পণ্য বিক্রির জন্য ক্রেতাদের আগ্রহী করতে বিক্রেতারা বর্তমানে যেসব পদ্ধতি অবলম্বন করেন, সেগুলোর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি দিক হলো, অফার ঘোষণা করা। বিভিন্ন কোম্পানি তাদের পণ্য বিক্রির জন্য নানা ধরনের অফার দিয়ে থাকে।
প্রশ্ন হলো, অফার চলাকালীন এর আওতাধীন পণ্য কিনে পুরস্কার গ্রহণ করা কি জায়েজ হবে এবং ইসলামি শরিয়তে গ্রাহকদের এই ধরনের অফার দেওয়া কি বৈধ?
এ প্রশ্নের যুগপোযোগী উত্তর দিয়েছেন দেশের অন্যতম শীর্ষ ইসলামি অর্থনীতিবিদ ও জামিয়া ইসলামিয়া দারুল উলুম ঢাকার (মসজিদুল আকবার কমপ্লেক্স) মুফতি মাসুম বিল্লাহ। তার তত্ত্বাবধানে পরিচালিত ইসলামি প্রশ্নোত্তরের ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ‘আসকমাসাইলে’ উত্তরটি দিয়েছেন তিনি।
সিনিয়র এই মুহাদ্দিস আলেম বলেন, পণ্য কিনলে অফার বা কোনও পুরস্কার হালাল হওয়ার জন্য নিম্নোক্ত শর্তগুলো পাওয়া যাওয়া আবশ্যক—
১. পণ্যের দাম ন্যায়সঙ্গত স্বাভাবিক মূল্যে কেনাবেচা হতে হবে। অফারের কারণে পণ্যের দাম ন্যায়সঙ্গত স্বাভাবিক মূল্য থেকে বেশি হওয়া যাবে না। এমন যেন না হয় যে প্রথমে দাম বাড়িয়ে ধরলো, এরপর অফারে লটারির মাধ্যমে পুরস্কার দিলো। এটা কিমার বা জুয়ার অন্তর্ভুক্ত।
২. অফার বা পুরস্কার ভেজাল বা নিম্ন মানের পণ্য বিক্রির মাধ্যম হতে পারবে না। কেননা এমন পণ্যের মাধ্যমে মানুষকে ধোঁকা দেওয়া হয়, যা সম্পূর্ণ হারাম।
৩. পণ্য ক্রয়ের মূল উদ্দেশ্য হবে পণ্য ব্যবহার করা। শুধু পুরস্কার পাওয়ার উদ্দেশ্যে পণ্য ক্রয় না করা, টাকা না খাটানো।
মুফতি মাসুম বিল্লাহর মতে, উপরোক্ত শর্তাদি পাওয়া গেলে অফারযুক্ত পণ্য ক্রয় করা বা বিক্রেতা কর্তৃক কোনও পণ্যে পুরস্কার দেওয়া হলে তা গ্রহণ করা জায়েজ এবং এর মাধ্যমে প্রাপ্ত পুরস্কারও জায়েজ হবে। বিপরীতে ওই শর্তগুলো পূর্ণ না হলে পণ্য কেনাবেচা, ওই লটারি ও এর মাধ্যমে প্রাপ্ত পুরস্কার জায়েজ হবে না।
তিনি বলেন, অতএব, ক্রেতা শুধু পুরস্কার পাওয়ার উদ্দেশ্যেই পণ্য না কিনলে ও পণ্যের মূল্য না বাড়ালে এবং ক্রেতাদের কোনোরূপ ধোঁকা না দিলে ওই ধরনের কেনাবেচা করা এবং লটারিতে বিজয়ী হলে পুরস্কার গ্রহণ করা জায়েজ।
তবে দেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এ আলেম স্মরণ করিয়ে দেন যে পণ্য মার্কেটিং ও বাজারজাতকরণে শরিয়ার নীতি হলো, পণ্যের গুণগত মান বৃদ্ধি করার মাধ্যমে ক্রেতাকে আকৃষ্ট করা কিংবা সরাসরি মূল্য ছাড় দেওয়া। কিন্তু তা না করে মূল্যের কিছু অংশ অনিশ্চিত পুরস্কারের সঙ্গে ঝুলিয়ে রাখা এবং বিশাল অঙ্কের বা নামিদামি বস্তু বা ওমরা, ট্যুর ইত্যাদির প্রলোভন দেখিয়ে ক্রেতাকে আকৃষ্ট করা, অতঃপর অল্প কয়েকজনকে সামান্য পুরস্কার দেওয়া সম্পূর্ণভাবে ধোঁকা। শরিয়ার নীতির সঙ্গে এই পদ্ধতি সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। এতে ‘শিবহুল গারার’ তথা একপ্রকার প্রতীকী প্রতারণা পাওয়া যায়।
তিনি আরও বলেন, এভাবে বাজারকে প্রভাবিত করা ইসলামের বাণিজ্যনীতির পরিপন্থি। এসবই পুঁজিবাদের বানানো অপকৌশল। পুঁজিবাদীদের আবিষ্কৃত এসব কার্যকলাপ অনেকসময় বাজারকে অসৎ উপায়ে পরিচালিত করে এবং বাজারের ভারসাম্য নষ্ট করে। মুসলমানদের এসব কাজ থেকে বিরত থাকা উচিত।
তথ্যসূত্র : সূরা মায়িদাহ, আয়াত : ৯০-৯১, সহি মুসলিম, তাফসিরে কুরতুবি, রদ্দুর মুহতার ও অন্যান্য
লেখক: গণমাধ্যমকর্মী; শিক্ষক, মারকাযুদ দিরাসাহ আল ইসলামিয়্যাহ, ঢাকা।