মামলায় দেশের বাইরে খেলতে যেতে পারবেন মাশরাফি?

নড়াইলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মিছিলে গুলি, বোমা বিস্ফোরণ ও মারধরের অভিযোগে আওয়ামী লীগের যুব ও ক্রীড়াবিষয়ক সম্পাদক সাবেক সংসদ সদস্য মাশরাফি বিন মুর্তজা, তার বাবা গোলাম মুর্তজাসহ ৯০ জনের নামে মামলা হয়েছে। মামলায় আরও ৪০০ থেকে ৫০০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে। এই মামলার পর আলোচনা হচ্ছে মাশরাফি ক্রিকেট খেলতে দেশের বাইরে যেতে পারবেন কিনা। 
 
নড়াইল-২ আসন থেকে টানা দুইবার নির্বাচিত সাংসদ মাশরাফি ভীষণ জনপ্রিয়। নিজ এলাকার উন্নয়নে অনেক কাজ করেছেন। ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর সাবেক এই অধিনায়কের রাজনৈতিক ক্যারিয়ার থমকে গেছে। এই সময় তিনি খেলায় ফিরতে চেয়েছিলেন। মাশরাফিকে ড্রাফট থেকে দলে ভিড়িয়েছে যুক্তরাষ্ট্র টি-টেন মাস্টার্সের ফ্র্যাঞ্চাইজি ডেট্রয়েট ফ্যালকনস। এই টুর্নামেন্টে খেলার মধ্য দিয়ে মাশরাফি লম্বা সময় পর খেলায় ফিরতে যাচ্ছেন। ডেট্রয়েট ফ্যালকনস মাশরাফিকে দলে নেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিতও করেছে।

এই সুখবর আসার একদিন পরই তার বিরুদ্ধে মামলা হলো। যুক্তরাষ্ট্রের টি-টেন মাস্টার্স টুর্নামেন্টের দ্বিতীয় মৌসুম শুরু হচ্ছে ৮ নভেম্বর। যতদূর জানা গেছে, মামলা হলেও এখন অব্দি মাশরাফির দেশ ত্যাগের ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়নি। যদি নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়, সেক্ষেত্রে হয়তো টি-টেন লিগে খেলা হবে না মাশরাফির। তবে সরকার ও বিসিবি আন্তরিক হলে সাকিবের মতো মাশরাফিরও খেলতে কোনও ধরনের সমস্যা হওয়ার কথা নয়।

মাশরাফির মতো সাকিব আল হাসানও আওয়ামী লিগের সংসদ সদস্য হিসেবে চলতি মেয়াদে নির্বাচিত হয়েছিলেন। তার বিরুদ্ধেও হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। যদিও সাকিবের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়নি। সাকিব গত কয়েক মাস ধরে দেশের বাইরে অবস্থান করছেন। দেশের বাইরে থেকেই জাতীয় দলের হয়ে খেলায় অংশ নিচ্ছেন। আগামী ১৯ সেপ্টেম্বর ভারতের বিপক্ষে সিরিজে অংশ নেবেন। এই মুহূর্তে ইংল্যান্ডে সারের হয়ে কাউন্টি ক্রিকেট খেলছেন। বাঁহাতি এই অলরাউন্ডারের ব্যাপারে সব ধরনের আইনী সহায়তার আশ্বাস দিয়ে রেখেছে বাংলাদেশ ক্রিকেটের নিয়ন্ত্রক সংস্থা। সাকিব চুক্তিবদ্ধ ক্রিকেটার হওয়াতে সেই সুযোগ হয়তো পাচ্ছেন। কিন্তু মাশরাফি চুক্তিবদ্ধ নন। মাশরাফির ব্যাপারে বিসিবি এই ধরনের কোন পদক্ষেপ কি নেবে? এই প্রশ্নে বিসিবির কাছ থেকে অবশ্য সদুত্তর পাওয়া যায়নি।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিসিবির একজন পরিচালক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেছেন, ‘সাকিবের ব্যাপারে বোর্ড সিদ্ধন্ত নিয়েছে। মাশরাফির ব্যাপারেও বোর্ডে আলোচনা করেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। আমার ব্যক্তিগত মতামত এখানে গুরুত্বপূর্ণ নয়।’

মামলার ১ নম্বর আসামি মাশরাফি বিন মুর্তজা। তিনি নড়াইল-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য এবং জাতীয় সংসদের সাবেক হুইপ। ২ নম্বর আসামি করা হয়েছে মাশরাফির বাবা গোলাম মুর্তজাকে। ৩ ও ৪ নম্বর আসামি হিসেবে রয়েছেন যথাক্রমে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সুবাস চন্দ্র বোস ও সাধারণ সম্পাদক নিজামুদ্দিন খান।

মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, গত ৪ আগস্ট জেলা বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মী ও বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের ছাত্র-জনতা স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা সরকারের পদত্যাগের দাবিতে সদর উপজেলার নাকশি বাজার থেকে মালিবাগ হয়ে মিছিল সহকারে শহরের দিকে আসছিলেন। মিছিলটি শহরের শেখ রাসেল সেতুর পূর্ব পাশে পৌঁছালে ১ থেকে ৪ নম্বর আসামির হুকুমে অন্য আসামি মাহমুদুল হাসান শটগান দিয়ে গুলি ছুড়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করেন। তখন সাবেক পৌর মেয়র আঞ্জুমান আরা ও জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সরদার আলমগীর হোসেনের হুকুমে আসামি হাফিজ খান মিলন ও নাঈম ভূঁইয়া পিস্তল দিয়ে মিছিলে গুলি করে। এতে মিছিলে থাকা শফিকুল ইসলাম ও সোহান বিশ্বাস নামের দুজন গুলিবিদ্ধ হয়ে গুরুতর জখম হন। আসামিদের মধ্যে কয়েকজন বোমাবর্ষণ করেন, কয়েকজন ইটপাটকেল ও পাথর নিক্ষেপ করেন। অন্য আসামিরা লোহার রড, চায়নিজ কুড়াল ও বাঁশের লাঠি নিয়ে নিরীহ মিছিলকারীদের ওপর হামলা করেন। এতে অনেকেই আহত হন। আসামিদের ভয়ে সেসময় আহত অনেকে সঠিকভাবে চিকিৎসা নিতে পারেননি। সরকার পতনের পর তারা দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ও ক্লিনিকে চিকিৎসা গ্রহণ করেন এবং অনেকেই গুরুতর জখম হয়ে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। ঘটনার সময় অনুকূল পরিবেশ না থাকায় তারা মামলা করতে পারেননি।