সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচির অন্যতম প্রতিবন্ধকতা জনবলের ঘাটতি: গবেষণা

সম্প্রতি ইউনিসেফ বাংলাদেশ ও স্বাস্থ্য সুরক্ষা ফাউন্ডেশনের ২০২৪ সালের যৌথ গবেষণার তথ্য তুলে ধরে বলা হয়, বাংলাদেশে সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচির (ইপিআই) অন্যতম প্রতিবন্ধকতা হচ্ছে টিকা কার্যক্রমে জনবলের ঘাটতি। 

সোমবার (২১ এপ্রিল) জাতীয় প্রেসক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে স্বাস্থ্য সুরক্ষা ফাউন্ডেশন আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এই তথ্য জানানো হয়।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে স্বাস্থ্য সুরক্ষা ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক ডা. নিলাম উদ্দিন আহমেদ বলেন, সম্প্রতি ইউনিসেফ বাংলাদেশ ও স্বাস্থ্য সুরক্ষা ফাউন্ডেশনের যৌথ গবেষণায় সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচির বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য উঠে এসেছে। গবেষণায় দেখা যায়, ইপিআই’র অন্যতম প্রতিবন্ধকতা হচ্ছে টিকা কার্যক্রমে জনবলের ঘাটতি। এসবের মধ্যে রয়েছে অঞ্চলভিত্তিক টিকাকেন্দ্রের অসম বণ্টন, অপর্যাপ্ত অর্থ বরাদ্দ, টিকার অপর্যাপ্ততা, টিকাদান কর্মীদের প্রশিক্ষণের অভাব, দুর্গম এবং ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় টিকা পরিবহনজনিত সমস্যা, টিকাদান সম্পর্কিত প্রচারণার অভাব ইত্যাদি।

তিনি বলেন, মন্ত্রণালয়ের অধীনে শহর ও গ্রামে টিকাদান প্রকল্পে বরাদ্দকৃত জনবলের মধ্যে প্রায় ৪০ শতাংশ পদ এবং ইপিআই সদর দফতরে ৪৩ শতাংশ পদ এখনও শূন্য রয়েছে। এছাড়া বরাদ্দকৃত জনসংখ্যাও প্রয়োজনের তুলনায় কম। আরবান ইমিউনাইজেশন স্ট্র্যাটেজি-২০১৯ এবং ইপিআই মাইক্রোপ্ল্যান-২০২৪ অনুসারে প্রতি ৫০ হাজার জনসংখ্যার জন্য ৬ জন টিকাদানকর্মী প্রয়োজন, যা বাংলাদেশে এখনও বাস্তবায়ন করা হয়নি। তাছাড়াও জনসংখ্যার ঘনত্ব অনুসারে টিকাদান কেন্দ্রের অসম বণ্টন লক্ষ করা যায়। বিশেষ করে দুর্গম এবং উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় যে সংখ্যায় টিকাদান কেন্দ্র থাকা দরকার সেই সংখ্যক টিকাদান কেন্দ্র নেই। 

তিনি আরও বলেন, ২০২৯ সালের পর গ্যাভি টিকাদান প্রকল্পে সহায়তা বন্ধ হয়ে গেলে সরকারকে নিজস্ব অর্থায়নে টিকাদান কর্মসূচি পরিচালনা করতে হবে। শহর থেকে শুরু করে ইউনিয়ন পর্যায় পর্যন্ত ভ্যাকসিনের অপর্যাপ্ততা টিকাদানের লক্ষ্য অর্জনে ব্যাঘাত সৃষ্টি করে। ইপিআইয়ের সাম্প্রতিক তথ্য অনুসারে ২০২৪ সালের অক্টোবর পর্যন্ত টিকায় বাজেট বরাদ্দ থাকলেও বিশেষ কিছু এন্টিজেন— পিসিভি, ওপিভি এবং এমআর টিকার সংকট দেখা যাচ্ছে। টিকাদান কর্মীদের নিয়োগের পর টিকাদান বিষয়ে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা থাকলেও রিফ্রেসার প্রশিক্ষণের কোনও ব্যবস্থা নেই। তাছাড়া সারা দেশে শহর থেকে গ্রাম পর্যায়ে টিকাদান কেন্দ্র পরিদর্শন, টিকাদান পর্যবেক্ষণ ও মূল্যায়নের অভাব পরিলক্ষিত হচ্ছে। 

দুর্গম এবং উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় টিকা পরিবহন একটি বড় সমস্যা। বিশেষ করে পাহাড়ি, হাওর এবং উপকূলবর্তী এলাকায় যানবাহনের সমস্যা থাকায় সঠিক সময়ে টিকাদান কেন্দ্রে টিকা পৌঁছানো সহজ হয় না। এছাড়া আবহাওয়া জনিত (ঝড়, বন্যা, ভূমিধস) কারণেও অনেক সময় টিকা পরিবহনে সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। এছাড়া টিকাদান বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি বিষয়ক পদক্ষেপের অভাব, টিকাদান কেন্দ্র নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত খোলা রাখা হয়, ফলে কর্মজীবী মহিলারা তাদের শিশুদের টিকা দিতে পারে না।

এসময় সংগঠনটির পক্ষ থেকে বিভিন্ন সুপারিশ তুলে ধরা হয়। সেগুলো হলো— স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে শহর ও গ্রামে টিকাদান প্রকল্পে বরাদ্দকৃত জনবলের মধ্যে যে শূন্যপদ আছে, সেখানে দ্রুত নিয়োগ দেওয়া; জনসংখ্যা ভিত্তিক জনবলনীতি অভিযোজন করা; জনসংখ্যার ঘনত্বের ওপর ভিত্তি করে টিকা কেন্দ্রের সুষম বণ্টন করা; প্রতিটি টিকাদান কেন্দ্রে প্রয়োজনীয় ভ্যাকসিনের প্রাপ্যতা নিশ্চিত করা এবং ভ্যাকসিন সরবরাহ ব্যবস্থাপনাকে শক্তিশালী করা ইত্যাদি।

গবেষণা প্রকল্পের পলিসি অ্যাডভাইজার অধ্যাপক ড. মো. রফিকুল ইসলামের সঞ্চালনায় এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন— এমএনসিএএইচ এর ডিরেক্টর ডা. এস এম আব্দুল্লাহ আল মুরাদ প্রমুখ।