জন্মদিনে শহীদ শেখ জামালকে শ্রদ্ধা

বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ লেফটেন্যান্ট শেখ জামালকে শ্রদ্ধা জানিয়েছে আওয়ামী লীগ। বৃহস্পতিবার (২৮ এপ্রিল) জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দ্বিতীয় পুত্র শেখ জামালের ৬৯তম জন্মদিন উপলক্ষে বনানী কবরস্থানে তার সমাধিতে শ্রদ্ধা জানানো হয়।

প্রথমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষে ও পরে দলের পক্ষে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। এ সময়ে দলের কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

এদিকে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে সাংবাদিকদের কাছে প্রতিক্রিয়া ব্যক্তকালে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উন্নয়ন-অর্জনে ঈর্ষান্বিত হয়ে বিএনপিসহ অনেকেই তাকে হত্যা করার ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে।

দেশের রাজনীতিতে গণতন্ত্র এবং প্রগতির পথে বাধাই হচ্ছে বিএনপি—উল্লেখ করে ওবায়দুল কাদের বলেন, ১৫ আগস্টের হত্যাকাণ্ডে জিয়াউর রহমানের সংশ্লিষ্টতা এবং পরবর্তী সময়ে দেশের রাজনীতিতে কর্মসম্পর্কের যে অলঙ্ঘনীয় দেয়াল তা  গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়ার পথে সবচেয়ে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

কাদের মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের সকল গণতন্ত্র দেশপ্রেমিক শক্তিকে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহবান জানিয়ে বলেন, হত্যা ও ষড়যন্ত্রের রাজনীতি বাংলার মাটি থেকে চিরতরে বন্ধ করে দিতে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।

গত কয়েকদিনে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সরকারবিরোধী বক্তব্যের জবাবে তিনি বলেন, বিএনপি ক্ষমতায় থাকাকালীন দেশকে ধ্বংস করে গেছে, তাই তারা এখন শুধু ধ্বংসই দেখে, এবং এটাই তারা বুঝিয়ে দিচ্ছে—এখনও ধ্বংসই চায় বিএনপি।

বিএনপি'র জাতীয় সরকারের দাবি প্রসঙ্গে ওবায়দুল কাদের বলেন, তাদের জাতীয় সরকারের নামে গতবার লেজে গোবরে অবস্থা ছিল, এবারও বিএনপির জাতীয় সরকার কি হবে তা তাদের রাজনীতি থেকেই বুঝা যায়।

আওয়ামী লীগের শ্রদ্ধা নিবেদনের পর দলের ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের নেতৃবৃন্দ, দলের সহযোগী সংগঠন ও বিভিন্ন সামাজিক ও ক্রীড়া সংগঠনের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা জানানো হয়।

শহীদ শেখ জামাল ১৯৫৪ সালের এদিন গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গিপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ঢাকা রেসিডেন্সিয়াল মডেল কলেজ থেকে মাধ্যমিক এবং ঢাকা কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেন। তিনি ছিলেন সংস্কৃতিপ্রেমী এবং একজন ক্রীড়াবিদ।

১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় পরিবারের অন্য সদস্যদের সঙ্গে শেখ জামালও গৃহবন্দি হন। পরে সেখান থেকে পালিয়ে তিনি মহান মুক্তিযুদ্ধে সম্মুখসমরে নেতৃত্ব দেন। শেখ জামাল ধানমন্ডি থেকে অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ পথ পাড়ি দিয়ে ভারতের আগরতলা পৌঁছান এবং সেখানে মুজিব বাহিনীতে যোগদান করেন। প্রশিক্ষণ শেষে মুক্তিযুদ্ধের ৯ নম্বর সেক্টরে সম্মুখসমরে অংশগ্রহণ করেন।

শেখ জামাল ছিলেন একজন চৌকস সেনা অফিসার। তিনি ছিলেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর লং কোর্সের প্রথম ব্যাচের কমিশন্ড অফিসার। ১৯৭৪ সালে শেখ জামাল যুগোস্লাভিয়ার মিলিটারি অ্যাকাডেমিতে ক্যাডেট হিসেবে প্রশিক্ষণ ক্যাম্পে অংশগ্রহণ করেন। এরপর ব্রিটেনের স্যান্ডহার্স্ট অ্যাকাডেমি থেকে প্রশিক্ষণ শেষে দেশে ফিরে ঢাকা সেনানিবাসে দ্বিতীয় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে সেকেন্ড লেফটেন্যান্ট পদে যোগদান করেন।

দ্বিতীয় ইস্ট বেঙ্গলে চাকরিকালে স্বল্প সময়েই অফিসার ও সৈনিকদের মাঝে তিনি অসাধারণ পেশাগত দক্ষতা ও আন্তরিকতার ছাপ রেখেছিলেন। কয়েক সপ্তাহেই শেখ জামাল অফিসার ও সৈনিকদের মাঝে তাদেরই একজন হয়ে যান। ট্রেনিং গ্রাউন্ডে, রণকৌশলের ক্লাসে, অবস্টাকল ক্রসিংয়ে অংশ নিয়ে সৈনিকদের মুগ্ধ করেন। ব্যাটালিয়ন বক্সিং টিমের সদস্যদের প্রশিক্ষণ দেন তিনি।

১৯৭৫ সালের ১৪ আগস্ট ব্যাটালিয়ন ডিউটি অফিসার হিসেবে ক্যান্টনমেন্টে নিজ দায়িত্ব পালন করেন তিনি। ওই দিন রাতে ক্যান্টনমেন্ট থেকে ফিরে আসেন ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বাড়িতে। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট কালরাত্রিতে ঘাতকের নির্মম বুলেটের আঘাতে পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের সঙ্গে নিহত হন শেখ জামাল।