বাড়াবাড়ি করবেন না, কাউকে ক্ষমা করা হবে না: নেতাকর্মীদের ওবায়দুল কাদের

আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, আওয়ামী লীগকে প্রস্তুত করুন। তার আগে বলবো কেউ বাড়াবাড়ি করবেন না। সারা বাংলাদেশে সবার উদ্দেশে বলছি বাড়াবাড়ি করবেন না। ক্ষমতার দম্ভ কেউ দেখাবেন না। কাউকে ক্ষমা করা হবে না।

দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শূন্য সহিষ্ণুতা নীতির স্মরণ করিয়ে দিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, দুর্নীতিবাজদের কারো ছাড় নেই, কারো ক্ষমতা নেই। এটা শেখের বেটি। শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে দেখিয়ে দেবেন দুর্নীতির বিরুদ্ধে তিনি কতটা কঠোর হতে পারেন।

শনিবার (২৯ জুন) বিকালে আওয়ামী লীগের ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন তিনি।

ওবায়দুল কাদের বলেন, দুর্নীতিবাজরা এদেশে বেশি দুর্নীতি দুর্নীতি বলে। যারা দুর্নীতি নিয়ে কথা বলে তাদের মধ্যে কত যে দুর্নীতিবাজ! একটু খুঁজে দেখেন, পেয়ে যাবেন, আশেপাশেই আছে। দুর্নীতিবাজের ক্ষমতা নেই।

বিএনপির মুখে দুর্নীতির কথা মানায় না মন্তব্য করে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, বিএনপি মানেই দুর্নীতিবাজ। আর জাতীয়তাবাদী দুর্নীতিবাজ দল। তারেক রহমান দণ্ডপ্রাপ্ত পলাতক আসামি। কিসের দণ্ডপ্রাপ্ত? অভিযোগ, হাজার কোটি টাকাপাচার। অভিযোগ দুর্নীতি। বিএনপি নেতারা দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বলে, লজ্জা করে না। আপনাদের এক নম্বর নেতা তো বড় দুর্নীতিবাজ। হাজার হাজার কোটি টাকাপাচার করে আজ লন্ডনে বসে বিলাসী জীবন কাটাচ্ছে। নির্বাচিত সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে। ওই দুর্নীতিবাজকে দেশে ফিরিয়ে আনতে হবে। বিচার করতে হবে। সব তদন্ত হবে। 

বিএনপি নেতাদের উদ্দেশ করে তিনি বলেন, আন্দোলন করছেন পরিষ্কার বলে দিতে চাই, করেন আন্দোলন। তবে আন্দোলনের সহিংসতার উপাদান যুক্ত হলে খবর আছে। আবারও খেলা হবে। খেলা হবে দুর্নীতির বিরুদ্ধে, খেলা হবে অর্থপাচারের বিরুদ্ধে, লুটপাটের বিরুদ্ধে, জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে, সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে। নেতাকর্মীদের প্রস্তুত থাকার আহ্বান জানান ওবায়দুল কাদের।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের জনগণের ভোট ও ভাতের অধিকার প্রতিষ্ঠার অগ্রণী ভূমিকা পালনকারী প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। আমাদের শিকড় বাংলাদেশের মাটির অনেক গভীরে। আমাদের জন্ম জনতার মধ্যে থেকে।

ওবায়দুল কাদের বলেন, ৭৫ বছর এই প্রতিষ্ঠানের বয়স। দীর্ঘ সংগ্রাম, আন্দোলন, ঝড়, অন্ধকার, স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে দীপ্ত পায়ে এগিয়ে যাওয়ার আরেক নাম আওয়ামী লীগ। আমরা মৃত্যুর মিছিলে দাঁড়িয়ে জীবনের জয়গান গাই। আমরা ধ্বংসস্তূপের ওপর দাঁড়িয়ে সৃষ্টির পতাকা ওড়াই। আমাদের শিকড় বাংলাদেশের মাটির অনেক গভীরে। আমাদের জন্ম জনতার মাঝ থেকে। আমরা অস্ত্র উঁচিয়ে শেষ রাতে ক্ষমতা দখলকারী দল নই। জনগণের মাঝে থেকে, জনগণ নিয়ে আমরা মুক্তিযুদ্ধ করেছি বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে। ভোট ও ভাতের অধিকার প্রতিষ্টিত করেছি বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনার সৃষ্টিশীল নেতৃত্বে।

