জান্নাতুল ফেরদৌস সুমনার অভিষেক হয়েছে ২০১৮ সালে। অভিষেক সিরিজে দুটি ম্যাচ খেললেও উইকেট শূন্য ছিলেন তিনি। লম্বা সময়ের জন্য জাতীয় দলের বাইরে চলে যাওয়া সুমনা কিছুদিন অস্ট্রেলিয়ার ঘরোয়া ক্রিকেটেও খেলে এসেছেন। গত বছর টি-টোয়েন্টি দিয়ে জাতীয় দলে ফিরলেও অপেক্ষায় ছিলেন ওয়ানডেতে ফেরার। অবশেষে বিশ্বকাপ বাছাইপর্ব দিয়ে ওয়ানডেতে প্রত্যাবর্তন হয়ে গেলো সুমনার। সাত বছর পর ফিরেই বল হাতে করলেন বাজিমাত। তার অফস্পিনে খেই হারিয়েছেন থাইল্যান্ডের ব্যাটাররা। নিগার সুলতানা জ্যোতির ১০১ ও শারমিন আক্তার সুপ্তার ৯৪ রানের ওপর দাঁড়িয়ে বাংলাদেশ ২৭১ রান করেছিল। সুমনা ও লেগ স্পিনার ফাহিমার ঘূর্ণিতে থাইল্যান্ডের ইনিংস থামে ৯৩ রানে। আর তাতেই বিশ্বকাপ বাছাইয়ের প্রথম ম্যাচ ১৭৮ রানের জয় দিয়ে শুরু করেছে বাংলাদেশ।
লাহোর সিটি ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন গ্রাউন্ডে আগে ব্যাটিং করে থাইল্যান্ডকে ২৭২ রানের লক্ষ্য দেয় বাংলাদেশ। কঠিন লক্ষ্যে খেলতে নেমে লেগ স্পিনার ফাহিমার তোপে পড়ে থাইল্যান্ডের টপ অর্ডার। প্রথম তিন ব্যাটারকে ফেরানোর পর দায়িত্ব তুলে দেন সাত বছর পর আন্তর্জাতিক ওয়ানডে খেলতে নামা সুমনা। একে একে ৫ থাই ব্যাটারকে তুলে নেন তিনি। ক্যারিয়ারে কোন উইকেট না থাকা সুমনা ৭ রান খরচায় তুলে নেন ৫ উইকেট! এর আগে ফাহিম চার উইকেট তুলে নিলেও থাইল্যান্ডের শেষ ব্যাটারকে ফিরিয়ে তিনিও তুলে নেন ৫ উইকেট।
বাংলাদেশের বোলারদের মধ্যে এর আগে দু’জন ৫ উইকেট নিয়েছিলেন। ২০১৮ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে ২০ রান খরচায় প্রথমবার ৫ উইকেট শিকার করেন খাদিজাতুল কুবরা। এরপর ২০২১ সালে নাহিদা আক্তার জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ৫ উইকেট নিয়েছেন। তিন বছর পর একই ম্যাচে বাংলাদেশের আরও দুই ক্রিকেটার ফাহিমা-সুমনা এই কীর্তি গড়লেন, যা একটি বিশ্বরেকর্ড। এর আগে কোনও দলে এক ম্যাচে একই দলের দুজন ৫ উইকেট করে নেননি।
এই দুই স্পিনারের ঘূর্ণিতে থাইল্যান্ড ২৮.৫ ওভারে ৯৩ রানে অলআউট হয়েছে। সর্বোচ্চ ২২ রান করেন চাহিন্দা সুথিরুওয়াং। এর বাইরে আর মাত্র দুইজন দুই অঙ্কের ঘরে রান করেছেন। নাথায়া বোচাথতাম ১৭ ও নারুয়েমল চাইওয়াই ১৫ রানের ইনিংস খেলেছেন।
বাংলাদেশের বোলারদের মধ্যে ৭ রানে সুমনা পাঁচটি উইকেট শিকার করেন। ফাহিমা বাকি ৫ উইকেট নিতে খরচ করেন ২১ রান।
এর আগে থাইল্যান্ডের বিপক্ষে টস হেরে ব্যাটিং করেছে বাংলাদেশ। শুরুটা অবশ্য ভালো ছিল না। দলীয় ১৫ রানে ইসমা তানজিম বিদায় নিলে ভাঙে উদ্বোধনী জুটি। দ্বিতীয় উইকেটে ফারজানা হক পিংকিং ও শারমিন আক্তার সুপ্তা মিলে ১০৪ রানের দারুণ একটি জুটিতে ভালো স্কোরের মঞ্চ গড়েন। কিছুটা স্লো ব্যাটিং করে ৮২ বলে ৫৩ রান করে আউট হন ফারজানা।
ফারজানা আউটের পর থেকেই বাংলাদেশের রানের গতি বাড়ে। নিগার সুলতানা জ্যোতি ও শারমিন সুপ্তা মিলে ১৫২ রানের জুটি গড়ে দলের স্কোর নিয়ে যান ২৭১ রানে। শেষ বলে আউট হন জ্যোতি। তার আগে অবশ্য ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরি তুলে নেন বাংলাদেশ অধিনায়ক। ৮০ বলে ১৫ চার ও ১ ছক্কায় ১০১ রান করেন তিনি। সতীর্থ সুপ্তা অবশ্য আরও একবার সেঞ্চুরি বঞ্চিত হয়েছেন। সুপ্তা নিজেকে হতভাগা ভাবতেই পারেন। আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি না থাকায় ২০২১ সালে যুক্তরাষ্ট্রের বিপক্ষে সেঞ্চুরি হাঁকালেও সেটা নামের পাশে যুক্ত হয়নি। এরপর গত বছর আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ৯৬ রানে আউট হয়েছিলেন। এবার বিশ্বকাপ বাছাই পর্বে ৯৪ রানে অপরাজিত থেকে আক্ষেপটা আরও বাড়ালেন। শেষ দুই বলে ৭ রান প্রয়োজন ছিল সুপ্তার। পঞ্চম বলে সিঙ্গেল নিয়ে নন স্ট্রাইক প্রান্তে চলে যান। পরে ৯৪ রানে অপরাজিত ছিলেন তিনি।
সবমিলিয়ে বাংলাদেশের মেয়েরা নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৩ উইকেট হারিয়ে ২৭১ রান সংগ্রহ করেছে। যা ওয়ানডেতে বাংলাদেশ নারী দলের সর্বোচ্চ দলীয় সংগ্রহের নজির। আগের সর্বোচ্চটি ছিল ২৫২।
চলতি বছরের নভেম্বরে ভারতে অনুষ্ঠিত হবে বিশ্বকাপ। আট দলের মধ্যে ৬টি দল চূড়ান্ত হলেও দুটি দল বাছাই পর্ব থেকে যাবে। বুধবার থেকে পাকিস্তানে শুরু হয়েছে ৬ দলের বাছাইপর্ব।