‘আমাদের জন্য দেশ স্বাধীন হয়নি’

‘বাবাকে ছাড়া আর থাকতে পারছি না। ৫ আগস্টের পর আমাদের এভাবে দাঁড়ানোর কথা ছিল না। আমরা বিচার পাচ্ছি না। আমাদের জন্য দেশ স্বাধীন হয়নি। আমরা তো আমাদের বাবাদের ফেরত পাইনি।’ কাঁদতে কাঁদতে বলছিল গুমের শিকার বংশাল থানা ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক পারভেজ হোসেনের মেয়ে আদিবা ইসলাম হৃদি।

রবিবার (২০ এপ্রিল) সকালে রাজধানীর হাইকোর্টের মাজার গেটের সামনে ‘মায়ের ডাক’ আয়োজিত অবস্থান কর্মসূচিতে হৃদি এসব কথা বলে। মাত্র দুই বছর বয়সে বাবাকে হারানো হৃদি এখন প্রায় ১৪ বছরের কিশোরী। কিন্তু এখনও বাবার সন্ধান মেলেনি, মেলেনি বিচারও। বাবার ছবি হাতে নিয়ে প্রায় প্রতিটি গুমবিরোধী কর্মসূচিতে ছুটে যায় সে।

মায়ের ডাকের কর্মসূচি

মায়ের ডাকের আয়োজনে ‘বলপূর্বক গুম ও বিচারবহির্ভূত হত্যার সঙ্গে জড়িত কর্মকর্তাদের গ্রেফতার ও বিচারের’ দাবিতে এ কর্মসূচি পালিত হয়। এতে গুম-খুনের শিকার ব্যক্তিদের পরিবার ও গুম থেকে ফিরে আসা ব্যক্তিরাও অংশ নেন।

লক্ষ্মীপুরে গুমের শিকার ওমর ফারুকের ছেলে ইমন বলেন, ‘২০১৪ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রামের পতেঙ্গা এলাকা থেকে আমার বাবাকে র‌্যাব তুলে নেয়। আট মাস হয়ে গেলেও অন্তর্বর্তী সরকার কোনও সন্ধান দিতে পারেনি। আমরা চাই অভিযুক্ত কর্মকর্তাদের দ্রুত অপসারণ ও আইনের আওতায় এনে বিচার করা হোক।’

গুম হওয়া ব্যক্তিদের ছবি হাতে স্বজনরা

২০১৩ সালে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে নিখোঁজ হওয়া বিএনপি নেতা সাজেদুল ইসলাম সুমনের বোন আফরোজা ইসলাম আঁখি বলেন, ‘১৩ বছর ধরে আমরা রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছি। আজও আমাদের দাবি আদায়ে রাস্তায় নামতে হচ্ছে। এর থেকে লজ্জাজনক আর কিছু হতে পারে না।’

নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘অত্যাচার, নির্যাতনের বিচার না হলে দেশে ন্যায্যতা প্রতিষ্ঠা হবে না। নতুন বাংলাদেশের স্বপ্নও অধরা থাকবে।’

গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মো. রাশেদ খান বলেন, ‘বাংলাদেশে যেসব গুম-খুন হয়েছে, তা ভারতের নির্দেশনায় হয়েছে। সেনাবাহিনী ও ডিজিএফআইর যারা এতে জড়িত ছিলেন, তাদের বিচার করতে হবে। কোনও টালবাহানা মেনে নেওয়া হবে না।’

গুম-খুনের শিকার ব্যক্তিদের পরিবার ও গুম থেকে ফিরে আসা ব্যক্তিরা কর্মসূচিতে অংশ নেন

আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার শাহাদাৎ টুটুল বলেন, ‘গণতন্ত্র ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হলে গুম-খুনের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেফতার করে বিচারের আওতায় আনতে হবে।’

মায়ের ডাকের সমন্বয়কারী সানজিদা ইসলাম বলেন, ‘বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে হাজারো ভাই গুম ও বিচারবহির্ভূত হত্যার শিকার হয়েছে। আজও অভিযুক্তদের গ্রেফতার করা হয়নি। যুদ্ধ যদি একবার হয়ে থাকে, প্রয়োজনে আরেকবার যুদ্ধ হবে। প্রত্যেক অপরাধীকে বিচারের মুখোমুখি করতে হবে।’

কর্মসূচি শেষে মায়ের ডাকের পক্ষ থেকে তিন দফা দাবিতে চিফ প্রসিকিউটরের প্রতিনিধিদের কাছে স্মারকলিপি দেওয়া হয়। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন সংগঠনের সমন্বয়ক মো. মজুর হোসেন ঈসা। এছাড়া বক্তব্য দেন– জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সাবেক সিনিয়র সহ-সভাপতি ইব্রাহিম কবির মিঠু, হিউম্যান রাইটস সোসাইটির সদস্য সাইফুল ইসলাম এবং জাতীয় মানবাধিকার উন্নয়ন কেন্দ্রের মহাসচিব মাহবুব প্রমুখ।