অর্থপাচার রোধেই কালোটাকা সাদা করার সুযোগ: ওবায়দুল কাদের

অর্থপাচার রোধেই প্রস্তাবিত ২০২৪-২৫ অর্থ বছরের বাজেটে কর দিয়ে কালোটাকা সাদা করার সুযোগ দেওয়া হয়েছে বলে মনে করে আওয়ামী লীগ। দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘পাচারের অর্থ সবার অগোচরেই চলে যায়। এই পাচার থেকে দেশকে রক্ষা করার জন্য এই ব্যবস্থা করা হচ্ছে। এরফলে সেই অর্থও মূল ধারায় ব্যাংকে ফিরে আসবে বলে আমরা মনে করছি।’

শনিবার (৮ জুন) বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বাজেট নিয়ে আওয়ামী লীগের এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি।

কালোটাকা সাদার করার সুযোগ দেওয়ার বিষয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘১৫ শতাংশ কর দিয়ে অপ্রদর্শিত আয় আমরা অর্থনীতির মূল ধারায় আনার ব্যবস্থা করছি। এর ফলে ব্যাংকিং সিস্টেমে অর্থপ্রবাহ বাড়বে। অনেকের হাতে গোপন থাকা টাকা উদ্ধার করতে বাজেটে কালোটাকা সাদা করার সুযোগ আছে।’

এই সুযোগ দেওয়ার মাধ্যমে অর্থ উপার্জনের ক্ষেত্রে অন্যায় ও অবৈধ কাজের শাস্তি মওকুফের সুযোগ নেই বলেও উল্লেখ করেন ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, ‘সেটা (অন্যায় কাজ) ফৌজদারী অপরাধ, সেটার বিচার প্রচলিত আইনেই হবে। অন্যের মাধ্যমে ট্যাক্স রিটার্ন তৈরি করাসহ বিভিন্ন কারণে অনেকের সব সম্পদের বিবরণ থাকে না। এসব ভুল সংশোধন করার সুযোগ থাকতে হবে।’

‘অপ্রদর্শিত অর্থ ও সম্পদ মূল ধারায় এনে ভবিষ্যতে তার উপর আয় থেকে সরকার আদায় করে রাজস্ব আহরণ বাড়াতে চায়’, যোগ করেন ওবায়দুল কাদের।

কালোটাকা সাদার করার সুযোগ দেওয়া আওয়ামী লীগের নির্বাচনি ইশতেহারের সঙ্গে সাংঘর্ষিক বলে সিপিডির মন্তব্যের বিষয়ে জানতে চাইলে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘অপ্রদর্শিত অর্থ ব্যাংকে আনার ব্যবস্থা করছি। ব্যাংকে আসলে ট্যাক্সের সুবিধা আরও বাড়বে। প্রধানমন্ত্রী যেটা বলছেন, মাছ ধরতে গেলে আধার (খাবার) দিতে হবে। সেই কথাই বাস্তব। এখন সিপিডি কী বললো, টিআইবি কী বললো, সুজন কী বললো; এসব নিয়ে আমাদের কোনও মাথাব্যথা নেই। ওরা সবাই বিএনপির সুরে সুর মিলিয়ে কথা বলে। কথার যাদের বাস্তব কর্মকাণ্ডে মিল নেই। বিএনপি নিজেরাই হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার করে তাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন লন্ডনে বসে আরাম আয়শে দিনযাপন করছে। সেই টাকার হিসেব মির্জা ফখরুল সাহেবদের দিতে হবে।’

অপর এক প্রশ্নের জবাবে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘অর্থনীতিবিদেরাও এখন পোলারাইজড হয়ে গেছে। এখানে বিএনপি মার্কা অর্থনীতিবিদও আছে। তারা তাদের ক্ষোভ-অসন্তোষ, ক্ষমতায় না থাকার বেদনা, ক্ষমতায় থাকলে প্রাপ্তির সম্ভাবনা থাকে; সেটা ভেস্তে গেছে। সেটা হয়েছে তাদের ভুলের কারণে। আমাদের উপদেষ্টা পরিষদেও অনেক অর্থনীতিবিদ রয়েছে, শুক্রবারের বৈঠকে সবাই এক বাক্যে এ বাজেটকে পরিমিত ও সাহসী বাজেট বলে অ্যাখ্যায়িত করেছেন। একটা চ্যালেঞ্জ আছে, সেটা হচ্ছে বাস্তবায়নের। সেটা অতিক্রম করার জন্য সরকার কাজ শুরু করেছে।’

বাজট নিয়ে বিএনপির সমালোচনার জবাবে তিনি বলেন, ‘বিএনপি আজ বড় বড় কথা বলে। অর্থবাজারের কথা বলে, কালোটাকার কথা বলে, দেশকে গিলে খাওয়ার কথা বলে— তাদের সর্বশেষ বাজেট ছিল ৬৮ হাজার কোটি টাকা। তারপরও বাজেটের আগে সাইফুর রহমান সাহেবকে বিভিন্ন অর্থনৈতিক ফোরামে দৌড়াতে হয়েছিল ভিক্ষার ঝুলি নিয়ে। আমাদের সময়ে বাজেট পূর্ববর্তী সময়ে কোনও অর্থমন্ত্রীকে বিদেশে গিয়ে ভিক্ষা চাইতে হয়নি। এতে বুঝতে পারেন দেশটা কোথা থেকে কোথায় এসেছে।’

সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদ ও সাবেক সেনাপ্রধান আজিজ আহমেদের দুর্নীতির বিচার চললেও দুর্নীতির অভিযোগ থাকা আওয়ামী লীগ নেতাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আপনারা (সাংবাদিক) যাদের দুর্নীতিবাজ ভাবছেন, তাদের তালিকাটা দেন। আমরা দুদককে বলবো তদন্ত করতে।’

‘দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে কোম্পানীগঞ্জে (ওবায়দুল কাদেরের নির্বাচনি এলাকা) যারা ভোট দিয়েছেন, সেখানে নারীদের দুইশ-পাঁচশ টাকা দিয়ে লাইনে দাঁড় করানো হয়েছিল’, শুক্রবার এমন মন্তব্য করেছিলেন ওবায়দুল কাদেরের ছোট ভাই ও বসুরহাট পৌর মেয়র আবদুল কাদের মির্জা। এ বিষয়ে মন্তব্য চাওয়া হলে কাদের বলেন, ‘আমি এ প্রশ্নের কোনও মন্তব্য করতে চাই না।’

সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কামরুল ইসলাম, মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ, সাংগঠনিক সম্পাদক বিএম মোজাম্মেল হক, সুজিত রায় নন্দী, প্রচার সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ, কৃষি সম্পাদক ফরিদুন্নাহার লাইলী, দফতর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া, উপ-দফতর সম্পাদক সায়েম খান প্রমুখ।