সংকট নিরসনে ৯ দাবি কোরিয়া যেতে ইচ্ছুক ভিসাপ্রত্যাশীদের

দক্ষিণ কোরিয়ান ভাষা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ ও রোস্টারভুক্ত ডিলেট হওয়া এমপ্লয়মেন্ট পারমিট সিস্টেম (ইপিএস) কর্মীদের পুনরায় রোস্টার ও সব রোস্টারভুক্তদের ভিসা ইস্যু করার লক্ষ্যে ৯ দফা দাবি জানিয়েছেন ইপিএস কর্মীরা।

মঙ্গলবার (২৯ এপ্রিল) জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে ‘কোরিয়ান ভাষা পরীক্ষায় রোস্টারভুক্ত সব ভিসা প্রত্যাশীদের’ ব্যানারে আয়োজিত মানববন্ধনে এসব দাবি জানানো হয়।

মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, বাংলাদেশে ইপিএসের যাত্রা একযুগেরও বেশি সময় ধরে চলমান রয়েছে। যে লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নিয়ে ইপিএস সিস্টেম বাংলাদেশে চালু হয়েছিল। একযুগ পরে এসেও সেই কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জন করতে পারেনি। ইপিএস কর্মীদের কোরিয়ায় যাওয়ার সব দ্বায়-দায়িত্ব বোয়েসেলের মাধ্যমে সফলভাবে সম্পন্ন করার কথা থাকলেও, তাদের অপেশাদারিত্ব ও অনিয়মতান্ত্রিক রোস্টার ব্যবস্থা ও গবেষণাহীন কার্যক্রমের ফলে প্রায় ২১ হাজার ছেলে-মেয়ের স্বপ্ন আজ ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। হাজার হাজার ছেলেমেয়েরা রোস্টার অবস্থায় থাকা সত্ত্বেও বোয়েসেল সেই সব কর্মীদের বিদেশযাত্রা নিশ্চিত না করে নতুন সার্কুলার দিয়ে কর্মীর সংখ্যা ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি করে চলছে।

তারা আরও বলেন, বোয়েসেল আমাদের ওপর অন্যায়-অবিচার করছে। ইপিএস এর অনিয়মতান্ত্রিক সিস্টেমের কারণে আমরা ভাষা শিখেও আজ বেকার। ভাষা শিখে রোস্টারভুক্ত হয়েছি, তবুও আমাদের ফাইল কোরিয়ায় পাঠানো হয়নি। আমরা এসব সমস্যার অবসান চাই।

এসময় তারা তাদের চলমান সংকট নিরসনে ৯ দফা দাবি তুলে ধরেন। তাদের দাবিগুলো হলো:

১। ২০২২ সাল থেকে শুরু করে যে সব কর্মী ডিলেট হয়েছে বা হবে, সে সব কর্মীদের রাষ্ট্রীয় কূটনৈতিক হস্তক্ষেপের মাধ্যমে পুনরায় রোস্টার বাধ্যতামূলক করতে হবে। এবং ২০২৩ সাল-সহ যেসব ইপিএস কর্মী রোস্টারে আছে, তাদের ডিলিট না হওয়ার নিশ্চয়তা প্রদান করতে হবে।

২। দুই বছরের ১০টি ইস্যূতে ৭-৮ বার কোম্পানির মালিকের কাছে আমাদের ফাইল বাধ্যতামূলক পৌঁছাতে হবে এবং সেটা সিরিয়াল/সাল/বছর অনুযায়ী হতে হবে।

৩। বর্তমান রোস্টারকৃত কর্মীদের মধ্যে ৭৫-৮৫ ভাগ কোরিয়ায় প্রবেশ না করা পর্যন্ত সব ধরনের সার্কুলার বাণিজ্য বন্ধ রাখতে হবে।

৪। কোরিয়ার প্রত্যেক বাণিজ্যিক জোনে প্রয়োজনীয় সংখ্যক এজেন্ট নিয়োগ বাধ্যতামূলক করতে হবে, কমপক্ষে (৪-৫ জন)। যারা প্রত্যেক ইস্যুর পূর্বে তাদের নির্ধারিত জোনের আওতাভুক্ত কোম্পানিতে গিয়ে ইস্যুর জন্য কোম্পানির মালিকদের উৎসাহিত করবে।

৫। ভিসা ইস্যুর ক্ষেত্রে আর্থিক লেনদেন মুক্ত বাংলাদেশ ইপিএস ঘোষণা করতে হবে। আর্থিক লেনদেনের কোনও প্রমাণ পেলে বোয়েসেল/এইচ.আর.ডি সেই সব চক্রের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে হবে। তৃতীয় কোনও পক্ষ থাকলে তদন্ত করে বিচারের আওতায় আনতে হবে।

৬। নতুন নতুন খাত/সেক্টর খুঁজে বের করে রোস্টারভুক্তদের মধ্য হতে সরকারি প্রশিক্ষনের মাধ্যমে দক্ষ কর্মী গড়ে তুলে তাদের কোরিয়া যাত্রা নিশ্চিত করতে হবে এবং রাষ্ট্রীয় পৃষ্টপোষকতায় ও কূটনৈতিক বিচক্ষণতার মাধ্যমে সব রোস্টারভুক্তদের কোরিয়ায় প্রবেশ নিশ্চিত করার পাশাপাশি বেসরকারিভাবে যাতে কোনও কর্মী কোরিয়ায় প্রবেশ করতে না পারে, সেই নিশ্চয়তা দিতে হবে।

৭। মৎস্য, কনস্ট্রাকশন, শিপ বিল্ডিং খাতের ভিসা ইস্যু নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে নিশ্চিত করতে হবে। রোস্টারকৃত কর্মীদের ছাড়া বাংলাদেশের অন্য কোনও অঞ্চল থেকে রোস্টারবিহীন কাউকে ভিসা ইস্যু করা যাবে না, এই বিষয়ে নিশ্চয়তা প্রদান করতে হবে। প্রয়োজনে তাদের অন্য খাত/সেক্টরে রোস্টার পরিবর্তন করে হলেও ভিসা ইস্যু নিশ্চিত করতে হবে।

৮। কোরিয়া প্রবাসী কোনও কর্মী কোম্পানি পরিবর্তন বা রিলিজ নেওয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ অ্যাম্বাসির এজেন্ট সশরীরে কোম্পানিতে গিয়ে সমস্যা সমাধান করতে হবে।

৯। বর্তমান সংকট নিরসনে দ্রুততার সঙ্গে বোয়েসেলের কর্মকর্তারা সফল না হলে ব্যার্থতার দ্বায় নিয়ে তাদের পদত্যাগ করতে হবে এবং রাষ্ট্রীয় হস্তক্ষেপে বোয়েসেলকে বিচক্ষণ লোকদের সমন্বয়ে ঢেলে সাজাতে হবে।