‘নীরব’ থাকবেন মামুনুল, শাপলা চত্বরের ঘটনা বিশ্লেষণের সিদ্ধান্ত

কারাগার থেকে মুক্তি পাওয়ার পর প্রথম রাজনৈতিক বৈঠকে যোগ দিয়েছেন বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হক। শনিবার (১৮ মে) রাজধানীর পুরানা পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের বৈঠকে আলোচনায় অংশ নিয়েছেন তিনি। এই বৈঠকে মামুনুল হককে নেতৃত্বে রেখে দলের ভবিষ্যৎ কর্মপরিকল্পনা ও তার ভিত্তিতে কর্মসূচি নির্ধারণ ও প্রস্তাবের জন্য একটি বিশেষ কমিটি করা হয়েছে।

শনিবার রাত ১০টার দিকে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতার সঙ্গে বাংলা ট্রিবিউনের আলাপ হয়। তারা জানান, বৈঠকে মামুনুল হক কারাগারের কথা উল্লেখ করেন। পাশাপাশি আরও যারা যারা কারাগারে ছিলেন বা আছেন, তাদের অভিজ্ঞতা ও প্রসঙ্গ তুলে ধরেন।

বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের একাধিক নেতা জানান, গত ৩ মে গাজীপুরের কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে মুক্তির পর থেকে সাক্ষাৎপ্রার্থীদের সঙ্গে সৌজন্য বিনিময় করছেন মামুনুল হক। প্রতিদিনই ভক্তরা তার কাছে এসে দোয়া ও অভিজ্ঞতা বিনিময় করছেন।

মামুনুল-ঘনিষ্ঠ একাধিক আলেম এ প্রতিবেদকের কাছে দাবি করেন, আপাতত মামুনুল হকের লক্ষ্য ২০১৩ সালের ৫ মে সংঘটিত হেফাজত ট্রাজেডির বিচার ও বিশ্লেষণ। এই প্রক্রিয়া শুরু করার পাশাপাশি তিনি ‘ইসলামি রাষ্ট্র গঠনের রাজনীতি’কে সামনে রেখেই সক্রিয় হবেন।

২০২১ সালের ১৮ এপ্রিল রাজধানীর মোহাম্মদপুর জামিয়া রাহমানিয়া আরাবিয়া মাদ্রাসা থেকে গ্রেফতার হয়েছিলেন মামুনুল হক। তিনি হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব। তার দলের একাধিক নেতার ভাষ্য, স্বাধীনতার পর ৫ মে শাপলা চত্বরের ঘটনাটি উল্লেখযোগ্য। তবে এ ক্ষেত্রে হেফাজতের বর্তমান নেতৃত্বের অবস্থান কী হতে পারে, এ নিয়ে অবশ্য সন্দেহ প্রকাশ করেন প্রভাবশালী এক নেতা।

২০১৩ সালে শাপলা চত্বরের ঘটনার পর হেফাজতের পক্ষ থেকে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছিল। এ তথ্য জানিয়ে হেফাজতে ইসলামের সেই তদন্ত কমিটির একজন সদস্য বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘গণমাধ্যমে সেটি প্রচার হওয়ার পর কিছু সুনির্দিষ্ট কারণে তদন্ত কমিটি এগোতে পারেনি। কিছু চাপ ছিল। এরপর তদন্ত কমিটি কোনও কার্যক্রম করেনি। কোনও প্রতিবেদনও দেয়নি।’

মজলিসের এক নেতা বলেন, ‘প্রকাশ্য কর্মসূচিতে আসতে আরও সময় লাগবে। আগামী শীতের আগে প্রকাশ্য সমাবেশে অংশগ্রহণের বিষয়টি অনিশ্চিত।’

জানতে চাইলে দলের যুগ্ম মহাসচিব আতাউল্লাহ আমীন এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘দলের মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হক বৈঠকে অংশগ্রহণ করেছেন। বক্তব্য দিয়েছেন। আমাদের নির্বাহী কমিটি দেশের চলমান রাজনৈতিক ইস্যুসহ বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলেছেন। আজ পর্যালোচনা করা হয়েছে, কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি। আমরা পুরো পরিস্থিতি অবজারভেশন করছি। আজকের বৈঠকে রাজনৈতিক ও সাংগঠনিক বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।’

তবে মামুনুল হকের ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র জানায়, মামুনুল হক মুক্তি পাওয়ার পর থেকে নীরব রয়েছেন। তিনি সংবর্ধনা ও আয়োজনে কোনও সায় দেননি। কিছুদিনের মধ্যে তার চট্টগ্রাম যাওয়ার কথা রয়েছে। তবে আপাতত সরকার ও চলমান রাজনীতি নিয়ে মামুনুল হক খুব একটা সরব হবেন না বলে মনে করে সূত্রটি।

এসব বিষয়ে টানা কয়েক দিন মাওলানা মামুনুল হকের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করা হলেও তিনি কোনও সায় দেননি। তার পক্ষ থেকে ঘনিষ্ঠজনরা দাবি করেছেন, ‘আপাতত তিনি গণমাধ্যমে কথা বলবেন না। আগে পরিস্থিতি দেখবেন, তারপর সিদ্ধান্ত নেবেন। এ ছাড়া মাহফিল শুরু হওয়ার সময় আরও দূরে।’

উল্লেখ্য, ২০১৩ সালের ৫ মে শাপলা চত্বর মুভমেন্টকে কেন্দ্র করে মামুনুল হকের বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে। তার বিরুদ্ধে মোট ৪১টি মামলা রয়েছে। তিনি এসব মামলায় জামিনে রয়েছেন।

শনিবার বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের বৈঠকে অংশ নেওয়া এক নেতা বলেন, ‘আমরা চলমান রাজনৈতিক যেসব ইস্যু, বিশেষ করে ব্যাংক লুটপাট, দেশের অর্থনীতি, ফরিদপুরে দুজনকে হত্যা, সীমান্তে হত্যাকাণ্ডসহ বিভিন্ন দাবিতে কর্মসূচি চালিয়ে যাবো। তবে আমাদের ভবিষ্যৎ রাজনীতি কী হবে, কর্মসূচি কী হবে, দেশে চলমান ভারতবিরোধী ইস্যু, এসব বিষয়ে পর্যালোচনা করে সিদ্ধান্ত নেবে দল।’

বৈঠকে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমির ইসমাঈল নুরপুরীও এ প্রসঙ্গে কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘ভারত বাংলাদেশের শিক্ষা-সংস্কৃতি ধ্বংস করে দিচ্ছে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা স্বার্বভৌমত্ব ও ইসলাম টিকিয়ে রাখতে হলে ভারতের আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে এবং ভারতের দালালদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।’

মজলিসের কেন্দ্রীয় অফিস ও সাংগঠনিক সম্পাদক আজিজুর রহমান হেলালের সই করা দলের পাঠানো প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, দলের আমির আরও বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংকে কী হচ্ছে, আমরা জানি না। মিডিয়ার মাধ্যমে প্রকাশ পেয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির পর পাচার করে যাচ্ছে এবং সাংবাদিকদের প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না। বিষয়টি দুঃখজনক। এভাবে দেশের অর্থনীতি ধ্বংস করা জনগণ মেনে নেবে না।’