প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে ঢাকা মেট্রোর হয়ে জাঁকালো অভিষেক হয়েছে মারুফ মৃধার। গত যুব বিশ্বকাপ দলের পেসার নিজের প্রথম ম্যাচ দারুণভাবে রাঙালেন। তার গতিময় পেস বোলিংয়ে রাজশাহী বিভাগ ৭৭ রানেই অলআউট হয়। মারুফ ২২ রানে শিকার করেন ৬টি উইকেট।
শনিবার বিকেএসপিতে মুখোমুখি হয়েছে ঢাকা মেট্রো ও রাজশাহী। এই ম্যাচটি দেখতে বিকেএসপি গিয়েছিলেন জাতীয় দলের স্পিন বোলিং কোচ মুশতাক আহমেদ। স্পিন কোচের সামনে এদিন রাজত্ব করেছেন পেসাররা।
টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে শুরু থেকেই ঢাকা মেট্রোর বোলারদের বোলিং তোপে পড়ে রাজশাহী। চতুর্থ ওভারে তানজীদ হাসান তামিমকে ফিরিয়ে শুরু হয় মারুফের প্রথম ফাইফার শিকারের মিশন। এর পর একে একে তুলে নেন প্রীতম কুমার, শাখির হোসেন, শেখ মেহরাব হোসেন, শফিকুল ইসলাম ও মোহর শেখকে। তার বোলিংয়ে তোপে মাত্র ২৮.২ ওভারে ৭৭ রানে অলআউট হয় রাজশাহী।
মারুফের সঙ্গে আনিসুল ইসলাম ১০ রানে শিকার করেন তিনটি উইকেট। বাকি একটি উইকেট নেন আবু হায়দার রনি।
চলতি বছর লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটে অভিষেক হয় মারুফের, যেখানে খেলেছেন ১০ ম্যাচ। এবার শুরু হলো প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে যাত্রা। নিজের অভিষেক ম্যাচটা যেভাবে রাঙালেন, তাতে করে বোঝাই যাচ্ছে ক্রিকেটর রাজপথে রাজত্ব করতেই এসেছেন তিনি।
তবে তার ক্রিকেটার হওয়ার পথটা সহজ ছিল না। ক্রিকেটকে ভালোবেসে টানা তিন বছর দেশের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে ছুটে বেড়িয়েছিলেন মারুফ। কখনও গুলিস্তান, কখনও মুন্সীগঞ্জ, কখনোবা গুলশান! কিন্তু কোথাও থিতু হতে পারেননি। আর্থিক টানাপোড়েন তাকে কোথাও স্থির হতে দেয়নি। এ কারণে বারবার ফিরতে হয়েছে গ্রামে।
কৃষক আকবর মৃধা ও মর্জিনা বেগম দম্পতির তিন পুত্রসন্তানের মধ্যে মারুফ সবার ছোট। বড় দুই ভাই ইসমাইল মৃধা ও ইউসুফ মৃধার হাত ধরে ছোটবেলায় অলিগলিতে ক্রিকেট খেলে বেড়াতেন তিনি। টেপ টেনিস বলে ত্রাস ছড়ানো মারুফের বোলিং দেখে এলাকার অনেকেই বলতে শুরু করেন, ‘তুই পারবি, তোকে দিয়েই হবে।’ এসব প্রশংসা তার মনে ইতিবাচক প্রভাব ফেলে।
গুলশান ইয়ুথ ক্লাবে ভর্তি হওয়ার মাধ্যমে ক্রিকেটার হওয়ার মিশন শুরু হয় তার। কিন্তু টাকা ফুরিয়ে গেলে কয়েক মাসের ব্যবধানে ফের মুন্সীগঞ্জে ফিরে যেতে হয় তাকে। এরমধ্যে একবার বিকেএসপিতে পরীক্ষা দিয়ে ব্যর্থ হন। কিন্তু এসব ঘটনা মারুফের মনকে আরও শক্তিশালী করেছে। দুই বছরের কঠোর পরিশ্রম আর অধ্যবসায়ে ২০১৯ সালে দ্বিতীয়বারের চেষ্টায় বিকেএসপিতে জায়গা করে নেন। সেই শুরু। আর থামতে হয়নি তাকে। ধাপে ধাপে বয়সভিত্তিক ক্রিকেটের সিঁড়ি বেয়ে এখন তিনি বড়দের ক্রিকেটে।
শনিবার মারুফের দারুণ বোলিংয়ে রাজশাহীকে অল্পতে থামিয়ে ঢাকা মেট্রো দিন শেষ করেছে ৫ উইকেট ১৩৮ রান নিয়ে। শামসুর রহমান শুভ (৩৭) ও গাজী মোহাম্মদ তাজিবুল ইসলাম (১২) অপরাজিত থেকে রবিবার দ্বিতীয় দিনের খেলা শুরু করবেন।