জুমার খুতবার গুরুত্ব ও উপকারিতা

জুমার নামাজ ইসলামের মৌলিক ইবাদত ও ধর্মীয় নিদর্শনাবলীর মধ্যে অন্যতম। রাসুল (সা.)-এর মদিনায় হিজরত ও তাঁর সর্বপ্রথম জুমার নামাজ আদায়ের পর থেকে আজ পর্যন্ত মুসলিম উম্মাহ অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে তা আদায় করে আসছে। সময়ের পরিবর্তন এবং মুসলিমদের অনেক উত্থান-পতন সত্ত্বেও কখনও জুমা ত্যাগ করা হয়নি। সব ইমাম ও ফকিহরা এ ব্যাপারে একমত যে জুমার দিন সপ্তাহের সর্বশ্রেষ্ঠ দিন। এর মর্যাদা ও ফজিলত অনন্য। হাদিস শরিফে এসেছে, যেসব দিবসে সূর্য উদিত হয়, সেগুলোর মধ্যে জুমার দিন সর্বশ্রেষ্ঠ। (মুসলিম শরিফ)

জুমার নামাজ ও জুমার নামাজের সমাবেশের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো– জুমার খুতবা। সামগ্রিকভাবে এর নানা ফজিলত ও প্রতিদান সম্পর্কে তো বয়ান করা হয়; কিন্তু বেশ উপেক্ষিত হয় তার গুরুত্ব ও উপকারিতার দিকটি, অথবা এ সম্পর্কে অত্যন্ত কম আলোচনা করা হয়। অথচ এর উপকারিতা নিয়েও গভীরভাবে জানা উচিত। এর উপকারিতা ও গুরুত্বের কারণেই জুমার খুতবা মনোযোগ ও আগ্রহের সঙ্গে শোনা অপরিহার্য।

জুমার নামাজের এই গুরুত্ব ও উপকারিতা সম্পর্কিত একাধিক হাদিস বর্ণিত হয়েছে। তাতে রাসুল (সা.) বলেছেন, জুমার খুতবা শুরু হওয়ার আগেই মসজিদে প্রবেশ করতে হবে। যে ব্যক্তি খতিবের মিম্বরে আরোহণের পর মসজিদের প্রবেশ করবে, ফেরেশতারা তার নাম- যারা জুমার নামাজ আদায় করেছে তাদের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করবে না এবং সে জুমার নামাজে অনুপস্থিত ও ফজিলতহীন বিবেচিত হবে।

তিনি আরও বলেন, খুতবা পূর্ণ মনোযোগ দিয়ে শুনতে হবে। খুতবার সময় যে কোনও কাজ ও কথা থেকে বিরত থাকতে হবে, যা খুতবা শ্রবণে প্রতিবন্ধক হয়। এমনকি যদি অন্য কেউ খুতবার সময় কথা বলে কিংবা কোনও অনর্থক কাজ করে, তাহলেও তাকে মুখ দ্বারা নিষেধ করা যাবে না। (বুখারি শরিফ)

মুসলিমরা মাহফিল, ইসলামি মজলিস, ধর্মীয় ইজতেমা ইত্যাদি সমাবেশগুলোতে অসংখ্য ওয়াজ-নসিহত, ঐতিহাসিক ঘটনা ও বর্ণনা শুনে থাকেন। কিন্তু প্রভাব সৃষ্টকারী, গুরুত্ব এবং সওয়াব ও প্রতিদান প্রাপ্তির দিক থেকে জুমার খুতবা তুলনাহীন। কেননা, তার বিশেষ গুরুত্ব, ফজিলত, উপকারিতা ও অনন্য মর্যাদা পবিত্র কোরআন ও হাদিসে অসংখ্যবার বর্ণিত হয়েছে। এ সত্ত্বেও অনেক মুসলিম জুমার খুতবার প্রতি উদাসীন; যত্নশীল নন। এর কারণ হলো– অধিকাংশ মুসলমান জুমার দিন মসজিদে এমন সময় প্রবেশ করেন, যখন খুতবা শেষ কিংবা প্রায় শেষের দিকে।

জুমার খুতবার উপকারিতা ও গুরুত্ব এ কারণে যে, তাতে মুসলিমদের আগামী এক সপ্তাহের জীবনযাপন কেমন হবে, তা কোরআন ও হাদিসের আলোকে পথনির্দেশ করা হয়। যাতে পরবর্তী জুমা পর্যন্ত সে তার দিসব-রজনী ওই অনুযায়ী অতিবাহিত করতে পারে। মানুষ বিভিন্ন সমস্যা ও সংকটের মুখোমুখি হয়, যেন সে জুমার খুতবার নির্দেশনা মোতাবেক সেসব সংকট ও সমস্যার সমাধান খুঁজতে পারে। এককথায়, জুমার খুতবা হচ্ছে– মুসলিম উম্মাহর এক সপ্তাহের খোদায়ী ‘প্রেসক্রিপশন’।

মুসলিমের জীবনে সুখ ও দুঃখ আসে। স্ত্রী-সন্তান, বন্ধু-স্বজন ও প্রতিবেশী-প্রিয়জনের সঙ্গে তার সম্পর্কের উত্থান-পতন ঘটতে পারে। ব্যবহারিক জীবনের এই চড়াই-উৎরাইয়ের কোনটি জায়েজ, কোনটি নাজায়েজ, এর নির্দেশনাও জুমার খুতবায় আলোচিত হয়। তাই চাইলেই এখান থেকে সঠিক পথটি খুঁজে নিতে পারা যায়।

জুমার খুতবায় মানুষের অধিকার ও করণীয় সম্পর্কেও বয়ান করা হয়। যারা জঞ্জাল, কদর্যমুক্ত ও সুন্দরভাবে জীবনযাপন করতে চান, জুমার খুতবা তাদের জন্য সহায়ক। এজন্য খতিবদের উচিত জীবনঘনিষ্ঠ বিষয়ের প্রতি গুরুত্বারোপ করে জুমার খুতবা দেওয়া এবং মুসলিম সমাজকে পরিপূর্ণ ইসলামি সমাজে রূপান্তরের প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখা। আল্লাহ আমাদের তাওফিক দান করেন। আমিন।

লেখক: গণমাধ্যমকর্মী; শিক্ষক, মারকাযুদ দিরাসাহ আল ইসলামিয়্যাহ, ঢাকা।