‘গণতন্ত্রের কোনও বিকল্প নাই’ বলে মন্তব্য করেছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। শনিবার (১৯ এপ্রিল) এক আলোচনা অনুষ্ঠানে দেশের বর্তমান অবস্থা তুলে ধরে বিএনপি মহাসচিব এ মন্তব্য করেন।
তিনি বলেন, ‘একটা কথা জোর দিয়ে বলতে চাই, গণতন্ত্রের কোনও বিকল্প নাই এবং গণতন্ত্রকে চাপিয়ে দেওয়া যায় না… ইট ক্যান নট বি ইম্পোজড। আপনি আমার ওপরে চাপিয়ে দেবেন, তা দেওয়া যাবে না।’
‘গণতন্ত্র চর্চা করতে হবে, প্র্যাকটিস করতে হবে, সেই জায়গাগুলো খোলা রাখতে হবে। এই আশা রেখে আবারও বলতে চাই—সেই বিহঙ্গের মতো একদিন না একদিন তীরে এসে পৌঁছাবোই।’
বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আস্থা ও বিশ্বাস রেখে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমি প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূসকে ধন্যবাদ জানাই, তিনি দায়িত্ব নিয়েছেন, আমার বিশ্বাসও আছে যে তিনি সফল হবেন।’
‘আসুন, আমরা সবাই মিলে তাকে সাহায্য করে, আমরা নিজেরাই নিজেদের সাহায্য করে, আমরা সামনের দিকে এগিয়ে যাই।’
তিনি বলেন, ‘এত যে রক্তপাত হলো, এত যে রক্ত ঝরলো, এত যে মায়ের বুক খালি হলো, তার পরিণতি কী হবে শেষ পর্যন্ত?’
ফখরুল বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি, দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি যে ভালো হবে এবং খুব ভালো হবে। কারণ আমরা বাংলাদেশের মানুষেরা চিরকাল ভালোর জন্যে সংগ্রাম করেছি, লড়াই করেছি এবং জয়ী হয়েছি। বিশেষ করে আমাদের তরুণরা, আমাদের ছেলেরা আজকে বাংলাদেশের যা কিছু ভালো অর্জন, সব তাদের জন্যে। দেখুন, ৫২ থেকে ২৪ পর্যন্ত সব আন্দোলনে তরুণরা ভ্যানগার্ডের ভূমিকা পালন করছেন, সেখানেই আমাদের শক্তি সেই প্রান্তিক মানুষগুলো।’
যুক্তরাষ্ট্রের ট্যারিফ আরোপ প্রসঙ্গ
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমরা এখন খুব ব্যস্ত হয়ে পড়েছি যে আমেরিকা ট্যারিফ আরোপ করে ফেলেছে এবং খুব দ্রুত যদি এই ট্যারিফের বিষয়ে সুরাহা না করা যায়, তাহলে আরও বড় বিপদে পড়তে হবে, এটা সত্য কথা।’
‘আমার মনে হয়, আমরা এই শ্রেণির মানুষগুলোকে (কৃষক) যদি সামনের দিকে এগিয়ে আসতে পারি, তাদের কাজ দিতে পারি, তাদের বিভিন্ন প্রযুক্তি দিতে পারি—তাহলে এই সমস্যাগুলো আমরা অতি দ্রুত কাটিয়ে উঠতে পারবো।’
বসুন্ধরার নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির সেমিনার হলে ‘এমপাওয়ারমেন্ট বাংলাদেশ ও নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির ইতিহাস ও দর্শন বিভাগ’-এর যৌথ উদ্যোগে ‘প্রয়াত রাষ্ট্রদূত সিরাজুল ইসলামের দূরদৃষ্টিতে ক্ষমতায় বাংলাদেশ: নেতৃত্ব, ঐক্য এবং প্রবৃদ্ধির পথে কূটনীতি-শাসন ব্যবস্থা রূপান্তরমূলক’ শীর্ষক এই আলোচনা অনুষ্ঠিত সভা হয়।
এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন প্রয়াত সিরাজুল ইসলামের বড় মেয়ে সাবরিনা ইসলাম রহমান।
