তৃতীয় ওয়ানডের সংক্ষিপ্ত স্কোর: বাংলাদেশ ২৩.৩ ওভারে ১২৯/৩, লক্ষ্য ১২৭ ( তাওহীদ হৃদয় ২২*, লিটন দাস ৫৩*; নাঈম শেখ ০, নাজমুল হোসেন শান্ত ১১, সাকিব আল হাসান ৩৯)
ফল: বাংলাদেশ ৭ উইকেটে জয়ী।
ম্যাচসেরা: শরিফুল ইসলাম
সিরিজসেরা: ফজল হক ফারুকি
আফগানিস্তান ৪৫.২ ওভারে ১২৬ (ফারুকী ০*; ওমরজাই ৫৬, মুজিব ১১, জিয়া ৫, আব্দুল ৪, হাশমতউল্লাহ ২২, নাজিবউল্লাহ ১০, নবী ১, গুরবাজ ৬, রহমত ০, ইব্রাহিম ১)
ঘরের মাঠে ওয়ানডেতে অপ্রতিরোধ্য হয়ে ওঠা বাংলাদেশ লজ্জার এক অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হয়েছে। আফগানিস্তানের কাছে প্রথমবার হেরেছে ওয়ানডে সিরিজ। তৃতীয় ও শেষ ম্যাচটা ছিল তাদের হোয়াইটওয়াশ এড়ানোর লড়াই। শেষ পর্যন্ত সেই লজ্জা এড়াতে পেরেছে আফগানদের ৭ উইকেটে হারিয়ে। ১২৭ রানের মামুলি লক্ষ্যের বিপরীতে খেলতে নেমে আধিপত্য দেখাতে পেরেছে স্বাগতিক দল। বাংলাদেশ ১৫৯ বল হাতে রেখে তৃতীয় ওয়ানডে জেতায় সিরিজ ২-১ ব্যবধানে শেষ করেছে সফরকারী দল।
চট্টগ্রামে ১২৭ রানের লক্ষ্যের বিপরীতে শুরু থেকে প্রান্ত আগলে খেলেছেন ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক লিটন দাস। দশম ফিফটি তুলে অপরাজিত ছিলেন ৫৩ রানে। শুরুতে ২ উইকেট পড়লেও পরে সাকিব-লিটনের ৬১ রানের জুটি জয়ের কাছে পৌঁছে দেয় স্বাগতিকদের। সাকিবের বিদায়ের পর তাওহীদ হৃদয়কে নিয়ে ৪০ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটিতে লিটন জয় নিশ্চিত করেছেন। লিটনের ৬০ বলের ইনিংসে ছিল ৩টি চার ও ২টি ছয়। হৃদয় ১৯ বলে ২২ রানে অপরাজিত ছিলেন। তার ইনিংসে ছিল একটি চার।
আফগানদের হয়ে ২৬ রানে দুটি উইকেট নেন ফজল হক ফারুকি। ৭ রানে একটি নিয়েছেন মোহাম্মদ নবী।
৬১ রানের জুটি ভাঙলো সাকিবের বিদায়ে
দ্রুত ২ উইকেট হারানোর পর বাংলাদেশ ইনিংসের পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ নেয় সাকিব-লিটনের প্রতিরোধে। দারুণ ব্যাটিংয়ে ৬১ রান যোগ করেন তারা। মনে হচ্ছিল এই জুটিতেই বুঝি বাংলাদেশ জয় নিয়ে মাঠ ছাড়বে। কিন্তু ৮৯ রানে উঠিয়ে মারতে গিয়ে ৩৯ রানে আউট হন সাকিব আল হাসান। তার ৩৯ বলের ইনিংসে ছিল ৫টি চার।
বাংলাদেশের স্কোর পঞ্চাশ ছাড়ালো
শুরুতে নাঈম শেখ শূন্য রানে ফিরলেও রানের চাকা সচল হয়ে ওঠে ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক লিটন দাসের ব্যাটে। মাঝে শান্ত কিছুক্ষণ অবদান রাখলেও ইনিংস বড় করতে পারেননি। তবে ধীরে ধীরে লিটন খোলস ছেড়ে বের হওয়ায় পাওয়ার প্লের দশ ওভারে ২ উইকেটের বিনিমিয়ে যোগ হয়েছে ৪৩ রান। ১২ ওভারে পঞ্চাশ ছাড়ায় দলের স্কোর।
