বাংলাদেশ ভূতাত্ত্বিক জরিপ অধিদফতর, পেট্রোবাংলা, বাপেক্স এবং সহযোগী প্রতিষ্ঠানগুলোকে গুরুত্ব নিয়ে ভূতত্ত্ববিদ পদের অবস্থান থাকলেও সংস্থাগুলোর শীর্ষ পদের কাজে প্রায়ই অনভিজ্ঞ কর্মকর্তা দিয়ে পূরণ করা হচ্ছে। তা একদিকে যেমন ভূতত্ত্ববিদ পেশাজীবীদের সীমিত সংখ্যক ঊর্ধ্বতন পদে পদায়নের সুযোগকে আরও সীমিত করে তোলে, অন্যদিকে সংস্থাগুলোর সার্বিক কর্মকাণ্ডকে শ্লথ করে। তাই জাতীয় স্বার্থে বাংলাদেশ ভূতাত্ত্বিক জরিপ অধিদফতরের মহাপরিচালকের পদসহ সংশ্লিষ্ট গুরুত্বপূর্ণ পদে ভূতত্ত্ববিদ পেশাজীবীর পদায়ন নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ ভূতাত্ত্বিক সমিতি।
সোমবার (২১ এপ্রিল) জাতীয় প্রেসক্লাবের মাওলানা মোহাম্মদ আকরম খাঁ হলে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এই দাবি জানান তারা।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, বাংলাদেশে ভূতত্ত্বসহ অনেক পেশার কর্মকাণ্ড মাঠ পর্যায়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনের মাধ্যমে সরাসরি জাতীয় উন্নয়নে অবদান রাখলেও এই পেশাজীবীদের তুলনামূলকভাবে কম মর্যাদা এবং সুযোগ-সুবিধার কারণে এসব অপরিহার্য পেশার চাকরির দিকে প্রার্থীদের আগ্রহ কমে যাচ্ছে। ফলে বিষয়ভিত্তিক মেধা ও যোগ্যতা নিয়েও অনেকে এই সব পেশার চাকরি বাদ দিয়ে সিভিল সার্ভিসের ক্যাডারভিত্তিক অ-কারিগরি চাকরির দিকে ধাবিত হচ্ছেন— যা জাতীয় উন্নয়নে বিরূপ প্রভাব ফেলছে। সব ধরনের পেশাজীবীর মর্যাদা ও সুযোগ-সুবিধা সৃষ্টির মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট পেশার চাকরির আকর্ষণ বাড়ানো যেতে পারে— যা দেশের ভেতরেই এই ‘ব্রেন ড্রেন’ এর প্রবণতা রোধ করবে।
এসময় সংগঠনের পক্ষ থেকে যেসব সুপারিশ করা হয়, সেগুলো হলো—
১। জাতীয় স্বার্থে খনিজ ও প্রাকৃতিক সম্পদ, ভূ-গর্ভস্থ পানি, পানিসম্পদ, সুনীল অর্থনীতি, জলবায়ু পরিবর্তন, ভূমিকম্প, বন্যা, নদী ভাঙনসহ প্রাকৃতিক দুর্যোগ, পরিবেশগত প্রভাব মূল্যায়ন ইত্যাদি সংশ্লিষ্ট নীতি-নির্ধারণ ও কর্মপরিকল্পনা প্রণয়নের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে অভিজ্ঞ ভূতত্ত্ববিদদের অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
২। বাংলাদেশে ভূতাত্ত্বিক জ্ঞান ও বিজ্ঞান সংশ্লিষ্ট সব ধরনের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে ভূতত্ত্ববিদ পেশাজীবী ও গবেষকদের উপযুক্ত অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করে দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন অধিকতর গতিশীল ও সমৃদ্ধ করণে সুযোগ দিতে হবে।
৩। জাতীয় উন্নয়নের স্বার্থে বাংলাদেশ ভূতাত্ত্বিক জরিপ অধিদফতরের মহাপরিচালক এবং পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান পদসহ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য সংস্থার শীর্ষ ও গুরুত্বপূর্ণ পদে ভূতত্ত্ববিদ পেশাজীবীর পদায়ন নিশ্চিত করতে হবে।
৪। বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নদ-নদীর গতি-প্রকৃতি সমীক্ষা, নদী শাসন, বাঁধ নির্মাণসহ পানির বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণে ভূতাত্ত্বিক ও ভূ-কারিগরি অনুসন্ধান ইত্যাদি কাজ পরিচালনায় ভূতত্ত্ববিদদের পর্যাপ্ত সংখ্যক পদ সৃজন করা জরুরি।
৫। ভূ-গর্ভস্থ পানি নিয়ে কাজ করলেও জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতর, বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন, পানি সম্পদ পরিকল্পনা সংস্থা, ওয়াসাগুলোতে ভূগর্ভস্থ পানি বিজ্ঞানের জ্ঞানসমৃদ্ধ পর্যাপ্ত সংখ্যক ভূতত্ত্ববিদ নেই। এসব প্রতিষ্ঠানগুলোতে নগরপরিকল্পনা, সড়ক-জনপথ, অবকাঠামো নির্মাণের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোকে কাঙ্ক্ষিত ফলাফল পেতে ভূ-গর্ভস্থ পানি বিজ্ঞান এবং ভূ-কারিগরি ডিগ্রিধারী ভূতত্ত্ববিদদের পদায়িত করতে হবে।
৬। খনিজ সম্পদ আহরণ, ভূ-কারিগরি ও ভূ-গর্ভস্থ পানিসহ ভূতাত্ত্বিক বিজ্ঞান সংশ্লিষ্ট কর্মকাণ্ডে জড়িত এনজিওতে ভূতত্ত্ববিদ পেশাজীবীর অন্তর্ভুক্ত নিশ্চিত করতে হবে।
৭। সরকারের গ্রাউন্ডওয়াটার টাস্ক ফোর্স ২০০৪, পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় এবং অন্যান্য সুপারিশের আলোকে ভূ-গর্ভস্থ পানির যথাযথ ও টেকসই ব্যবহার, ব্যবস্থাপনা ও পর্যবেক্ষণের লক্ষে ভূতাত্ত্বিক বিজ্ঞানের হাইড্রোজিওলজিষ্ট পেশাজীবীদের তত্ত্বাবধানে একটি পৃথক ও একক প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের সভাপতি জ্বালানি বিশেষজ্ঞ বদরুল ইমাম, সাধারণ সম্পাদক ড. আনোয়ার জাহিদ প্রমুখ।