প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী নিয়ে সাংবাদিকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আমরা বলেছিলাম বছরব্যাপী উদযাপন করবো। সেখানে খবর হয় আমরা নাকি পাল্টাপাল্টি করছি। গতকাল আমরা সাইকেল র‌্যালি করেছি, বিএনপির কী কিছু ছিল? তাহলে কেন এই অপবাদ আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে দিচ্ছেন? আমরা সারা বছর প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন করবো। আমাদের কেন্দ্র থেকে ইউনিয়ন পর্যন্ত এই কর্মসূচি পালন করা হবে। আগস্ট মাসের পরে জেলা পর্যায়ে সমাবেশ হবে। সে সমাবেশে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা বক্তব্য রাখবেন।

তিনি বলেন, বিএনপি বড় বড় কথা বলে। বিএনপি নেতাদের আন্দোলনে যত জোর নেই মুখের বিষে যত জোর। তাদের মুখের বিষ উগ্র। কিন্তু তাদের আন্দোলন কী? তাদের আন্দোলন ভুয়া। আন্দোলন দুই কূলের গাঙ। এতে আওয়ামী লীগ সরকার এটুকুও বিচলিত নয়।

ওবায়দুল কাদের বলেন, কী বলবো, বিএনপিতে এখন আতঙ্কের নাম তারেক রহমান। মধ্যরাতে টেমস নদীর পাড় থেকে ফরমান আসে। একজন গেলো, আরেকজন এলো- মধ্যরাতের ফরমান। তারেক রহমানের এ ফরমানে ফখরুল ইসলাম, গয়েশ্বর বাবু কোথায় যান? কেউ জানে না? এই জন্যই এখন তারেক রহমানের বন্দনা করছেন। তারেক বন্দনা বেড়ে গেছে বিএনপিতে।

তিনি বলেন, লন্ডনে বসে কর্মসূচি দেয় মেড ইন লন্ডন। নতুন নেতৃত্ব পাঠায়, ফরমান আকারে। এই নেতৃত্বের নাম মেড ইন লন্ডন। লন্ডনে বসে নেতা বানায়, কর্মসূচি দেয়। এই মেড ইন লন্ডন কর্মসূচি মানে কী? বাংলাদেশের জনগণ এই মেড ইন লন্ডন কর্মসূচি মানে? উপস্থিত নেতারা না বলে উত্তর দেন। মানবে? না। খেলা কিন্তু হবে, ছেড়ে দেওয়া হবে না।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির প্রথমবার ক্ষমতায় আসার পর বিএনপি নেতাদের অভিনন্দন জানানোর কথা স্মরণ করিয়ে তিনি বলেন, দালালি করতে চেয়েছিলেন পারেননি, পাত্তা পাননি। যত দোষ নন্দ ঘোষ আওয়ামী লীগের। আমাদের সঙ্গে বন্ধুত্ব। আর আপনারা দাস হয়েও ভারতের সমর্থন চান। ক্ষমতার জন্য আপনাদের যে কারো দাসত্ব মেনে নিতে কোনও আপত্তি নেই। আমরা বন্ধু আছি বন্ধু থাকবো। বিদেশে সবাই আমাদের বন্ধু কেউ প্রভু নেই। আপনাদের প্রভু আছে। প্রভুরা ক্ষমতায় বসাতে পারেনি। মনে আছে কথায় কথায় নিষেধাজ্ঞা কথায় কথায় ভিসানীতি। মিয়ান আরেফি নাটক, বাইডেনের উপদেষ্টা। ভুয়া ভুয়া ডাবল ভুয়া। মিয়ান আরেফির মুক্তি কেন চায় না মির্জা ফখরুল, এমন প্রশ্নও রাখেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক।

ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু আহমেদ মন্নাফির সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আব্দুর রাজ্জাক, মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, কামরুল ইসলাম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সাঈদ খোকন, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির প্রমুখ।