জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি) ছাত্রলীগের আসন্ন নতুন কমিটিকে ঘিরে পদপ্রত্যাশীদের মধ্যে তোড়জোর চলছে। কর্মী বাড়িয়ে শোডাউন করে নিজেদের অবস্থান জানান দিচ্ছেন তারা। এমনকি সক্রিয় ছাত্রদল কর্মীদেরও জোর করে ছাত্রলীগের কর্মসূচিতে নিয়ে দল ভারী করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। ছাত্রলীগের পদপ্রত্যাশী নেতারাই যদি ছাত্রদল কর্মীদেরকে জোর করে মিছিলে ও শোডাউনে নিয়ে যায় তাহলে ছাত্রলীগ ‘মেরুদণ্ডহীন’ নাকি ছাত্রলীগ ভর করতে চায় ছাত্রদলের কাঁধে? এমন প্রশ্ন তুলেছেন ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতাকর্মী।এমন কর্মকাণ্ডে যারা জড়িত তাদেরকে চিহ্নিত করে সংগঠন থেকে বের করে দেওয়া উচিত বলেও মনে করেন তারা।
গত এক মাসে ছাত্রলীগের বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া দুই ছাত্রদল কর্মীকে মারধর করেছেন জবি শাখা ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীরা।
গত ১৭ মে শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসে ক্যাম্পাসে মিছিল করে ছাত্রলীগ। ওই মিছিলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ১১তম ব্যাচের হাসিবুর রহমান বাঁধন মিছিলে যোগ দেয়। ওই মিছিলে বাঁধন ‘খালেদা জিয়ার সরকার’, বারবার দরকার’ বলে স্লোগান দেয়। আর এ অভিযোগে জবি ছাত্রলীগ সভাপতি শরীফুল ইসলামসহ আরও কয়েকজন নেতা বাঁধনকে মারধর করেন। দলের কর্মীরা অভিযোগ করে বলেন,বাঁধন ছাত্রদলের কর্মী। তিনি সুবিধা নিতে ছাত্রলীগে অনুপ্রবেশ করেছেন। তিনি শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শাখাওয়াত হোসেন প্রিন্সের অনুসারী বলে জানা যায়।
এ বিষয়ে প্রিন্স বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, বাঁধন কলেজ জীবন থেকে ছাত্রলীগ করে আসছে। সে দল বহির্ভূত কোনও স্লোগান দেয়নি। দুই বাক্যের একটি স্লোগানে ‘জিয়ার সরকার’ বাক্যটি বলার সঙ্গে সঙ্গেই শরীফ (জবি ছাত্রলীগ সভাপতি) ভাই বাঁধনকে ধরে চড় দেন। তখন বাঁধন বলেন,পরের বাক্যটি তো বলিনি, ওটা হবে ‘অবৈধ সরকার’। তিনি (শরীফ) বাঁধনের আইডি কার্ড নিয়ে পর্যালোচনা করেও দেখেছেন।
এদিকে, ছাত্রদলের কর্মী অভিযোগে যাকে মারধর করলেন সেই বাঁধনকে চিনতেই পারছেন না সভাপতি শরীফুল ইসলাম। রবিবার বাংলা ট্রিবিউনকে তিনি বলেন, ‘আমি বাঁধন নামে কাউকে চিনি না। আমি কাউকে মারিনি। তবে আপনার কাছে যদি ওর কোনও তথ্য প্রমাণ থাকে আপনি সেটা পত্রিকায় ছাপেন।’
এ বিষয়ে ছাত্রলীগের একাধিক নেতা অভিযোগ করে বলেন, শরীফ নিজেই ছাত্রদলের কর্মীদেরকে দলে আশ্রয় প্রশ্রয় দিচ্ছেন। তাই এখন তিনি গা বাঁচাতেই নাটক করছেন। মাহিন আজাদ নামে এক ছাত্রদল কর্মীকে ছাত্রলীগে জায়গা দিয়ে তাকে সহ-সাধারণ সম্পাদক বানিয়েছেন শরীফ নিজেই। শরীফের সঙ্গে নিয়মিত মিছিল মিটিংয়েও মাহিনকে দেখা যায়। ওই মাহিন ছাত্রদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ওমর ফারুক কাউসারের কর্মী।
অন্যদিকে সভাপতি শরীফুল ইসলাম বলেন, ‘ছাত্রলীগে অনুপ্রবেশকারী কারও জায়গা নেই। ছাত্রলীগ মুজিবের আদর্শের সংগঠন, এই সংগঠন অনুপ্রবেশকারীদের দিয়ে চলে না, তাদেরকে দরকারও হয় না।’
গত বুধবার প্রিন্সের আরেক কর্মী ইয়ামিন সম্রাটকে ছাত্রলীগ কর্মীরা মারধর করেন। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সম্রাট ছাত্রদলের সক্রিয় কর্মী, শাখা ছাত্রদলের প্রচার সম্পাদক জুয়েল মৃধা তার মামা। সম্রাট নিজেও সাংবাদিকদের জানিয়েছেন ‘তিনি ছাত্রদলের কর্মী। কিন্তু বড় ভাই প্রিন্স জোর করে ভয় দেখিয়ে তাকে ছাত্রলীগের কর্মসূচিতে নিয়ে যেত।’
ছাত্রদল কর্মীদের নিয়ে দলভারি করার অভিযোগের বিষয়ে প্রিন্স বলেন, গত প্রায় ৭ থেকে ৮ মাস আগে সম্রাট আমার কাছে আসে। আমি তো জানতাম না সে ছাত্রদল করে। যখন জানতে পারি সে ছাত্রদলের কর্মী তখন আমি দল থেকে বের করে দেই। ওই সময়ের ছবি দিয়েই এখন আমার এক প্রতিপক্ষ সবাইকে জানান দিচ্ছে আমি নাকি দলে ছাত্রদল কর্মীদের জায়গা দিয়েছি। কিন্তু আমি তো সম্রাটকে বের করে দিয়েছি অনেক আগেই। নতুন করে এই ইস্যুকে সামনে আনা হচ্ছে কেন?
ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীদের অভিযোগ, ছাত্রদল ও শিবিরের অসংখ্য কর্মী সুযোগ বুঝে ছাত্রলীগে আশ্রয় নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশ করে ক্লাস-পরীক্ষা চালিয়ে নিতে। আর প্রার্থিতার দৌড়ে থাকা ছাত্রলীগ নেতারাও তাদের আশ্রয় দিচ্ছেন দল ভারি করতে।
জবি ছাত্রলীগের কর্মীদের বিরুদ্ধেও ছাত্রদলে স্থান পাওয়ার চেষ্টা করার অভিযোগও রয়েছে। ছাত্রদলের পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে স্থান পেতে ২০১৩ সালের শেষের দিকে জবি ছাত্রলীগের অনেক সক্রিয় নেতা ছাত্রদলের ফরম নিয়েছিলেন। এ নিয়ে গণমাধ্যমে সংবাদও প্রকাশিত হয়েছিল।
ছাত্রলীগে অনুপ্রবেশকারীদের বিষয়ে জানতে চাইলে শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম বলেন, ছাত্রলীগে যতবারই ছাত্রদল অথবা ছাত্র শিবির অনুপ্রবেশ করতে চেয়েছে আমরা তাদেরকে চিহ্নিত করে দল থেকে বের করে দিয়েছি।কারণ ছাত্রলীগে কোনও অনুপ্রবেশকারীর জায়গা নেই।
তবে ছাত্রলীগের পদপ্রত্যাশী যেসব নেতা ছাত্রদল কর্মীদেরকে জোর করে মিছিল ও শোডাউনে নিয়ে যান তাদের চিহ্নিত করে দল থেকে বের করে দেওয়া উচিত বলে মনে করেন সংগঠনটির উর্ধ্বতন নেতারা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ছাত্রলীগের এক নেতা বলেন, ছাত্রলীগের পদপ্রত্যাশী নেতাদের এমন ভূমিকার কারণে মনে হয় ছাত্রলীগ ‘মেরুদণ্ডহীন’। অথবা ছাত্রলীগ ভর করতে চাইছে ছাত্রদলের কাঁধে। এমন প্রশ্ন ওঠা খুব স্বাভাবিক বলে মনে করেন তারা।
তবে জবি ছাত্রলীগে ত্যাগী, ক্ষুব্ধ নেতারা ছাত্রলীগে এমন অনুপ্রবেশকারীদের জায়গা দেওয়া নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেছেন।
জবি শাখা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সাইদুর রহমান জুয়েল বলেন, বিরোধীদলে জামায়াত-বিএনপির রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে মার খেয়ে জেল খেটে জবি ছাত্রলীগের হাতকে শক্তিশালী করেছি। অনুপ্রবেশকারী ও তাদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দাতারা নিজ স্বার্থ হাসিলের জন্য আজ শিবির ও ছাত্রদলকে নিয়ে ছাত্রলীগের সুনাম নষ্ট করছেন। তাদের কে আমরা ছাত্রলীগের রাজনীতি থেকে বিতাড়িত করবো।
আরও পড়ুন:
বাগেরহাটে দু’পক্ষের সংঘর্ষে যুবলীগ কর্মী নিহত
মিতু হত্যায় ব্যবহৃত মোটরসাইকেলটি উদ্ধার
যশোরে পেট্রোল পাম্পের মধ্যে দুজনকে কুপিয়ে হত্যা
/আরএআর/এইচকে/এমএসএম /আপ- এপিএইচ