শুরুতে ধাক্কা খাওয়ার পর নাজমুল হোসেন শান্ত, লিটন দাস মিলে রান তোলার চেষ্টায় মনোযোগী ছিলেন। কিন্তু রান তোলার চেষ্টায় মনোযোগী শান্ত বলের লাইন বুঝতে না পারার খেসারত দিয়েছেন সপ্তম ওভারে। ফারুকির ফুলার লেংথের বল ড্রাইভ করতে গিয়েছিলেন। বল ভেতরে ঢুকে পড়ায় পুরোপুরি ব্যর্থ হন তাতে। বোল্ড হয়ে ১১ রানে ফিরেছেন শান্ত।
১২৭ রানের ছোট লক্ষ্য। তার পরেও শুরুটা ভালো মতো হলো না বাংলাদেশের। নাঈম শেখের আত্মাহুতিতে তৃতীয় ওভারে পড়েছে প্রথম উইকেট। আত্মাহুতি এজন্যই বলা হচ্ছে শরীর থেকে অনেক বাইরে বল করেছিলেন পেসার ফজল হক ফারুকি। অফস্টাম্পের অনেক বাইরের বল খেলতে গেলে বল তার ব্যাটের কানায় লেগে আঘাত করে স্টাম্পে। তাতে শূন্য রানে সাজঘরে ফিরেছেন নাঈম।
কী দারুণ শুরু বাংলাদেশের। টসে হেরে ফিল্ডিং পেয়ে তারা ১৬ ওভারের মধ্যে ৩২ রানে ৫ উইকেট তুলে নেয়। আফগানিস্তান একশও করতে পারবে কি না সন্দেহ ছিল। কিন্তু আজমতউল্লাহ ওমরজাই ক্রিজে নেমে স্রোতের বিপরীতে দাঁড়ান। তার হাফ সেঞ্চুরিতে আফগানিস্তান একশ পার করে। তাকে ফিরিয়ে দিয়ে সফরকারীদের অলআউট করলেন তাসকিন আহমেদ। ৭১ বলে ১ চার ও ৩ ছয়ে ইনিংস সেরা ৫৬ রান করেন ওমরজাই। ৪৬তম ওভারে ১২৬ রানে গুটিয়ে গেলো আফগানরা।
শরিফুল ৯ ওভারে ২১ রান দিয়ে চার উইকেট নেন। এটাই তার ক্যারিয়ার সেরা বোলিং। দুটি করে উইকেট নেন তাসকিন ও তাইজুল।
মুজিবকে ফেরালেন মিরাজ
আজমতউল্লাহ ওমরজাই ও মুজিব উর রহমানের জুটি ছিল আফগানিস্তানের ইনিংসের সর্বোচ্চ। সেটা ভেঙে দিলেন মেহেদী হাসান মিরাজ। ডিপ মিডউইকেটে মুজিব ১১ রানে আফিফ হোসেনের ক্যাচ হন।
ওমরজাইয়ের হাফ সেঞ্চুরি
আজমতউল্লাহ ওমরজাই অন্য ব্যাটারদের ব্যর্থতার মিছিলে ছিলেন না। একার লড়াইয়ে ৬৭ বলে ১ চার ও ২ ছয়ে প্রথম ফিফটি করলেন আফগানিস্তান ব্যাটার।
তাইজুলের আরেকটি আঘাত
৬৮ রানে ৭ উইকেট পড়ার পর জিয়া উর রহমান ও আজমতউল্লাহ ওমরজাই প্রতিরোধ গড়েন। সেই জুটি ভেঙে দিলেন তাইজুল ইসলাম। জিয়াকে ৫ রানে বোল্ড করেন বাংলাদেশি স্পিনার। ৮৯ রানে ৮ উইকেট হারালো আফগানিস্তান।
শরিফুলের চতুর্থ উইকেট