‘বাংলাদেশের অভ্যুদয়: বহুচিন্তার একত্রিত ফল’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘বাংলাদেশে অনেক রাজনীতি আছে, এটার জন্মটা হয়েছিল বহুত্ববাদের মধ্য দিয়ে। অনেকে ভুল বুঝাবুঝি করেন, মানে বহুচিন্তার মধ্য দিয়ে অনেক চিন্তা এক জায়গায় আসে। আমরা বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য যখন লড়াই করি, তার আগে সেই সময়ে আমাদের নেতা অনেকেই ছিলেন। অত্যন্ত বড় বড় নেতা—মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, শেখ মুজিবুর রহমান, আমাদের মাহবুবউল্লাহ সাহেব আসেননি বোধহয়, তিনিও তখন বিরাট নেতা ছিলেন। ওখানে বাদল দা বসে আছেন, তারাও বড় নেতা ছিলেন।’
‘তখন আমাদের একেকজনের একেক চিন্তা ছিল। সেই চিন্তাগুলো ছিল কেউ আমরা সমাজতন্ত্র করবো, কেউ সমাজকে পাল্টে দেবো, কেউ কমিউনিজম করবো, কেউ ধর্মীয় ব্যবস্থাকে এখানে প্রতিষ্ঠিত করবো, ইসলামকে প্রতিষ্ঠিত করবো—সব মিলিয়ে যখন যুদ্ধ শুরু হয়েছে, তখন আমরা এক হয়েছি। এক হয়ে লড়াইটা করেছি। আজকে ২৪-এর আন্দোলনে একই ঘটনা ঘটেছে। বিভিন্ন চিন্তা নিয়ে আমরা এসেছি। সেদিন ছাত্রদের ওপর গুলি শুরু হয়েছে, তখন কিন্তু সবাই নেমে এসেছেন রাস্তায়। আজকে আসুন, সবাই মিলে এক হয়ে যাই। আমাদের সমস্যা আছে, সমস্যার সমাধানও হবে। ইতোমধ্যে অনেক দূর এগিয়েছে।’
‘দেশটা আমাদের, বিদেশের কেউ এসে করে দেবে না’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আমি অত্যন্ত আশা্বাদী। আমি বিশ্বাস করি, আমরা সবাই যদি আজকে এইটুকু বুঝতে পারি যে দেশটা আমাদের, এর ভবিষ্যৎ আমাদেরই নির্মাণ করতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘ওই আমেরিকা থেকে এসে ট্রাম্প (ডোনাল্ড ট্রাম্প) তৈরি করে দেবেন না, বা চীন থেকে শি (শি জিনপিং) এসেও এটা করে দেবেন না। অথবা ভারত থেকে মোদি (নরেন্দ্র মোদি) ধাক্কা দিয়ে কিছু করতে পারবেন না। এই বিষয়গুলো আমাদের মনের মধ্যে, অন্তরের মধ্যে গেঁথে নিতে হবে।’
সাংবাদিকদের উদ্দেশ করে ফখরুল বলেন, ‘আমাদের সাংবাদিক ভাইদের একটা অভ্যাস আছে, এটা ভালো না খারাপ আমি বলতে চাই না। ওনারা শুধু ঝগড়া বাধিয়ে দিতে চান।’
‘দেখবেন, টকশোতে যারা অ্যাংকোরে কাজ করেন, তাদের শুধু লক্ষ্য ঝগড়া লাগিয়ে দেওয়া। আমার কাছে সাংবাদিক ভাইয়েরা অত্যন্ত প্রিয়। তারা একেবারে ছোট ভাইয়ের মতো। আমার কাছে এমন একটা বিষয় পাঠিয়ে… যেটা নিয়ে কথা বলতে বলেছে। কিন্তু আমি হতাশ করছি, আমি সেটি নিয়ে কথা বলবো না। কারণ আমি এটা নিয়ে বলতে চাই না।’
দুই পর্বের এই আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস ও দর্শন বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান।
প্রথম পর্বে বিএনপি মহাসচিব ছাড়া অর্থ উপদেষ্টা সালেহ উদ্দিন আহমেদ, পররাষ্ট্র সচিব জসিম উদ্দিন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের অধ্যাপক রাশেদ আল মাহমুদ তিতুমীর প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
দ্বিতীয় পর্বে পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, অর্থনীতিবিদ হোসেন জিল্লুর রহমান, রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অধ্যাপক দিলারা জামান প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।