খালেদা জিয়ার চ্যারিটেবল মামলার আপিল নিয়ে যা ভাবছেন আইনজীবীরা

খালেদা জিয়া

 

জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় সাজার রায়ের বিরুদ্ধে খালেদা জিয়ার আপিলের রায় হলেও চ্যারিটেবল মামলার আপিল আড়াই মাসেরও বেশি সময় ধরে শুনানির জন্য ঝুলে আছে। মামলার বাদীপক্ষের আইনজীবীদের দাবি,আপিল শুনানি করতে হলে খালেদা জিয়ার আইনজীবীদেরকেই এগিয়ে আসতে হবে। অপরদিকে,আপিলটির শুনানির বিষয়ে দ্রুতই অগ্রসর হওয়ার কথা ভাবছেন খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা।  

জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে সাত বছরের কারাদণ্ড দেন বিচারিক আদালত। ২০১৮ সালের ২৯ অক্টোবর পুরান ঢাকার নাজিমউদ্দিন রোডের পরিত্যক্ত কেন্দ্রীয় কারাগারে স্থাপিত ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৫ এর বিচারক আখতারুজ্জামান এ রায় দেন। এরপর গত ১৮ নভেম্বর এ মামলায় তার জামিন ও খালাস চেয়ে হাইকোর্টে ৪১ পৃষ্ঠার আপিল দাখিল করা হয়। এর পাশাপাশি আপিলের সঙ্গে বিচারিক আদালতের ৬৩২ পৃষ্ঠার রায় সংযুক্ত করা হয় এবং আপিলে ২০টি গ্রাউন্ডের উল্লেখ করা হয়।  

কিন্তু গত ১৮ নভেম্বর আপিল দায়ের হলেও এখনও এর শুনানি হয়নি। আপিলের আড়াই মাস পরও শুনানি না হওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির আইন সম্পাদক ও খালেদা জিয়ার আইনজীবী প্যানেলের অন্যতম সদস্য ব্যারিস্টার কায়সার কামাল বলেন, ‘আমরা আপিল দায়ের করেছি। এখন আপিলের যে প্রক্রিয়া রয়েছে তার মাধ্যমে যথাসময়ে শুনানি হবে।’

জানা গেছে, চ্যারিটেবল মামলার আপিলে খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা ২০টি গ্রাউন্ড তুলে ধরেন। এসব গ্রাউন্ডের মধ্যে রয়েছে, ‘জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট একটি প্রাইভেট ট্রাস্ট। এক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী থাকাবস্থায় খালেদা জিয়া এতে হস্তক্ষেপ করেননি এবং এ মামলায় ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন প্রযোজ্য নয়। জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট নামে হিসাব খোলার আবেদন ফর্মে খালেদা জিয়ার স্বাক্ষর থাকলেও সেখানে তার পদবি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে উল্লেখ করা নেই কিংবা তার প্রধানমন্ত্রী পদবির কোনও সিলও দেওয়া নেই। এই ট্রাস্টের কোনও হিসেবেই প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তার নাম উল্লেখ নেই। এই ট্রাস্ট তিনি তার ব্যক্তিগত ক্ষমতাবলে পরিচালনা করতেন। এই মামলায় খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে উপযুক্ত কোনও তথ্যপ্রমাণ ছিল না। এই মামলায় তাকে ধারণার ওপর নির্ভর করে অভিযুক্ত এবং সাজা দেওয়া হয়েছে।’ 

আপিলের গ্রাউন্ডে বিচারিক আদালতে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা চ্যারিটেবল ট্রাস্টের ফান্ডে অবৈধ লেনদেনের অভিযোগ প্রমাণে ব্যর্থ হয়েছে বলেও যুক্তি দেওয়া হয়েছে। দুদক উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে এবং পক্ষপাতমূলকভাবে এ মামলার অভিযোগের অনুসন্ধান কার্যক্রম পরিচালনা করেছে যা রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষীর বক্তব্য থেকে প্রতীয়মান হয় বলেও আপিল আবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

দুদক আইনজীবী মো. খুরশীদ আলম খান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন,‘আপিল আবেদনটি যেহেতু খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা করেছেন সেহেতু তাদেরকেই এ বিষয়ে এগিয়ে আসতে হবে। খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা আপিল দায়ের করলেও তা শুনানির জন্য আদালতের অনুমতি নেননি। ফলে মামলাটি শুনানির জন্য হাইকোর্টের কার্যতালিকায় আসছে না। তবে এ বিষয়টি আমরা সর্বাধিক গুরুত্বের সঙ্গে পর্যবেক্ষণ করছি।’

মো. খুরশীদ আলম খান আরও বলেন,‘আমরা এ মামলার রায়ের কপি পেয়েছি। আমরা মামলাটির বিষয়ে গুরুত্ব দিচ্ছি এবং আপিল শুনানির জন্য সার্বক্ষণিক তৈরি আছি।’ 

আর বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও খালেদা জিয়ার অন্যতম আইনজীবী জয়নুল আবেদীন বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, ‘আমরা নিজেদের মধ্যে একটি আলোচনা করেছি। আলোচনা করে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট ও অরফানেজ ট্রাস্টের উভয় মামলা আদালতে শুনানির জন্য আবেদন করবো। এছাড়াও খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য যা যা করা দরকার সে বিষয়েও সিদ্ধান্ত নেবো।’