বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, সংস্কার প্রক্রিয়ায় জনগণকে সম্পৃক্ত না করলে ফল পাওয়া যাবে না। তিনি বলেন, ‘রাষ্ট্র কিংবা রাজনীতি, সব ক্ষেত্রে সংস্কার একটি ধারাবাহিক চলমান প্রক্রিয়া। সুতরাং, রাষ্ট্র ও রাজনীতির সংস্কারে বিএনপি ঘোষিত ৩১ দফার আরও যদি পরিমার্জন ও পরিবর্তনের প্রয়োজন হয়, তাহলে সেটিকেও স্বাগত জানাবো।’
মঙ্গলবার (১৭ সেপ্টেম্বর) বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সভাপতিত্বে সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্য তারেক রহমান এসব কথা বলেন। মূলত ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্দেশে এ মন্তব্য করেন বিএনপির এই নীতিনির্ধারক।
তারেক রহমান আরও বলেন, ‘এমনকি কেউ যদি মনে করেন, উন্নত ও নিরাপদ দেশের জন্য আরও নতুন দলের প্রয়োজন রয়েছে। তাতেও দোষের কিছু নেই।’
‘কারণ শেষ পর্যন্ত জনগণই সিদ্ধান্ত জানাবেন। এটি তাদেরই চূড়ান্ত বিষয়।’ বলে মনে করেন তারেক রহমান।
তিনি উল্লেখ করেন, ‘এজন্য বিএনপি বরাবর ভোটের ওপর গুরুত্ব দিয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘বিএনপি মনে করে—দেশের জনশক্তির অর্ধেক নারী এবং তারুণ্যের এই বৃহৎ অংশকে, রাজনৈতিক অংশীদারত্বের বাইরে রেখে একটি বৈষম্যহীন মানবিক রাষ্ট্র গঠন সম্ভব নয়। সংবিধান কিংবা প্রবিধানে যাই থাকুক, জনগণের রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করা না গেলে সংস্কার প্রক্রিয়ায় জনগণকে সম্পৃক্ত করা না গেলে, শেষ পর্যন্ত কোনও সংস্কার কার্যক্রমেরই কার্যকর ফল পাওয়া যাবে না।’
‘বিএনপি মনে করে, একমাত্র অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমেই, রাষ্ট্র- রাজনীতি এবং রাজনৈতিক বন্দোবস্তের সঙ্গে জনগণের প্রত্যক্ষ অংশীদারত্ব তৈরি হয়।’
ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ‘বাংলাদেশ কিংবা যেকোনও দেশেই গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে গঠিত সরকার অবশ্যই জনগণের সরকার। তাই জনগণ অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি সহযোগিতা অব্যাহত রেখেছে, রাখবে। তবে কোনও এক পর্যায়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের জবাবদিহিও কিন্তু নির্বাচিত সংসদের মাধ্যমেই নিশ্চিত করা হয়।’
‘সুতরাং, জনগণের রাজনৈতিক ক্ষমতায়নের মাধ্যমে একটি নির্বাচিত সংসদ এবং সরকার প্রতিষ্ঠাই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সব সংস্কার কার্যক্রমের প্রথম এবং প্রধান টার্গেটও হওয়া জরুরি।’
‘এ জন্যই অগ্রাধিকার ভিত্তিতে জনগণের ভোটে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের দ্বারা গঠিত জবাবদিহি-মূলক সরকার এবং সংসদ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যকে সামনে রেখেই সংস্কার কার্যক্রম এগিয়ে নেওয়া দরকার। কারণ, জনগণের রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন ছাড়া, সংস্কার কার্যক্রমের প্রক্রিয়ায় জনগণের সরাসরি সম্পৃক্ততা ছাড়া, উন্নয়ন-গণতন্ত্র কিংবা সংস্কার কোনোটিই টেকসই এবং কার্যকর হয়না।’ বলেন তারেক।
‘‘সেই লক্ষ্যে বিশেষ করে নির্বাচন কমিশন জনপ্রশাসনের সংস্কার এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে ‘সক্ষম এবং উপযুক্ত’ করে গড়ে তুলতে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পদক্ষেপ নিতে হবে। ‘
‘এবারের গণঅভ্যুথানের চরিত্র অতীতের যেকোনও গণ-অভ্যুথানের চেয়ে ব্যতিক্রম। কেন ব্যতিক্রম? কারণ পলাতক স্বৈরাচারের অবৈধ শাসনকালে সব গণতান্ত্রিক অধিকার ও মানবাধিকার হারিয়ে জনগণ পরাধীনতার শৃঙ্খলে আবদ্ধ হয়ে পড়েছিল। দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বও হারাতে বসেছিল’
তিনি বলেন, ‘দেশে বর্তমানে প্রায় সাড়ে ১২ কোটি ভোটার। এরমধ্যে ২০০৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত ভোটার তালিকায় প্রায় আড়াই কোটি নতুন ভোটার যুক্ত হয়েছে। ভোটার হওয়ার পর তরুণ প্রজন্মের এই আড়াই কোটি ভোটার একটি জাতীয় নির্বাচনেও ভোট দেওয়ার সুযোগ পায়নি। ভোট দিয়ে তারা তাদের কাঙ্ক্ষিত জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত করতে পারেনি। কিংবা তারা নিজেরাও কেউ ভোটে নির্বাচিত হয়ে জনগণের প্রতিনিধিত্ব করার সুযোগ পায়নি।’
আরও পড়ুন: