আন্দোলনের মূল খেলোয়াড় বিএনপি-জামায়াত: হানিফ

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ মাহবুব উল আলম হানিফ বলেছেন, ‘গত ২১ জুলাই আপিল বিভাগ যখন কোটা সংস্কার করে রায় দিলেন। দেশবাসী ভেবেছিলেন আন্দোলনের আর প্রয়োজন হবে না। কোটা সংস্কার নিয়ে ছাত্রদের যা প্রত্যাশা ছিল, তার চেয়ে বেশিই পেয়েছে। কিন্তু এরপর নতুন মাত্রায় সহিংসতা শুরু হলো। কারণ বিএনপি-জামায়াত সরকার পতনের এক দফা দাবি বাস্তবায়নে কৌশলে ছাত্রদের পেছনে অবস্থান নিলো। এই আন্দোলনে মূল খেলোয়াড় তো ছাত্র নয়, মূল খেলোয়াড় বিএনপি-জামায়াত।’

সোমবার (২৯ জুলাই) জাতীয় প্রেসক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন গৌরব ’৭১ আয়োজিত ‘সন্ত্রাস, নাশকতা ও বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট’ শীর্ষক মুক্ত আলোচনায় তিনি এসব কথা বলেন।

হানিফ বলেন, ‘আমরা একটা জায়গায় ভুল করে যাচ্ছি। এটা ছাত্র আন্দোলন নয়, ছাত্রদের ঢাল হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে। বিএনপি-জামায়াত যখন দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন বানচাল করতে ব্যর্থ হলো, তারপর আমরা ভেবেছি বিপদমুক্ত, কিন্তু না। তারা নির্বাচন বানচালে ব্যর্থ হয়ে সরকার গঠনের পর নতুন ষড়যন্ত্র শুরু করে।’

তিনি আরও বলেন, ‘কোটা আন্দোলনে সৃষ্ট সহিংসতায় ১৪৭ জন প্রাণ হারিয়েছেন। এর মধ্যে শিক্ষার্থী আছে, চার জন পুলিশ, চার জন সাংবাদিক, আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের ১৯ জন মারা গেছেন। এ ছাড়া শ্রমিক, রিকশাচালক, হকারও মারা গেছে। এসব মৃত্যু ও ধ্বংসযজ্ঞ কাম্য নয়।’

আলোচনায় সংসদের হুইপ ও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট সানজিদা খানম বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা কখনোই বৈষম্যকে পাত্তা দেন না। দল-মতনির্বিশেষে সবার জন্য ব্যবস্থা করেছেন, তাহলে কেন এই অবস্থা হবে? আমাদের বোধোদয় হওয়া দরকার। আসুন, সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে মাঠে থাকি। শিক্ষার্থীদের দাবি পূরণ হয়েছে; তারা যেন ঢাল হিসেবে ওই অপশক্তিকে আর সুযোগ না দেয়।’

জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিন বলেন, ‘ছাত্রদের ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে দুষ্কৃতকারীরা যারা আওয়ামী লীগকে সহ্য করতে পারে না, যারা বাংলাদেশের উন্নয়ন-অগ্রযাত্রা দেখতে চায় না, তারা এমন ধ্বংসযজ্ঞ চালাতে পারে। যারা আন্দোলনকে উসকে দিয়েছে, তারা বিদেশে সুরক্ষিত, তাদের সন্তানরা বিদেশে সুরক্ষিত, অথচ তারা দেশে শিক্ষার্থীদের উসকে দিচ্ছে।’

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. মশিউর রহমান বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষ শক্তির সবচেয়ে বড় দুর্বলতা হলো, মুক্তিযুদ্ধের প্রতিপক্ষকে চিহ্নিত করে বিচারের আওতায় না আনা, বরং ক্ষেত্রবিশেষে উদারভাবে পৃষ্ঠপোষকতা করি। শুধু দেশের অর্থনৈতিক বিকাশ নিশ্চিত করলেই হবে না, সাংস্কৃতিক জাগরণের মধ্য দিয়ে অশুভ শক্তিকে প্রতিহত করতে হবে।’

জাতীয় প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক শ্যামল দত্ত বলেন, ‘নাশকতার ষড়যন্ত্র ছিল বলা হচ্ছে, কিন্তু এই নাশকতা কীভাবে হলো? এটি দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রের অংশ। ৯ ও ১৭ জুলাই বিদেশি মিশনে আন্দোলনকে চাঙা করার জন্য বৈঠক হয়েছে। গোয়েন্দাদের কাছে তথ্য ছিল। তথ্য থাকা সত্ত্বেও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। দেশের অধিকাংশ জনগণ কোটা সংস্কারের পক্ষে ছিল। এটা গোড়াতেই সমাধান করা যেতো। আমরা বুঝতে পারিনি তৃতীয় কোনও পক্ষ আন্দোলনে ঢুকে পড়েছে। ষড়যন্ত্রের পরিকল্পনা অনেক দিন ধরেই হচ্ছে, আমরা বুঝতে পারিনি।’

আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজল্যাণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. শাহীনুর রহমান, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সহসভাপতি ঝুনা চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক আহকাম উল্লাহ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক রহিমা খাতুন মুক্তা, গৌরব ’৭১-এর সভাপতি এস এম মনিরুল ইসলাম মনি, সাধারণ সম্পাদক এফ এম শাহীন প্রমুখ।