সমাবেশে মির্জা ফখরুল

‘খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিন, নতুবা যেকোনও পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত থাকুন’

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকার দেশের কাঠামো ধ্বংস করে দিয়েছে, অর্থনীতিকে ধ্বংস করেছে। শিক্ষাব্যবস্থা, স্বাস্থ্যব্যবস্থা ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। ব্যাংকগুলো লুট করে টাকা পাচার করছে। স্তম্ভিত হই, যখন দেখি সাবেক সেনাপ্রধান গণতন্ত্র ধ্বংস করার জন্য জড়িত। সাবেক পুলিশপ্রধান হাজার হাজার কোটি টাকার মালিক। এ তো মাত্র শুরু। এ রকম আজিজ, বেনজির ও মতিউর হাজার হাজার আছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আজ বড় বড় রাঘব-বোয়ালকে ধরা হচ্ছে না। অথচ গণতন্ত্রের মাকে ছয় বছর ধরে বন্দি রাখা হয়েছে। সময় আছে এখনও সময় আছে, বেগম জিয়াকে মুক্তি দেন। নতুবা যেকোনও পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত থাকুন।’

শনিবার (২৯ জুন) রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে অনুষ্ঠিত সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি। স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সমাবেশে দলের সিনিয়র নেতারা বক্তব্য দেন।

সম্প্রতি ঘোষিত তিন দিনের কর্মসূচির প্রথম দিন পালিত হয়েছে আজ। এরপর বিভাগীয় শহর ও জেলা-উপজেলা পর্যায়ে সমাবেশ রয়েছে। বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া এভার কেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তাকে বিদেশে উন্নত চিকিৎসার দাবি জানিয়ে আসছে বিএনপি।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের সংগ্রাম করতে গিয়ে আজও হাজার হাজার নেতাকর্মী কারাগারে বন্দি। কবিরা বলেছেন, মানুষের মৃত্যু হয় একবার, দুবার নয়। ভয়ে মরে যাওয়ার চেয়ে সাহস করার প্রতিরোধ করতে হবে। তাই সব অন্যায়ের প্রতিরোধ করতে হবে। আর এর জন্য তরুণদের জেগে উঠতে হবে।’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আজ সমাবেশের মূল লক্ষ্য খালেদা জিয়ার মুক্তি। শহীদ জিয়া যখন নিজের জীবনবাজি রেখে স্বাধীনতা ঘোষণা করেন, তখন দুই শিশুসন্তানসহ গ্রেফতার হন খালেদা জিয়া। স্বামী যুদ্ধের ময়দানে, স্ত্রী বন্দি। তাই বলি, বেগম জিয়া দেশের প্রথম নারী মুক্তিযোদ্ধা। তিনি শুধু স্বাধীনতাযুদ্ধের সময় নয়, এ দেশের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারেও তার প্রধান ভূমিকা ছিল। তিনি ক্ষমতায় এসে সংসদীয় গণতন্ত্র কায়েম করেছেন।’

‘গণতন্ত্রের জন্য ১৫ বছর আন্দোলন করছি’ মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি তাকে আটক করে নিয়ে যায়। তার কয়েক দিন আগে হোটেল মেরিডিয়ানে তিনি বলেছিলেন, “আমাকে আটক করা হতে পারে। আপনারা রাজপথ ছেড়ে যাবেন না, যত দিন গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার হবে না, তত দিন সংগ্রাম চলবেই।”’

আন্দোলনে নিহত সবার ক্ষতিপূরণ চাই
ভারতের সঙ্গে চুক্তি প্রসঙ্গে ফখরুল বলেন, ‘চুক্তি নিয়ে শুধু বিএনপি নয়, দেশের আইন বিশেষজ্ঞরাও বলেছেন, এটি অসম চুক্তি। আমরা পানি চাই। আমরা পানির ন্যায্য হিস্যা চাই। মানুষ এ চুক্তিতে কী পেয়েছে? পেয়েছে ঘৃণা। সম্পদ লুণ্ঠন করার পাঁয়তারা।’

তিনি বলেন, আসুন, আজ সবাই খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে এক হই। আজ তারেক রহমানকে মিথ্যা সাজা দিয়ে দেশান্তরি করে রাখা হয়েছে। তার মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার চাই। সব রাজবন্দির মুক্তি চাই। আন্দোলনে নিহত সবার ক্ষতিপূরণ চাই।

সমাবেশে সভাপতির বক্তব্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, ‘২৮ তারিখে আমরা আন্দোলনের ফসল ঘরে আনতে পারিনি কারণ আমাদের মৃত্যুভয় ছিল। খালেদা জিয়া অসুস্থ হওয়ার কারণে পুরো দেশ আজ অসুস্থ হয়ে পড়েছে। সারা দেশ আজ চোর-বাটপারে ভরে গেছে। ইদানীং সোশ্যাল মিডিয়ার কারণে সরকারের অনেক অপকর্ম ফাঁস হচ্ছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘মওলানা ভাসানী বলেছিলেন, পাকিস্তানিদের থেকে মুক্ত হয়েছি দিল্লির দাসত্ব করার জন্য নয়। বিদেশে আমাদের বন্ধু থাকতে পারে, প্রভু নয়। আজ আওয়ামী লীগ ভারতের সেবাদাসে পরিণত হয়েছে।’

খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিতেই হবে জানিয়ে আব্বাস বলেন, ‘চোর-ডাকাতরা মুক্তি পেলেও তিনি মুক্তি পাচ্ছেন না। চিকিৎসকরাও বলেছেন এ দেশে খালেদা জিয়ার চিকিৎসা সম্ভব নয়। অথচ সরকার বলছে তিনি ভালো আছেন। খালেদা জিয়ার মুক্তির আন্দোলন শুরু হয়ে গেছে। আমরা আর সুচিকিৎসার দাবি করছি না। আমরা তার নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করছি। আওয়ামী লীগ আর গণতন্ত্র একসঙ্গে যায় না। খালেদা বন্দি মানে গণতন্ত্র বন্দি। খালেদা জিয়া মুক্তি পেলে মুক্তি পাবে গণতন্ত্র।