‘আশ্বস্ত’ হতে চায় সরকার, বৈঠক নিয়ে চুপ কওমি আলেমরা

দেশে শান্তি ও সম্প্রীতি রক্ষায় উলামায়ে কেরামদের ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানিয়েছে সরকার। পাশাপাশি সরকারের দায়িত্বশীলরা মনে করছেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে আলেম-উলামা সমাজ প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গেই আছেন, সে বিষয়ে উলামায়ে কেরামদের পক্ষ থেকে তাকে আশ্বস্ত করতে হবে।

বুধবার (৩১ জুলাই) রাজধানীর বেইলি রোডে ধর্মমন্ত্রীর সরকারি বাসভবনের সভাকক্ষে ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আয়োজনে ‘শান্তি ও সম্প্রীতি রক্ষায় বিশিষ্ট উলামায়ে কেরামের ভূমিকা’ শীর্ষক সেমিনারে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্টরা এসব মত প্রকাশ করেন।

সেমিনারের বিষয়ে কওমি আলেমরা একেবারেই চুপচাপ রয়েছেন। বাংলা ট্রিবিউনের সঙ্গে একাধিক আলেম কথা বললেও তারা কোনও অবস্থাতেই স্বনামে উদ্ধৃত হতে রাজি হননি।

বুধবার (৩১ জুলাই) দুপুরে বৈঠক শেষ হওয়ার পর অংশগ্রহণকারী একজন আলেম জানান, ফলপ্রসূ কোনও আলোচনা হয়নি। সেমিনারে হেফাজতের কেউ আসেনি। যে যার বক্তব্য দিয়েছে।

বৈঠকের বিষয়ে মঙ্গলবার রাত থেকেই কওমি মাদ্রাসার আলেমদের মধ্যে কানাঘুষা চলছিল। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বৈঠকে অংশগ্রহণ নিয়ে সাধারণ কওমি আলেমদের মধ্যেও সমালোচনা হয়।

একাধিক আলেম জানান, কোটা সংস্কার আন্দোলন ও জামায়াত-শিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধের বিষয়ে আলেমদের ভূমিকা চাইছে সরকার। ইতোমধ্যে গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক হওয়ার বিষয়টিও আলোচনায় এসেছে।

বুধবারের আলোচনায় ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান হাসনাত আমিনী, মহাসচিব মুফতি ফয়জুল্লাহ ও আলতাফ হোসাইনের অংশগ্রহণের কথা জানিয়েছিল দলটির একজন নেতা। যদিও এদিন বিকালে দলটির শীর্ষস্থানীয় এক নেতা এ প্রতিবেদককে জানান, তারা কোনও বৈঠকে অংশ নিচ্ছেন না।

মুখোশ উন্মোচন করতে আলেমদের প্রতি ধর্মমন্ত্রীর আহ্বান

চলমান কোটা সংস্কার আন্দোলনে কওমি মাদ্রাসার শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের অবস্থান প্রসঙ্গে সেমিনারে ধর্মমন্ত্রী মো. ফরিদুল হক খান বলেছেন, কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে উলামায়ে কেরামরা খুবই দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিয়েছেন। দেশের শান্তি-সম্প্রীতি রক্ষায় উলামায়ে কেরামদের এভাবে সবসময় ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।

ধর্মমন্ত্রী বলেন, ‘আলেম-উলামারা আমাদের সমাজের অত্যন্ত সম্মানিত ও শ্রদ্ধাভাজন ব্যক্তিত্ব। তারা সবাই অত্যন্ত সচেতন ও দায়িত্বশীল মানুষ। সরকার দেশের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড গ্রহণ ও বাস্তবায়নে উলামায়ে কেরামদের মতামত ও পরামর্শকে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করে থাকে। কোটা সংস্কার আন্দোলন ও পরবর্তী ঘটনাপ্রবাহের আলোকে দেশের শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় ও উন্নয়ন-অগ্রগতিকে গতিশীল রাখতে আলেম-উলামা সমাজের বিশেষ দায়িত্ব রয়েছে।’

সম্প্রতি অগ্নিসন্ত্রাস, নাশকতা ও নৈরাজ্যের মাধ্যমে যে হত্যাকাণ্ড ও রাষ্ট্রীয় সম্পদের ধ্বংস করা হয়েছে, তার নেপথ্যে যারা ছিল—তাদের মুখোশ জাতির সামনে উন্মোচন করার ক্ষেত্রে উলামায়ে কেরামদের এগিয়ে আসার অনুরোধ জানান মন্ত্রী।

ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. আবুবকর সিদ্দীকের সই করা সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সভায় ধর্মমন্ত্রী আরও বলেন, ‘বর্তমান সরকার ইসলাম ও মুসলিম উম্মাহর খেদমতে নিবেদিত হয়ে কাজ করে যাচ্ছে। ইসলাম শিক্ষার প্রসার ও অবকাঠামোগত উন্নয়নে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অবদান অবিস্মরণীয়।’

‘দেশের উন্নয়ন অগ্রগতির ধারাবাহিকতা বজায় রাখার মাধ্যমেই কেবল ইসলাম ও দেশের সামগ্রিক উত্তরোত্তর সমৃদ্ধি অর্জন করা সম্ভব। কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে কোনও কুচক্রী মহল যাতে আলেম-উলামাদের বিভ্রান্ত করতে না পারে এবং দেশের শান্তি-শৃঙ্খলার বিঘ্ন ঘটাতে না পারে, সে বিষয়ে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে।’

আশ্বস্ত হতে চায় সরকার

সভায় ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি,  স্বতন্ত্র এমপি হুছামউদ্দিন চৌধুরী বলেন, ‘বর্তমান পরিস্থিতিতে আলেম-উলামা সমাজ প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গেই আছে, সে বিষয়ে উলামায়ে কেরামদের পক্ষ হতে তাকে আশ্বস্ত করতে হবে। এছাড়া, মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা যাতে কোনও সংঘাতে জড়িয়ে না পড়ে, সে বিষয়ে মাদ্রাসার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট উলামায়ে কেরামদের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে।’

ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সচিব মু. আ. হামিদ জমাদ্দারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ সেমিনারে অন্যান্যের মধ্যে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক ড. বশিরুল আলম, বায়তুল মোকারম জাতীয় মসজিদের খতিব মুফতি রুহুল আমিন, দারুল উলুম রামপুরা মাদ্রাসার মুহতামিম মাওলানা ইয়াহইয়া মাহমুদ, ঢাকা নেছারিয়া কামিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাওলানা কফিল উদ্দিন সরকার সালেহীসহ দেশের বিশিষ্ট উলামায়ে কেরামরা উপস্থিত ছিলেন।

আরও পড়ুন:

জামায়াত নিষিদ্ধ প্রক্রিয়া: কওমি আলেমদের পাশে চায় সরকার