ফুটওভারব্রিজের নিচে মূত্রত্যাগ, দুর্গন্ধে নাকাল পথচারী

রাজধানীর অন্যতম বড় শপিং কমপ্লেক্স যমুনা ফিউচার পার্ক, পাশেই আবাসিক এলাকা বসুন্ধরা সিটি। এছাড়া আশপাশের এলাকাও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, মার্কেট ও বসতির কারণে বেশ জনবহুল। ফলে প্রতিদিন হাজারো মানুষের পদচারণা এই এলাকা ঘিরে। অথচ যমুনা ফিউচার পার্কের ঠিক সামনে থাকা ফুটওভারব্রিজটির অবস্থা একেবারে বেহাল। ব্রিজটির নিচে এখন ময়লার ভাগাড়, দুর্গন্ধ আর ওপরে দখলদার হকারদের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে।

ব্রিজের নিচে দেয়াল ঘেঁষে ফুটপাতজুড়ে প্রতিদিন প্রস্রাব করছেন পথচারীদের কেউ কেউ। ফলে ব্রিজে উঠতেই অসহনীয় দুর্গন্ধ ভেসে আসে, যা প্রতিনিয়ত চলাচলকারী সাধারণ মানুষদের জন্য দুর্বিষহ এক অভিজ্ঞতা। পথচারীদের মতে, স্বাস্থ্যঝুঁকির পাশাপাশি এটি একটি সভ্য নগরের পরিচয়ে বড় এক প্রশ্নচিহ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে।

সম্প্রতি সরেজমিন দেখা যায়, ব্রিজের ওপরের অংশজুড়ে রয়েছে ধুলার স্তর। ব্রিজের সিঁড়ির পাশে জমে আছে আবর্জনা। পরিষ্কার করার কোনও লক্ষণ নেই। গ্রীষ্মের প্রচণ্ড রোদে এই ধুলোময় পরিবেশে নিশ্বাস নেওয়াও কঠিন। অনেকেই মুখে কাপড় বেঁধে ব্রিজ পার হন, তবু রেহাই মেলে না।

ব্রিজে যত্রতত্র হকাররা দোকান বসানোয় পথচারীদের চলাচল আরও সীমিত হয়ে পড়েছে।

আশপাশের দোকানিদের দাবি, ফুটওভারব্রিজ পরিষ্কার করতে কখনও কোনও পরিচ্ছন্নতাকর্মীর দেখা মেলে না। পথচারীদের পায়ে পায়ে যতটুকু পরিষ্কার থাকে, তাতেই চলছে। তাছাড়া চলন্ত সিঁড়িটি প্রায় সময় বন্ধ থাকে।

নিয়মিত এই ব্রিজে চলাচল করেন রবিউল ইসলাম। ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘এরকম আধুনিক একটা শপিং মল, তার পাশেই বড় আবাসিক এলাকা, নামিদামি ইউনিভার্সিটিও আছে এখানে। এই গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় ফুটওভারব্রিজের এই হাল হলে বোঝেন, পুরো শহরের কী অবস্থা। এই শহরে না আছে পরিচ্ছন্নতার বালাই, না আছে ঠিকঠাক রাখার কোনও সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা।’

ফুটওভারব্রিজে ওঠার সিঁড়ির পাশে ময়লার স্তূপ নিয়মিত পথচারী মীরা রহমান বলেন, ‘ফুটপাতে প্রস্রাবের গন্ধে হাঁটা যায় না, হকারদের জন্যও চলাচল করা কঠিন। এটা কোনও নগরের চিত্র হতে পারে না।’

পথচারীরা জানান, শুধু এই ফুট ওভারব্রিজ নয়, রাজধানীর বেশিরভাগ ফুট ওভারব্রিজ ও ফুটপাত এমনই বেহাল অবস্থায় থাকছে।

মিরপুর-১ নম্বরের ফুটওভারব্রিজ ব্যবহারকারী নারী পথচারী নিশাত বলেন, ‘বিশ্বাস করবেন কিনা, এই ফুটওভারব্রিজের ওপরেই পাগল লোকেরা, কিংবা পথে থাকা মানুষেরা প্রায়ই পায়খানা করে রাখে। বমি চলে আসে।’

তিনি বলেন, ‘এই সমস্যা দীর্ঘদিন ধরে চললেও কাউকে কোনও পদক্ষেপ নিতে দেখি না। ব্রিজের আশপাশে নেই পর্যাপ্ত লাইটিং বা সিসি ক্যামেরা, নেই কোনও সতর্কতামূলক সাইন বোর্ড। ফলে এটি শুধু অস্বাস্থ্যকর নয়, অনিরাপদও। নারীদের জন্য সন্ধ্যা হলেই এই ব্রিজ ব্যবহার কতটা ভয়াবহ হতে পারে চিন্তা করুন।’

মিরপুর-১০ নম্বরের ফুটওভারব্রিজ পারাপার হওয়া পথচারী স্বপন দাস বলেন, ‘এই ফুটওভারব্রিজটা মনে হয় সবচেয়ে বেশি ব্যবহার হয়। অথচ এই ব্রিজটাকে আমার কাছে দুর্বল মনে হয়। আর ওঠানামার জায়গা পুরোটাই দখল করে রাখে হকাররা।’

এ বিষয়ে উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ঢাকার ফুটওভারব্রিজগুলোর অবস্থা অবর্ণনীয়, তা নতুন করে বলার অপেক্ষা রাখে না। আমরা ফুট ওভারব্রিজগুলো নিয়ে বিশেষ পরিকল্পনা করছি। উদ্যোগ নিচ্ছি, বহুল ব্যবহৃত ফুটওভারব্রিজগুলোতে বাসাবাড়ির মতো নিরাপত্তাকর্মী নিয়োগ দেওয়ার। এছাড়া ফুটওভারব্রিজ ধুলাবালিমুক্ত রাখতে পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের নির্দেশ দেওয়া হবে, যাতে তারা সড়ক পরিষ্কারের পাশাপাশি নিয়মিত ফুটওভারব্রিজগুলোও পরিষ্কার রাখেন।’