস্ট মিশন

গত কয়েক বছর ধরে জিম্বাবুয়ে ক্রিকেটে একটু একটু করে পিছিয়েই গেছে। এক দশক ধরেই দলটি খর্বশক্তির দলে পরিণত হয়েছে। বাংলাদেশের কাছে জিম্বাবুয়ে এখন অনেকটাই সহজ প্রতিপক্ষ। কাগজে-কলমে বাংলাদেশ এগিয়ে থাকলেও মাঠের পারফরম্যান্স অবশ্য শেষ কথা। সাম্পতিক সময়ে কিছুটা ছন্নছাড়া অবস্থায় আছে লাল-সবুজ দল। প্রিয় প্রতিপক্ষ জিম্বাবুয়েকে পেয়ে নিশ্চিতভাবেই জ্বলে ওঠার অপেক্ষায় নাজমুল হোসেন শান্তরা। রবিবার সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে বাংলাদেশের চলতি বছরের টেস্ট মিশন শুরু হচ্ছে। সকাল ১০টায় প্রথম টেস্টটি সরাসরি সম্প্রচার করবে বিটিভি।

লাল বলের ক্রিকেট দুই দলের সর্বশেষ দেখা হয়েছে ২০২১ সালে। জিম্বাবুয়ের মাটিতে সেই টেস্ট সিরিজেও বাংলাদেশ জিতেছিল। বাংলাদেশের বিপক্ষে সর্বশেষ ২০১৮ সালে টেস্ট জিতেছিল জিম্বাবুয়ে। সেই টেস্টটি হয়েছিল সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে, সেটি ছিল সিলেট ভেন্যুর প্রথম টেস্ট। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে বাংলাদেশ হোম এবং অ্যাওয়ে মিলিয়ে ১৮টি টেস্ট খেলেছে। এতে বাংলাদেশ জিতেছে ৮টিতে, জিম্বাবুয়ের জয় ৭ টেস্টে। ড্র হয়েছে তিন টেস্ট। 

শান্তর দল ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ শেষ করেই টেস্ট প্রস্তুতিতে নেমেছে। হাতে ছিল ছয়-সাতদিন সময়। এই সময়টুকুকে যথাযথভাবে কাজে লাগাতে পেরেছেন বলে মনে করেন অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত, ‘আমার মনে হয় খুব স্পেসিফিক এবং খুব কোয়ালিটি প্র্যাকটিস হচ্ছে। ফ্যাসিলিটি ওয়াইজ দারুণ, উইকেটও ভালো ছিল। আমরা যেরকম উইকেটে প্র্যাকটিস করতে চেয়েছি, ঐ ধরনের ফ্যাসিলিটিস গুলো পেয়েছি।’

অনুশীলনে অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত। ব্যাটিং ইউনিট, বিশেষ করে টপ অর্ডার নিয়ে এখনও কনসার্ন থেকেই যাচ্ছে। মাহমুদুল হাসান জয়, সাদমান ইসলাম, জাকির হাসান, জাকের আলী অনিক, মুমিনুল হক, মুশফিকুর রহিমরা প্রিমিয়ার লিগে খুব একটা ভালো ফর্মে ছিলেন না। বেশ কয়েকজন ব্যাটারের তো ১৫ ইনিংস ধরে কোনও হাফ সেঞ্চুরি নেই। তারপরও নেতৃত্বের দায়িত্বে থেকে সতীর্থদের ওপর আস্থা রাখতে চান শান্ত, ‘ধারাবাহিকতা টেস্ট ক্রিকেটে খুব গুরুত্বপূর্ণ। আমি নিজেই গত বছর ১৩-১৪টি ইনিংসে থিতু হয়েও আউট হয়েছি। ৩০, ৪০ বা ৪৫ রানে থেমে গেছি। এই ফরম্যাটে এমন ইনিংস কাম্য নয়। কারণ আপনি যখন কঠিন সময়টা পার করে ফেলেন, তখন সেই ইনিংসটা বড় করা দরকার। আমি নিজের ভুল নিয়ে কাজ করছি, করবো। লক্ষ্য থাকবে এই বছর যেন দলের জন্য বড় অবদান রাখতে পারি।’

যদিও সমস্যা সমাধানে কাজ করছেন বলে জানালেন শান্ত, ‘আমি নিজেও কাজ করেছি এই জায়গায় এবং সবাই চেষ্টা করছে কীভাবে দলকে কন্ট্রিবিউট করা যায়। আমি বিশ্বাস করি, যদি আরও সুযোগ দেওয়া হয়, তাহলে প্লেয়ারদের মধ্য থেকে ভালো ফল পাওয়া সম্ভব।’

নিজের দলকে নিয়ে শান্তর প্রত্যাশা—জেতার মানসিকতা নিয়ে মাঠে নামা, ‘আমরা প্রত্যেকটা ম্যাচ যেন জয়ের জন্য খেলি। এখানে কোন সেলফ ক্রিকেট খেলার ইচ্ছা আমাদের কারোর নাই। যেভাবে ওয়েস্ট ইন্ডিজের সঙ্গে জিতেছি, ওইরকম বডি ল্যাঙ্গুয়েজ, আগ্রাসন সবসময় থাকতে হবে।’

এদিকে বাংলাদেশের বিপক্ষে ভয়-ডরহীন ক্রিকেট খেলার কথা বলেছেন জিম্বাবুয়ের অধিনায়ক ক্রেইগ আরভিন, ‘আমরা নির্ভীক মানসিকতা নিয়ে খেলতে চাই। দলের ছেলেরা বাংলাদেশের কন্ডিশনের সঙ্গে অভ্যস্ত নয়। তবে সিরিজ নিয়ে দীর্ঘ প্রস্তুতি তাদের নিজেদের মেলে ধরার জন্য আত্মবিশ্বাস এনে দিয়েছে। ভিন্ন কন্ডিশনেও টেস্ট ক্রিকেট খেলাটা উপভোগ করতে চাই আমরা।’

উপভোগের মন্ত্রটাই দলের তরুণদের মনে গেঁথে দিয়েছেন আরভিন। বর্তমান দলে সর্বোচ্চ ২৩টি টেস্ট খেলার অভিজ্ঞতা তারই। তাই সফরকারী দলটির ম্যাচ অভিজ্ঞতা বাংলাদেশের চেয়ে অনেক কম। তবে এই দলটির ওপরই আস্থা জিম্বাবুয়ে অধিনায়কের, ‘এই সিরিজ তরুণদের জন্য নিজেদের প্রমাণের দারুণ সুযোগ। টেস্ট ক্রিকেট মানসিকভাবে অনেক চ্যালেঞ্জিং, এখানে সাফল্যের জন্য দরকার মানসিক দৃঢ়তা। আমরা আমাদের শক্তির জায়গাগুলো নিয়েই কাজ করছি। উইকেট যদি পেসারদের সহায়তা করে, সেটা কাজে লাগিয়ে ম্যাচে গতি আনতে চাই।’

/আরআই/এফআইআর/