দ্বিতীয় স্পেলে ফিরে নিজের অষ্টম ওভারে শরিফুল ইসলাম তার চতুর্থ শিকার বানালেন আব্দুল রহমানকে। ডিপে দৌড়ে এসে তার দারুণ ক্যাচ ধরেন তাইজুল ইসলাম। ২০ বলে ৪ রান করেছেন আফগান ব্যাটার। এর আগে প্রথম স্পেলে তিন উইকেট নেন শরিফুল। ৬৮ রানে আফগানিস্তানের সাত উইকেট পড়লো।
হাশমতউল্লাহকে থামালেন তাইজুল
বিপদে পড়া আফগানিস্তানকে টেনে তোলার চেষ্টা করছিলেন হাশমতউল্লাহ শহীদী। টানা তিন ওভারে একটি করে চার মেরে রানের চাকা সচল করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তাকে থামতে হলো। তাইজুল ইসলাম তার দ্বিতীয় ওভারে আফগানিস্তান অধিনায়ককে প্যাভিলিয়নে পাঠালেন। ৫৪ বলে চার চারে ২২ রান করেন হাশমতউল্লাহ। তার স্টাম্প উপড়ে ফেলেন বাংলাদেশি স্পিনার। ৫৩ রানে তাদের ষষ্ঠ উইকেট পেয়েছে বাংলাদেশ।
সাকিব নিলেন আফগানিস্তানের পঞ্চম উইকেট
প্রথম ১০ ওভার তাসকিন আহমেদ ও শরিফুল ইসলামের পেসে হাপিত্যেশ করেছিল আফগানিস্তান। এরপর দুই প্রান্ত থেকে মেহেদী হাসান মিরাজ ও সাকিব আল হাসান ঘূর্ণি জাদু দেখান। অবশেষে সাকিব পেয়ে গেলেন উইকেট। ১০ রানে নাজিবউল্লাহ জাদরানকে এলবিডব্লিউ করেন বাঁহাতি স্পিনার। ৩২ রানে পঞ্চম উইকেট পেলো বাংলাদেশ।
পাওয়ার প্লেতে দুর্দান্ত বাংলাদেশ
পাওয়ার প্লেতে দুর্দান্ত বোলিং করলো বাংলাদেশ। প্রথম ১০ ওভারে মাত্র ২১ রান দিয়ে চার উইকেট পেয়েছে। আফগানিস্তানের তিন ব্যাটারকে ফেরান শরিফুল ইসলাম, অন্য উইকেটটি তাসকিন আহমেদের। শরিফুল ৫ ওভারে ১ মেডেনে মাত্র ৮ রান দেন। তাসকিন সমান সংখ্যক ওভারে এক মেডেনসহ ১৩ রান দিয়েছেন।
শরিফুলের তৃতীয় শিকার নবী
শরিফুল ইসলাম নবম ওভারে তৃতীয় উইকেট পেয়ে গেলেন। মোহাম্মদ নবীকে এলবিডব্লিউর ফাঁদে ফেলেন তিনি মাত্র ১ রানে। আফগান ব্যাটার রিভিউ নিলেও আগের সিদ্ধান্ত বহাল থাকে। ১৫ রানে বাংলাদেশ চার উইকেট নিলো।
তাসকিন ফেরালেন গুরবাজকে
শরিফুল ইসলাম ও তাসকিন আহমেদের বোলিং জুটিতে আফগানিস্তানের নাভিশ্বাস উঠে গেছে। এক ওভারে শরিফুল জোড়া আঘাত হানার পর তাসকিন তার তৃতীয় ওভারে ফেরালেন গত ম্যাচের বিধ্বংসী ব্যাটার রহমানউল্লাহ গুরবাজকে। তার শর্ট বলে আফগান ওপেনার পেছনে মুশফিকুর রহিমের দারুণ ক্যাচে প্যাভিলিয়নে ফিরলেন। ২২ বলে মাত্র ৬ রান করেন গুরবাজ। ৬ ওভারে ১৪ রানে ৩ উইকেট পেলো বাংলাদেশ।
শরিফুলের জোড়া আঘাত
