প্রশাসনে বৈষম্যের অভিযোগে কর্মচারী ঐক্য ফোরামের হুঁশিয়ারি

আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে যোগ্যতা উপেক্ষা করে দলীয় আনুগত্যের ভিত্তিতে পদোন্নতি, পদায়ন ও চাকরিচ্যুতির মাধ্যমে একটি ‘দলদাস আমলাতন্ত্র’ গড়ে তোলা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছে ‘বৈষম্যবিরোধী কর্মচারী ঐক্য ফোরাম’। ফোরামের পক্ষ থেকে পাঁচ দফা দাবি জানানো হয়। দাবি পূরণ না হলে কঠোর কর্মসূচি ও বিতর্কিত কর্মকর্তাদের ‘অবাঞ্ছিত’ ঘোষণার হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে।

শনিবার (১৯ এপ্রিল) জাতীয় প্রেসক্লাবের মাওলানা আকরাম খাঁ হলে বৈষম্যবিরোধী কর্মচারী ঐক্য ফোরাম আয়োজিত সংবাদ সম্মেলন এ হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়।

সংবাদ সম্মেলনে মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন বৈষম্যবিরোধী কর্মচারী ঐক্য ফোরামের সভাপতি এবং সাবেক সচিব এ বি এম আবদুস সাত্তার। তিনি বলেন, ‘রাষ্ট্রীয় প্রশাসনযন্ত্রে নিরপেক্ষ আমলাতন্ত্র প্রতিষ্ঠা না করে আওয়ামী সরকারের আজ্ঞাবহ ও দলদাস এক বেপরোয়া শ্রেণির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দিয়ে দেশের সিভিল প্রশাসন পরিচালনা করা হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘প্রচলিত প্রশাসনিক নিয়ম-কানুন ও রীতি-নীতি ভঙ্গ করে নিজেদের অনুগত কর্মকর্তাদের দিয়ে মাঠ প্রশাসনসহ সামগ্রিক প্রশাসন পরিচালনা করেছে আওয়ামী সরকার। কোনও রাজনৈতিক দলের সঙ্গে ন্যূনতম সংশ্লিষ্টতা না থাকা সত্ত্বেও প্রতিহিংসা বশত অসংখ্য কর্মকর্তাদের নির্বিচারে ওএসডি করাসহ পদোন্নতি, পদায়ন ও তাদের প্রাপ্য সব সুবিধা থেকে বঞ্চিত ও নিগৃহীত করা হয়েছে। অনেককে চাকরিচ্যুতও করা হয়।’

জনপ্রশাসনে দলতন্ত্র কায়েম করা হয় মন্তব্য করে এ বি এম আবদুস সাত্তার বলেন, ‘আওয়ামী সরকারের আমলে যোগ্যতা ও দক্ষতা থাকা সত্ত্বেও অনেক সিনিয়র কর্মকর্তাদের ডিঙিয়ে পছন্দের কর্মকর্তাদের পদোন্নতি ও গুরুত্বপূর্ণ পদে পদায়ন করা হয়। গোটা দেশের মতো জনপ্রশাসনেও কায়েম করা হয় দলতন্ত্র। ফলে পেশাদার ও যোগ্য আমলাদের অনেকে বঞ্চনা ও হতাশা, অপমানে নিগৃহীত হয়ে মারা গেছেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘বৈষম্যবিরোধী কর্মচারী ঐক্য ফোরামের পক্ষ থেকে আমরা বলতে চাই, ইতোমধ্যে স্বৈরাচারের দোসর যেসব কর্মকর্তাকে সচিব বা সচিব পদমর্যাদায় কিংবা সংস্থা প্রধান বা অন্য কোনও গুরুত্বপূর্ণ পদে পদোন্নতি-পদায়ন করা হয়েছে তা অবিলম্বে বাতিল করতে হবে।’

এ বি এম আবদুস সাত্তার বলেন, বৈষম্যবিরোধী কর্মচারী ঐক্য ফোরামের উত্থাপিত দাবিগুলো অবিলম্বে পূরণ করা না হলে শিগগিরই কঠোর কর্মসূচি পালন এবং বিতর্কিত কর্মকর্তাদের অবাঞ্চিত ঘোষণা করা হবে।

সংবাদ সম্মেলনে তুলে ধরা পাঁচ দফা দাবি হলো–

১.  সিভিল প্রশাসনে কর্মরত সব ক্যাডার, নন-ক্যাডার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে যারা ফ্যাসিস্টদের দোসর ও দুর্নীতি পরায়ন তাদের অবিলম্বে চাকরি থেকে অপসারণ এবং আইনের আওতায় আনতে হবে।

২. নিরপেক্ষ প্রশাসনিক কাঠামো নিশ্চিত করার স্বার্থে সব চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিল করতে হবে।

৩.  ফ্যাসিস্ট আমলে বৈষম্যের শিকার বর্তমানে কর্মরত সব ক্যাডার, নন-ক্যাডার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মন্ত্রণালয়ের সচিবসহ অন্যান্য সংস্থা-দফতরের গুরুত্বপূর্ণ পদে পদায়ন করতে হবে।

৪. বৈষম্যের শিকার এখনও বঞ্চিত সব ক্যাডার, নন-ক্যাডার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পদোন্নতিসহ প্রাপ্য সুবিধা দিতে হবে।

৫. ফ্যাসিস্টের দোসর ও দুর্নীতি পরায়ন কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পদোন্নতি-পদায়নে যারা পৃষ্ঠপোষকতা করছেন এবং করবেন, তাদের জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে।

সংবাদ সম্মেলনে আরও ছিলেন– সংগঠনটির মহাসচিব ও সাবেক সচিব কাজী মিরাজ হোসেন, কার্যকরী সভাপতি ও সাবেক সচিব আবদুল খালেক প্রমুখ।