ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীম পীর সাহেব চরমোনাই বলেন, ‘সংবিধান, নির্বাচন কমিশন, জনপ্রশাসন, পুলিশ, দুদক ও বিচার বিভাগের সংস্কার জরুরি হয়ে দাঁড়িয়েছে। এসব ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় সংস্কার না হলে আগের তিমিরে ফেরত যাওয়ার আশঙ্কা থেকে যাবে। তাই এসব ক্ষেত্রে সংস্কার হতেই হবে।’ সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতিতে (পিআর) নির্বাচনেরও দাবি জানান তিনি।
শুক্রবার (৭ মার্চ) রাজধানীর হোটেল সোনারগাঁওয়ে রাজনীতিবিদ, কূটনৈতিক, সাংবাদিক, পেশাজীবী, ব্যবসায়ী, বুদ্ধিজীবী ও সমাজের গণ্যমান্য ব্যক্তিদের সম্মানে আয়োজিত ইফতার মাহফিলে সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীম বলেন, ‘নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কারের ক্ষেত্রে আমরা বিশ্বের ৯০টিরও বেশি দেশে অনুসৃত সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতিতে (পিআর) নির্বাচনের দাবি করেছি। আমরা মনে করি, জাতীয় নির্বাচনে সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতি অনুসরণ করা হলে রাজনীতিতে গুণগত পরিবর্তন আসবে এবং কার্যকর ও যথাযথ প্রতিনিধিত্বশীল পার্লামেন্ট গঠিত হবে। নির্বাচনে কালো টাকা ও পেশীশক্তির ব্যবহার বন্ধ হবে।’
‘ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ নির্বাচনহীন পরিস্থিতি দীর্ঘ হোক তা চায় না। বরং নির্বাচনকে সুষ্ঠু, অবাধ করতে এবং নির্বাচনে সবার জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা ও সংস্কার করে দ্রুত নির্বাচন আয়োজন করতে হবে।’
২০২৪ আমাদের ইতিহাসের একটি গৌরবময় অধ্যায় উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ জুলাইয়ের শুরু থেকেই রাজনৈতিকভাবে স্বনামেই এই আন্দোলনের অংশ ছিল। দীর্ঘ স্বৈরশাসনের পরে একটি গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ রাহুমুক্ত হয়েছে। এখন সময় হলো বাংলাদেশ গড়ার।’
‘আমরা দেশের রাজনৈতিক চরিত্র পরিবর্তন করে সৌহার্দ ও সহযোগিতাপূর্ণ রাজনৈতিক পরিবেশ নির্মাণ করতে চাই। দুর্নীতিমুক্ত জনবান্ধব জনপ্রশাসন, স্বাধীন বিচার বিভাগ ও সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে স্বয়ংক্রিয় ও দক্ষ করে তোলার জন্য আমরা প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।’
মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীম আন্তর্জাতিক সম্পর্কের বিষয়ে বলেন, ‘ইসলামে প্রতিবেশীকে সম্মান করা এবং প্রতিবেশীকে কষ্ট না দেওয়ার ব্যাপারে কঠোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সেই নির্দেশনার আলোকে আমাদের রাষ্ট্রীয় প্রতিবেশীকে সম্মান করার এবং বাংলাদেশের ভূমি ব্যবহার করে তাদের কোনও ক্ষতি না করতে দেওয়ার ব্যাপারে আমরা বদ্ধপরিকর। একইসঙ্গে রোহিঙ্গা ও ফিলিস্তিনসহ বিশ্বের সব মাজলুমদের ব্যাপারে আমরা সহমর্মিতা জানাচ্ছি এবং তাদের স্বাধিকারের আন্দোলনের সমর্থন ঘোষণা করছি।'
ইফতার মাহফিলে উপস্থিত ছিলেন, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মইন খান, সালাউদ্দিন আহমেদ, ভাইস চেয়ারম্যান বরকতুল্লাহ বুলু, জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশের আমির ডা শফিকুর রহমান, জাতীয় নাগরিক পার্টির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম, খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা আব্দুল বাসেত আজাদ, মহাসচিব ড. আহমাদ আব্দুল কাদের, আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টির মহাসচিব ব্যারিস্টার ফুয়াদ, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মহাসচিব মাওলানা জালাল উদ্দিন, ইসলামী ঐক্যজোটের মহাসচিব মুফতি সাখাওয়াত হোসেন রাজী, জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের মহাসচিব মাওলানা মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দি, গণঅধিকার পরিষদের রাশেদ খান ও ফারুক আহমেদ প্রমুখ।
এছাড়াও সুইজারল্যান্ড, যুক্তরাষ্ট্র, চীন, নেদারল্যান্ডস, পাকিস্তান, অষ্ট্রেলিয়া, ভারত, আফগানিস্তান, ইরান,ভুটান ও কসোভা কূটনৈতিক মিশনের প্রধান ও প্রতিনিধিরা অংশ নেন। দৈনিক খবরের কাগজের সম্পাদক মোস্তাফা কামাল, ইনকিলাবের সম্পাদক এ এমএম বাহাউদ্দিনসহ বিভিন্ন ইলেক্ট্রনিক্স ও প্রিন্ট মিডিয়ার শীর্ষ সাংবাদিকরাও উপস্থিত ছিলেন।