রাজধানীর বেশকিছু রাস্তায় রবিবার (১৫ অক্টোবর) সকাল থেকে দেখা যাচ্ছে বড় বড় বিলবোর্ড। যেখানে বিএনপি-জামায়াতের ২০০১ থেকে ২০০৬ শাসনামলের নানা সহিংসতার চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। এমনভাবে স্থাপন করা হয়েছে যাতে রাস্তা পার হতে গিয়ে হঠাৎ মনে হবে সেই সহিংসতা এখনই ঘটছে কোথাও। কে বা কারা স্থাপন করেছে সে বিষয়ে কোনও ডিসক্লেমার বিলবোর্ডে না থাকলেও রাস্তার আম জনতা বলছেন, এই ভয়াবহ চিত্র তাদের মনে দুই ধরনের প্রভাব ফেলছে। একদিকে সেই পুরনো ভীতির দিনগুলো মনে পড়ছে, আরেকদিকে মনে দাগ কাটলে রাতে ঘুম না হওয়ার শঙ্কা আছে।
রাজধানীর আগারগাও, শাহবাগ, মৎস ভবন, হাইকোর্ট মোড়, গুলিস্তানসহ বেশকিছু জায়গায় ক্ষতবিক্ষত শরীরের পোস্টার। অ্যাক্টিভিস্টরা বলছেন, চলার পথে মানুষ দেখছে কী ভয়াবহতার ভেতর দিয়ে যেতে হয়েছে বাংলাদেশকে। একজন পূর্ণিমা, একজন গোপাল কৃষ্ণ মুহুরির কাছে জাতির মাথা নত করার দরকার আছে।
শাহবাগে দাঁড়িয়ে এক রিকশাচালক অনেকক্ষণ ধরে দেখছিলেন বিলবোর্ড। কী দেখেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের ম্যাপের মধ্যে অনেকগুলা লাশের ছবি। এগুলা কবে ঘটসে? ছবিটাই দেখছিলাম। তিনি পায়ের একটা অংশ দেখিয়ে বলেন, এর আগের নির্বাচনের আগ দিয়া (২০১৪) বাসের আগুনে পড়ে আমার পা পুড়ে যায়। আমরা গরীব মানুষ অতকিছু বুঝি না। খালি দোয়া করি আর কারোর যেন এসব না হয়। পোড়ার ক্ষত খুব কষ্ট।’
আগারগাঁও চার রাস্তার সামনে রাখা আছে এই বিলবোর্ড। সেখানে দেখা যায় একজন ট্রাফিক সার্জনসহ কয়েকজন দাঁড়িয়ে দেখছেন। তাদের একজন তাবারুক হোসেন। তিনি বলেন, ‘সামনে নির্বাচন। এসব নানা কিছু রাজনৈতিক দলগুলো পাবলিককে মনে করিয়ে দিতে চাইবে। এটার দরকারও আছে। কিন্তু অনেক ভীতিকর হয়ে গেছে। অনেকে ভয় পেতে পারে।’
ভয় পাওয়াই জরুরি উল্লেখ করে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবীর বলেন, ‘২০০১ এর নির্বাচন পরবর্তী যে সহিংসতা এবং তারপর আবার ২০১৪ তে যে আগুন সন্ত্রাস এগুলো কি মানুষ ভুলে যেতে পারে? তারপরও তাদের সামনে বিকল্প হিসেবে বিএনপি কীভাবে আসতে পারে আমার মনে প্রশ্ন জাগে।’
তিনি বলেন, ‘বিএনপি-জামায়াত যা করতে পারে সেসব বারবার মনে করিয়ে দেওয়া জরুরি বলেই আমার মনে হয়।’
দেশজুড়ে ২০০১ থেকে ২০০৬ সালে জামায়াত-বিএনপির যে পৈশাচিকতা তার সাক্ষ্য বহন করছে কিছু বিলবোর্ড। ২০ বছর আগের সহিংসতা যেন তাজা হয়ে ওঠেছে স্মৃতিতে। কেবল আওয়ামী লীগ সমর্থন করার কারণে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন হাজারও মানুষ, চলেছে অবাধে সংখ্যালঘু নির্যাতন, ধর্ষণ। এই ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতা যেন না হয় সেই কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার বক্তব্যে প্রায়শ দেশবাসীকে সতর্ক করে থাকেন।
গত ১২ আগস্ট দেশবাসীকে ‘বিএনপি-জামায়াত থেকে সাবধান’ থাকার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, ‘খুনি, দুর্নীতিবাজ, সন্ত্রাসী, জঙ্গিবাদ, মানুষ হত্যাকারী, গ্রেনেড হামলাকারী, ১০ ট্রাক অস্ত্র চোরাকারবারি বিএনপি থেকে দেশবাসী সাবধান। জামায়াত বুদ্ধিজীবী হত্যাকারী, যুদ্ধাপরাধী, নারী ধর্ষণকারী, লুটপাটকারী, একাত্তরের অপরাধী... যাদের আমরা শাস্তি দিয়েছি; তাদের থেকেও দেশবাসী যেন সাবধান থাকে।’