শাহজালালের থার্ড টার্মিনাল

শেষ সময়ে বদলে গেলো প্রকল্প পরিচালক, প্রশাসনিক জটিলতার শঙ্কা

হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের থার্ড টার্মিনালের প্রকল্পের ৯৯ দশমিক ৫ শতাংশ কাজ প্রায় শেষ। অবশিষ্ট আর দশমিক ৫ শতাংশ কাজের জন্য নতুন করে প্রকল্প পরিচালক (পিডি) নিয়োগের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তবে তড়িঘড়ি করে নেওয়া এ সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এমনকি শেষ সময়ে ‘অযথাই’ প্রকল্প পরিচালক বদলে নতুন নিয়োগের ক্ষেত্রে জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘনেরও অভিযোগ উঠেছে।

জানা গেছে, আজ রবিবার (২১ এপ্রিল) মন্ত্রণালয়ে এক সভায় প্রকৌশলী মো. নুরুদ্দীন চৌধুরীকে থার্ড টার্মিনালের প্রকল্প পরিচালক করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। তার নিয়োগ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) কর্মকর্তারা। তারা বলছেন, খুবই অল্প সময়ের মধ্যে এই নিয়োগের সিদ্ধান্ত হলো। কিন্তু তার বিষয়ে গোয়েন্দা সংস্থা ও দুদকের কোন অনাপত্তিপত্র নেওয়া হয়নি। তাছাড়া এখানে জ্যেষ্ঠতাও লঙ্ঘন করা হয়েছে বলেও অভিযোগ তুলেছেন তারা। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নুরুদ্দীন চৌধুরীর আগে অন্তত আরও দুজন প্রকৌশলী আছেন, যারা তার চেয়ে জ্যেষ্ঠ। 

তারা আরও বলছেন, থার্ড টার্মিনাল চালু নির্ধারিত সময়ে চালু করার বিষয়ে আগে থেকেই একটি শঙ্কা কাজ করছে। এত অল্প সময়ে পিডি পরিবর্তন সেই শঙ্কা আরও বাড়িয়ে দিলো। পাশাপাশি প্রশাসনিক জটিলতাও বাড়বে।

বেবিচকের দুর্নীতি-বিরোধী সমন্বয় কমিটির প্রধান ড. জোবাইদুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী উন্নয়ন প্রকল্পের পিডি ঘনঘন পরিবর্তন করা না গেলেও সরকারি এ আইন মানা হচ্ছে না। এ কারণে সরকার আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। নতুন পিডি নিয়োগ না করে বর্তমান পিডি দ্বারাই প্রকল্পের কার্যক্রম চালিয়ে নেওয়া যেতো।’

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘বর্তমানে প্রকল্পের ৯৯ দশমিক ৫ শতাংশ কাজ ইতিমধ্যেই শেষ হয়েছে। ফলে অবশিষ্ট ০ দশমিক ৫ শতাংশ কাজ বাস্তবায়নের জন্য নতুন পিডি নিয়োগের জটিলতায় যাওয়া ঠিক হয়নি। এর চেয়ে বিদ্যমান পিডি তার মূল দায়িত্বের পাশাপাশি প্রকল্পের অবশিষ্ট সামান্য কাজ খুব সহজেই শেষ করতে পারতেন।’

তিনি বলেন, ‘এখন যেহেতু মন্ত্রণালয় সিদ্ধান্ত নিয়েই ফেলেছে, এটি গেজেট হয়ে তারপর কত দ্রুত কাজ এগোয় সেটি দেখার বিষয়।’

অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমরা যেটি জানি, নুরুদ্দীনের চেয়ে আরও সিনিয়র দুজন ছিলেন। এখন এক্ষেত্রে কী বিবেচনা করা হয়েছে, সেটি গেজেট ও মন্ত্রণালয়ের আলোচনার বিষয় জেনে মন্তব্য করা যাবে।’

বেবিচকের চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মঞ্জুর কবীর ভুঁইয়া নতুন প্রকল্প পরিচালকের নিয়োগের সিদ্ধান্তের বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, যেহেতু জাকারিয়া হোসেন প্রধান প্রকৌশলী, সেহেতু তার আগের ওই দায়িত্ব পালন করতে গেলে কাজের ব্যাঘাত ঘটবে। এ কারণে আমরা নতুন করে নিয়োগের সিদ্ধান্ত নিয়েছি।

বেবিচক সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গত বছরের ২৩ ডিসেম্বর এ কে এম মাকসুদুল ইসলামের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিল হওয়ার পর পিডি শূন্য হয়ে পড়ে থার্ড টার্মিনাল প্রকল্প। এ সময় প্রকল্পের কাজে স্থবিরতা দেখা দেয়। নতুন পিডি নিয়োগে বিভিন্ন জটিলতা দেখা দেয়। পিডি নিয়োগের জন্য জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থা এনএসআই এবং দুদকের ছাড়পত্রের প্রয়োজন হয়। এ দুটি ছাড়পত্র পেতে দীর্ঘ সময় ব্যয় হয়। পরবর্তী সময়ে প্রায় তিন মাস পর প্রকৌশলী জাকারিয়া হোসেনকে পিডি হিসেবে নিয়োগ করা হয়। জাকারিয়া হোসেনকে পিডির পাশাপাশি প্রধান প্রকৌশলীর চলতি দায়িত্বও দেওয়া হয়। এছাড়াও থার্ড টার্মিনাল প্রকল্পের পিডি হিসেবে প্রকৌশলী শুভাশিষ বড়ুয়া, মো. শরিফুল ইসলাম ও এ এইচ এমডি নুরউদ্দিন চৌধুরীর নাম প্রস্তাব করে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছিল।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রকল্প সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, এসব বৈদেশিক সহায়তাপুষ্ঠ প্রকল্পের বার বার পিডি পরিবর্তন হলে নতুন পিডির নমুনা স্বাক্ষর মন্ত্রণালয়, ইআরডি, দাতা সংস্থা জাইকা, অর্থ মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ ব্যাংকসহ নানা প্রতিষ্ঠানের অনুমোদনের জন্য পাঠাতে হয়। এটি পাঠানো ও অনুমোদন প্রক্রিয়া দীর্ঘ সময় স্বাপেক্ষ। এ কারণে গত ২৩ ডিসেম্বর পর হতে আজও বৈদেশিক ঠিকাদারের বিলের একটি অংশ পরিশোধ করা সম্ভব হয়নি। ফলে সরকারকে বিলম্ব জরিমানা ফি গুণতে হচ্ছে।

তিনি বলেন, ‘প্রধান প্রকৌশলীই যেহেতু এখানকার পিডি, নতুনভাবে পিডি নিয়োগ না দিয়ে তাকে দিয়েই চালানো যেতো। আর কাজও যেহেতু বেশি নেই নতুন পিডির দরকারও ছিল না। এতে আরও প্রশাসনিক জটিলতা বাড়বে।’