নতুন অধ্যায়ের সূচনা: সিলেট থেকে কার্গো ফ্লাইট চালু

সিলেটের ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা হলো। রবিবার (২৭ এপ্রিল) প্রথমবারের মতো এই বিমানবন্দর থেকে ইউরোপের উদ্দেশে সরাসরি আন্তর্জাতিক কার্গো ফ্লাইট চালু হয়েছে। গ্যালিস্টার ইনফিনিট এভিয়েশনের ব্যবস্থাপনায় এই কার্গো ফ্লাইটটি সন্ধ্যা ৭টা ১০ মিনিটে সিলেট থেকে ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত স্পেনের জারাগোজা শহরের উদ্দেশে ছেড়ে যায়।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সিলেট থেকে ইউরোপ ও যুক্তরাজ্যগামী রফতানি পণ্যের এই আকাশপথ চালুর মাধ্যমে দেশের বাণিজ্যিক সম্ভাবনার নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হলো। এ ফ্লাইট শুধু সিলেট নয়, বরং গোটা দেশের রফতানিকেন্দ্রিক অর্থনীতিকে বেগবান করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। এতে করে দেশের রফতানিকারকরা আরও সহজে ও দ্রুত পণ্য প্রেরণ করতে পারবেন, যা আন্তর্জাতিক বাজারে বাংলাদেশের অবস্থানকে আরও সুদৃঢ় করবে।

এই উপলক্ষে আয়োজিত উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মেক্সিকোতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মুশফিকুল ফজল আনসারী এবং বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সচিব নাসরীন জাহান। অনুষ্ঠানের সভাপত্বি করেন বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মঞ্জুর কবীর ভূঁইয়া। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের পরিচালক মো. হাফিজ আহমেদ।

প্রধান অতিথি বক্তব্যে শেখ বশিরউদ্দীন বলেন, ‘আজ আমরা এক ঐতিহাসিক মুহূর্তের সাক্ষী হলাম। ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে সরাসরি ইউরোপের উদ্দেশ্যে প্রথম আন্তর্জাতিক কার্গো ফ্লাইট চালু হলো। এটি শুধু একটি আকাশপথের সম্প্রসারণ নয়, বরং আঞ্চলিক অর্থনীতি, রফতানি বাণিজ্য ও প্রবাসী সংযোগের ক্ষেত্রে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে। বিশেষ করে সিলেটের কৃষিপণ্য ও প্রক্রিয়াজাত পণ্যের আন্তর্জাতিক বাজার সম্প্রসারণে এটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। এ সফল উদ্যোগ বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট সবাইকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই।’

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অতিথিরা

ট্রান্সশিপমেন্ট বন্ধ হওয়ার পরে সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে এই চ্যালেঞ্জ দ্রুততার সঙ্গে কাটিয়ে ওঠা এবং প্রতিযোগিতামূলক বাজারে আমাদের সক্ষমতা বৃদ্ধি পেয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আজ সিলেটের জন্য এক ঐতিহাসিক দিন।‘

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে মুশফিকুল ফজল আনসারী বলেন, ‘আজ শুধু একজন কূটনীতিক নয়, একজন গর্বিত সিলেটের সন্তান হিসেবে দাঁড়িয়ে আছি। এই কার্গো ফ্লাইট সিলেটের সম্ভাবনা ও প্রবাসীদের ভালোবাসার প্রতিফলন। এটি শুধু পণ্য নয়, আমাদের আশা-ভরসা ও গর্ব বহন করছে।’

বিশেষ অতিথি নাসরীন জাহান বলেন, আজ সিলেটের ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আন্তর্জাতিক মানের কার্গো সার্ভিসের উদ্বোধনের মাধ্যমে এক গৌরবময় অধ্যায়ের সূচনা হলো। এই সেবা শুধু সিলেট নয়, সমগ্র দেশের অর্থনীতির জন্য একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে। প্রবাসী অধ্যুষিত অঞ্চলের কৃষিপণ্য, হস্তশিল্প ও রফতানিযোগ্য সামগ্রী এখন সরাসরি বৈশ্বিক বাজারে পৌঁছাতে পারবে। ইতোমধ্যে ইউরোপীয় ইউনিয়ন অনুমোদিত একটি আধুনিক কার্গো ওয়্যারহাউজ প্রস্তুত করা হয়েছে, যাতে ব্যবসায়ীরা খুব সহজে, দ্রুত ও সুশৃঙ্খলভাবে তাদের রফতানি কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারেন। এই ওয়্যারহাউজ কার্গো পরিচালনায় আন্তর্জাতিক মান নিশ্চিত করবে এবং রফতানিকারকদের জন্য একটি কার্যকর ও সুবিধাজনক পরিবেশ সৃষ্টি করবে।

বেবিচক চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মঞ্জুর কবীর ভূঁইয়া বলেন, সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ইউরোপগামী কার্গো ফ্লাইট চালুর মাধ্যমে দেশের রফতানি বাণিজ্যে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হলো। এই যুগান্তকারী পদক্ষেপ সিলেটসহ জাতীয় অর্থনীতিকে ত্বরান্বিত করবে। এই উদ্যোগে প্রধান উপদেষ্টাসহ সংশ্লিষ্ট সবার সহযোগিতার প্রতি আমি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। প্রধান উপদেষ্টার প্রত্যক্ষ দিকনির্দেশনা ও প্রেরণার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। 

একইসঙ্গে তিনি সংশ্লিষ্ট সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে ব্যবসায়ীদের আহ্বান জানান, যাতে এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে আন্তর্জাতিক বাজারে বাংলাদেশের অবস্থান আরও শক্তিশালী করা যায়। তিনি আরও বলেন, ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের পর শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকেও কার্গো অপারেশন শুরু হবে।

অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন সহকারী বিমান বাহিনী প্রধান, বাংলাদেশ বিমানের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা, মন্ত্রণালয়ের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা, বেবিচকের সদস্য, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা ও প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার প্রতিনিধিসহ অন্যান্য আমন্ত্রিত অতিথিরা।