সরকারের বেফাঁস ও আবেগী কথাবার্তায় জনমনে বিভ্রান্তির সুযোগ তৈরি হয়েছে উল্লেখ করে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেছেন, অন্তর্বর্তী সরকারের সদিচ্ছার ঘাটতি না থাকলেও তাদের মধ্যে রয়েছে সমন্বয়হীনতা, শ্লথগতি, সরকার পরিচালনায় অনভিজ্ঞতা ও দূরদর্শিতার অভাব।
তিনি বলেন, গত ৮০ দিনে তাদের নানা বেফাঁস ও আবেগী কথাবার্তায় তাদের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সম্পর্কে জনমনে বিভ্রান্তির সুযোগ তৈরি হয়েছে। তাদের কিছু পদক্ষেপ ও ঘোষণাও বিতর্কের জন্ম দিয়েছে।
সোমবার (২৮ অক্টোবর) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির নসরুল হামিদ মিলনায়তনে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির আয়োজনে ‘অন্তর্বর্তী সরকারের ৮০ দিন: গতিমুখ ও চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক আলোচনা সভার সূচনা বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
সাইফুল হক বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ হচ্ছে জাতীয় মতৈক্যের ভিত্তিতে জরুরি সংস্কারগুলো সম্পন্ন করে সম্ভব স্বল্পতম সময়ের মধ্যে অবাধ ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠান এবং নির্বাচিত সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তক্ষেপ করে মর্যাদার সঙ্গে বিদায় নেওয়া। কিন্তু এ ব্যাপারে এখনও দৃষ্টিগোচর তেমন কোনও তৎপরতা নেই। এখনও নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন হয়নি।
তিনি বলেন, আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে সরকার গঠিত ১০টি সংস্কার কমিশনের রিপোর্ট চূড়ান্ত করে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে মতৈক্যের ভিত্তিতে করণীয় নির্ধারণ করার কথা। কিন্তু বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনসহ বিভিন্ন মহল থেকে নতুন নতুন ইস্যু সামনে নিয়ে আসায় গোটা সংস্কার এজেন্ডা এই মুহূর্তে অনেকটা পেছনে পড়ে গেছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রতিনিধিরা যেহেতু অন্তর্বর্তী সরকারের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে রয়েছেন, সে কারণে তাদের উত্থাপিত ইস্যুর পেছনে সরকারের সম্মতি বা সমর্থন রয়েছে কি না, এই প্রশ্ন জোরালোভাবে দেখা দিয়েছে। এই পরিস্থিতি অন্তর্বর্তী সরকারের নিরপেক্ষ চরিত্র বৈশিষ্ট্যকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলছে।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ৮০ দিন পার হলেও সাফল্য ও স্বস্তির উল্লেখ করে তিনি বলেন, জনগণের বিরাট প্রত্যাশার চাপ নিয়ে সরকার পরিচালনায় নানা ঘাটতি ও দুর্বলতা থাকলেও গত ৮০ দিনে দেশের ভঙ্গুর সামষ্টিক অর্থনীতিতে খানিকটা শৃঙ্খলা ফিরে এসেছে, অর্থনীতি কিছুটা সচল হতে শুরু করেছে। গণ-অভ্যুত্থানকালে নৃশংস গণহত্যা ও রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের বিচারে গঠিত ট্রাইব্যুনাল ইতোমধ্যে কাজ শুরু করেছে; ধীরগতিতে হলেও অভিযুক্তদের গ্রেফতার অব্যাহত রয়েছে।
দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন ঊর্ধ্বগতি মানুষকে নাজেহাল করে তুলছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, জন-আকাঙ্ক্ষা অনুযায়ী নির্বাচন ছাড়া অন্তর্বর্তী সরকারের দুটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অগ্রাধিকার ছিল জনজীবনে স্বস্তি ও নিরাপত্তা বিধান করা। এ জন্য সরকারের প্রচেষ্টা রয়েছে। কিন্তু বাজার পরিস্থিতি এখনও বেসামাল; দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন ঊর্ধ্বগতি মানুষকে নাজেহাল করে তুলছে। জনজীবনে রয়েছে উদ্বেগজনক নিরাপত্তাহীনতা। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ প্রশাসনকে এখনও পেশাদারি দক্ষতায় কার্যকরি করা যায়নি।
এ সময় অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, এবি পার্টির সদস্য সচিব মজিবুর রহমান মঞ্জু, গণসংহতি আন্দোলনের সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি, ভাষানী অনুসারী পরিষদের আহ্বায়ক শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) সাধারণ সম্পাদক শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন, বাংলাদেশ এলডিপির চেয়ারম্যান শাহাদাত হোসেন সেলিম প্রমুখ।