যদি নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়, দেশে তদন্তে সহযোগিতা করতে প্রস্তুত: সাকিব 

আগস্টের রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের আগে থেকেই বিতর্কের মাঝে ছিলেন সাকিব আল হাসান। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময়য় নীরব ভূমিকা পালন করেছিলেন। তার ওপর তিনি ছিলেন আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্যও। পট পরিবর্তনের পর একাধিক মামলায় জড়িয়েছে তার নাম। বর্তমানে নিরাপত্তাজনিত কারণে দেশে আসতে পারছেন না। অবশেষে সব ঘটনা নিয়ে মুখ খুলেছেন দেশসেরা এই অলরাউন্ডার। দেশের একটি ইংরেজি দৈনিক পত্রিকাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেছেন,তার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ উঠেছে সেসব থেকে নিজের নাম মুছতে যে কোনও ধরনের তদন্তে সহযোগিতা করতে প্রস্তুত তিনি।  

প্রচুর সমালোচনার মাঝেও সাকিব এতদিন চুপ ছিলেন। কিন্তু সর্বশেষ সাক্ষাৎকারে তিনি দাবি করেছেন, ব্যবসা-সংক্রান্ত কয়েকটি মামলায় তাকে বলির পাঁঠা বানানো হয়েছে, ‘আমার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের তদন্তে সহযোগিতার জন্য যা যা করা দরকার, সেসব করতে আমি প্রস্তুত।

তিনি এসময় বলেছেন, ‘যদি আমার নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়, তাহলে দেশে ফিরে পূর্ণাঙ্গ তদন্তে সহযোগিতা করতে প্রস্তুত আছি।’

দীর্ঘ সাক্ষাৎকারে অনেক কথাই উঠে এসেছে সাকিবের কথায়। টি-টোয়েন্টি থেকে অবসর নিলেও গত অক্টোবরে মিরপুরে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে টেস্ট দিয়ে সাদা পোশাককে বিদায় বলতে চেয়েছিলেন। কিন্তু পটপরিবর্তনের পর বিভিন্ন মামলা ও নিরাপত্তা শঙ্কায় তার আর দেশেই ফেরা হয়নি। সেই সাক্ষাৎকারে সাকিব বলেছেন, ‘আমি মনে করি, বাংলাদেশের হয়ে খেলার মতো যোগ্যতা আমার আছে এবং অধিকাংশ মানুষই চায় যে আমি দেশের হয়ে আরও কিছুদিন খেলে অবসর নেই। বিশ্বাস করি, আরও এক থেকে দুই বছর খেলার সামর্থ্য আমার আছে।’

খেলার সুযোগ হলে নিজের পরিকল্পনা নিয়েও জানান তিনি, ‘আমি এখনও চাই বাংলাদেশের হয়ে খেলার মাধ্যমে অবসর নিতে। যদি সুযোগ আসে, পরিকল্পনা করতে চাই একটি সিরিজ খেলবো, দুটি নাকি আরও এক বছর খেলবো। আমার সবচেয়ে বড় ইচ্ছা হলো নিজের দেশের হয়ে খেলা এবং সেই লক্ষ্য পূরণে আমি আমার সর্বোচ্চটা দিতে প্রস্তুত। এই স্বপ্ন নিয়েই এতদিন পরিশ্রম করেছি এবং সেটি পূরণে যা যা করার দরকার সব করছি। ক্রীড়া উপদেষ্টা, প্রধান উপদেষ্টা এবং বিসিবি সভাপতির সঙ্গে কথা বলে যাচ্ছি।’

এ সময় নিজের রাজনীতিতে যোগ দেওয়া সঠিক সিদ্ধান্ত ছিল কিনা না সেই ব্যাপারেও উত্তর দেন তিনি তার ভাষায়, ‘দেখুন যদি আমার রাজনীতিতে যোগ দেওয়া ভুল হয়ে থাকে, তাহলে ভবিষ্যতে যেই রাজনীতিতে আসুক না কেন, তার ক্ষেত্রেও সেটা ভুল বলে বিবেচিত হবে। তখন মনে হবে রাজনীতিতে আসা মানেই তাহলে ভুল। কিন্তু রাজনীতিতে অংশ নেওয়া যে কোনও নাগরিকের অধিকার এবং যে কেউ সেটা করতে পারে। মানুষ আপনাকে ভোট দেবে কিনা, সেটা সম্পূর্ণ তাদের সিদ্ধান্ত। কিন্তু আমি যখন রাজনীতিতে এসেছিলাম, তখনও মনে করেছি সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আজও তাই মনে করি, কারণ আমার মূল উদ্দেশ্য ছিল মাগুরার মানুষের জন্য কাজ করা।’

বিসিবি কোনওভাবেই সাকিবকে দেশে ফেরার ব্যাপারে সাহায্য করতে পারেনি। এমন প্রসঙ্গ নিয়ে সাকিব বলেছেন, ‘আমার কারও বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ নেই। আমি কারও বিরুদ্ধে ক্ষোভও পুষে রাখি না। প্রত্যেকেরই কিছু সীমাবদ্ধতা থাকে, আর এটা নির্ভর করে আপনি কোনও বিষয়কে ইতিবাচকভাবে দেখবেন, না কি জটিল করে তুলবেন তার ওপর। আমাকে গত ১৮ বছরের ভিত্তিতে বিচার করবেন, না কি গত ছয় মাসের ভিত্তিতে—সেটা আপনাদের বিষয়। যদি একপাক্ষিকভাবে দেখেন, তাহলে বিষয়টা আলাদা মনে হতে পারে, কিন্তু যদি নিরপেক্ষভাবে দেখেন, তাহলে সবকিছুই পরিষ্কার হয়ে যাবে।’