বাংলাদেশ ৩ রানে আফগানিস্তানের প্রথম উইকেট পেলো। কোনও রান না নিতেই আরেক ব্যাটারকে হারায় সফরকারীরা। শরিফুল ইসলাম নিজের দ্বিতীয় ওভারের প্রথম বলে ইব্রাহিম জাদরানকে (১) মুশফিকুর রহিমের ক্যাচ বানান। ক্রিজে নেমে রহমত শাহ চার বল খেলে কোনও রান না নিয়েই মুশফিকের ক্যাচ হন। শেষ বলে ওয়াইডের সঙ্গে চার রান বাই নেয় আফগানরা।
শরিফুল-তাসকিনের আঁটসাঁট বোলিং
তাসকিন আহমেদ ও শরিফুল ইসলাম আঁটসাঁট বোলিং করেছেন। প্রথম দুই ওভারে ৩ রান দিয়েছে বাংলাদেশ। শরিফুলের প্রথম ওভার থেকে ওয়াইডে একটি রান পায় আফগানিস্তান। পরের ওভারে তাসকিন দেন দুটি রান। ক্রিজে আছেন দ্বিতীয় ম্যাচে ২৫৬ রানের রেকর্ড জুটি গড়া ওপেনার রহমানউল্লাহ গুরবাজ ও ইব্রাহিম জাদরান।
রশিদ বিশ্রামে, বাংলাদেশের একাদশে তিনটি পরিবর্তন
বাংলাদেশ তাদের বোলিং আক্রমণে পরিবর্তন এনেছে। তিনটি বদল একাদশে। এবাদত হোসেন ইনজুরিতে মাঠের বাইরে। মোস্তাফিজুর রহমান ও হাসান মাহমুদকে বিশ্রাম দেওয়া হয়েছে। দলে জায়গা পেয়েছেন তাসকিন আহমেদ, শরিফুল ইসলাম ও তাইজুল ইসলাম।
আফগানিস্তানের একাদশে দুটি পরিবর্তন। লেগস্পিনার রশিদ খান ও পেসার মোহাম্মদ সেলিমকে বিশ্রাম দেওয়া হয়েছে। তাদের জায়গা নিয়েছেন আব্দুল রহমান ও জিয়াউর রহমান।
বাংলাদেশ একাদশ: মোহাম্মদ নাঈম, লিটন দাস (অধিনায়ক), নাজমুল হোসেন শান্ত, তৌহিদ হৃদয়, সাকিব আল হাসান, মুশফিকুর রহিম (উইকেটকিপার), আফিফ হোসেন, মেহেদী হাসান মিরাজ, তাসকিন আহমেদ, শরিফুল ইসলাম, তাইজুল ইসলাম।
আফগানিস্তান একাদশ: রহমানউল্লাহ গুরবাজ (উইকেটকিপার), ইব্রাহিম জাদরান, রহমত শাহ, হাশমতউল্লাহ শহীদী (অধিনায়ক), নাজিবউল্লাহ জাদরান, মোহাম্মদ নবী, আজমতউল্লাহ ওমরজাই, মুজিব উর রহমান, ফজল হক ফারুকী, আব্দুল রহমান ও জিয়াউর রহমান।
আফগানিস্তান জিতেছে টস, বাংলাদেশ ফিল্ডিংয়ে
ওয়ানডে সিরিজের শেষ ম্যাচে বাংলাদেশের বিপক্ষে টসে জিতেছে আফগানিস্তান। আগে তারা ব্যাটিং নিয়েছে।
সিরিজ আগেই হেরে গেছে। তবে আফগানিস্তানের কাছে হোয়াইটওয়াশের লজ্জা যেন পেতে না হয়, সেই চেষ্টাই থাকবে বাংলাদেশের। মঙ্গলবার তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডেতে হাশমতউল্লাহ শহীদীর দলের মুখোমুখি হচ্ছে স্বাগতিকরা।
১৭ মাস আগে চট্টগ্রামেই বাংলাদেশ একই প্রতিপক্ষকে হোয়াইটওয়াশ করার মিশনে নেমেছিল। এবার নিজেরা হোয়াইটওয়াশ এড়ানোর মিশনে। যদিও বৃষ্টির কারণে ম্যাচটি পরিত্যক্ত হওয়ার সমূহ সম্ভাবনাও আছে।
ম্যাচটি মাঠে গড়াবে দুপুর দুইটায়। ম্যাচটি সরাসরি সম্প্রচার করবে গাজী টেলিভিশন ও টি স্পোর্টস।